লামায় বিরোধ নিরসনে পার্বত্য মন্ত্রীর মতবিনিময়

বান্দরবানের লামা উপজেলার ৩০৩ নং ডলু মৌজায় লামা রাবার এবং মুরুং ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের পাড়াবাসীর মধ্যে জমির দখল নিয়ে অসন্তোষ ও দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা হয়েছে। ১৬ আগষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় লামা রাবার ও সংশ্লিষ্ট মুরুং-ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের পাড়ার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় পাড়াবাসীর পক্ষে রংধজন প্রকাশ জন ত্রিপুরার উগ্র-অযৌক্তিক বক্তব্য শ্রবণে অসন্তোষ প্রকাশ করেন সভাসদ।

সভাসূত্রে জানা গেছে, এর পর পরই জন ত্রিপুরা সভা থেকে নিভৃতে কেটে পড়েন। সে নিজেকে ভূমি রক্ষা আন্দোলনের নেতা বলে দাবি করে আসছে। এরপর সরকারের ভূমি ব্যবস্থাপনার উপর জেলা প্রশাসক তাঁর বক্তব্যে ভূমির ব্যবহার, মালিকানা ইত্যাদি বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেন।

এ সময় সভাসদ পাড়াবাসীদের ৩৯ পরিবারকে লামা রাবার এর লীজপ্রাপ্ত জমির অংশ থেকে ৫ একর করে এবং দু’টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য আরো কিছুসহ মোট ২শ একর জমি দেয়ার প্রস্তাব করা হয়। এ প্রস্তাবে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রির পরিচালকগন নির্দ্বিধায় সম্মতি দেন। কিন্তু লাংকুম মুরুং কারবারী, লামা রাবার এর ২১ সালে সৃজিত রাবার বাগান এরিয়াসহ ইতিপূর্বে জোর করে দখলে রাখা মোট ৪শ একর ভূমি খাস ও নিজেদের বলে দাবি করে।

এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, ওই জমি যদি খাসও হয়ে থাকে, সেটার মালিক (ডিসি) সরকার। সরকারি জমি কাকে বরাদ্দ দেয়া হবে বা কি হবে; সে ব্যপারে সরকারের ভূমি ব্যবস্থাপনায় নির্দেশনা রয়েছে। সুতরাং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

সভায় সকলের বক্তব্য শ্রবণ শেষে বিষয়ের উপর পার্বত্য মন্ত্রী বক্তব্য রেখে বলেন, এলাকায় শান্তি সম্প্রীতি বজায় রেখে সবাইকে বসবাস করতে হবে। বে আইনি কোনো কর্মকান্ড এই অঞ্চলে বিশেষ করে বান্দরবানে চলতে দেয়া যাবে না। কারণ সরকার-আমার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাহাড়ে জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ব্যপক কর্মকান্ড করেছেন এবং করে চলছেন। সরকারের প্রতিটি উন্নয়ন কর্মকান্ডে এর সুফল দুর্গমের বাসিন্দাদের অর্থনৈতিকসহ জীবনানুকল ভূমিকা রাখছে। মন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চলের শিল্প উন্নয়নে বেসরকারি উদ্যােক্তাদের নিরুৎসাহিত করা যাবে না। একইভাবে স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বার্থ বিবেচনায় প্রাধান্য দিতে হবে।

এর আগে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি লিঃ এর চেয়ারম্যান এফবিসিসিআই নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, পার্বত্য মন্ত্রী ও সরকারের প্রশাসন কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার কথা জানিয়ে বলেন, একটি মহল নিরীহ উপজাতিদের ব্যবহার করে লামা রাবারের প্রায় দেড় কোটি টাকা ক্ষতি করা হয়েছে। এই ক্ষতি কিভাবে কাটিয়ে উঠবেন? তিনি সে আক্ষেপ প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক,পুলিশ সুপারসহ ভূমি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, বিগত ২০১৬ সাল থেকে কতিপয় নাটের গুরুর গোপন ইন্ধনে ডলু মৌজার হেডম্যান যোহান ত্রিপুরা ও তার চাচাতো ভাই রংধজন প্রকাশ জন ত্রিপুরার সক্রিয় নেতৃত্বে, কিছু ত্রিপুরা-মুরুং উপজাতি লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি লিঃ এর লীজপ্রাপ্ত ভূমি নিজেদের দখলে নেয়ার পায়তারা চালিয়ে আসছে। এই ঘটনায় সাম্প্রদায়িক রং লাগিয়ে একটি মহল নিরীহ কিছু উপজাতিকে ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে নানান অভিযোগ, আপত্তি, মামলা-হামলা, মানববন্ধন, সভা সমাবেশ করে আসছিল। এর ফলে পার্বত্য বান্দরবান-লামায় প্রশাসন ও নেতৃস্থানীয়রা এক বিভ্রতকর অবস্থায় পড়েন। অবশেষে দু’ পক্ষের মধ্যে বিরাজমান ভূমি সমস্যাটি নিরসনকল্পে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসন হলরুমে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দা সরওয়ার জাহান (অতিরিক্ত সচিব), উপ-পরিচালক স্থানীয় সরকার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), লামা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পিডিসহ পরিচালকগণ।

আরও পড়ুন