সৈকতের ধ্বংসস্তুপে দাড়িয়েই পর্যকটদের সমুদ্র দর্শন

প্রবল ঢেউয়ের আঘাতে লন্ডভন্ড বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। কয়েকদিনের ধ্বংসস্তুপ থেকে উঠে আসা সমুদ্র শহর কক্সবাজারের লাবণী, সুগন্ধা পয়েন্ট। মানুষ সৃষ্ট বিপর্যয় নয়,এটা প্রকৃতির সৃষ্টি বিপর্যয়। সমুদ্র থেকে ধেয়ে আসা ঢেউ একটি নান্দনিক সৈকতকে কিভাবে ধ্বংসস্তুপে পরিনত করে এটা দেখেছে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকসহ দেশবাসীরা। এখন ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িড়েই ভ্রমন পিপাসুদের সমুদ্র দর্শনে ভীড় লেগেই আছে। সাগর উত্তাল। এরপরেও সৈকতে পর্যটকদের উপস্থিতি কম নয়।
একদিকে সমুদ্র আর অপদিকে সুউচ্চ পাহাড়ের মিতালী কক্সবাজারকে করেছে বিমোহিত। সাগর সৈকত দর্শনের প্রতি বছরই দেশী বিদেশী পর্যটক এখানে ছুটে আসেন। এখানে রেখে যান কিছু মুহুর্ত, নিয়ে যান কিছু স্মৃতি। গত বুধবার থেকে সৈকতের কয়েকটি পয়েন্ট তীব্র জোয়ারের তোড়ে ইতোমধ্যে বিলীন হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল থাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে দু’থেকে চার ফুট বাড়ছে জোয়ারের পানি। এতে ঢেউয়ের তোড়ে ক্রমে ভাঙ্গেছে কক্সবাজার সৈকত। ঢেউয়ের তোড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সৈকতের বালুকাবেলা। তলিয়ে যাচ্ছে ঝাউবীথি। এতে করে সৈকত হারিয়েছে তার চিরচেনা রূপ ও সৌন্দর্য । ভাঙ্গনে ঝুঁকির মুখে রয়েছে সৈকতের ছাতা ও ঝিনুক মার্কেট। পূর্ণিমার জোয়ারের পানি আরো উচ্চতায় বাড়লে ভাঙন তীব্র হওয়ার আশংকা করেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

প্রবল স্রোতে সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ি, পাকা সড়ক, জিও ব্যাগ।নিমিষে ভেঙ্গেচুড়ে ভাসিয়ে নিতে থাকে সমুদ্র তীর ঘেষে সৃষ্ট ঝাউ বনায়ন কর্মসুচীর গাছপালা। পাহাড় সমান উচ্চতার সেই সামুদ্রিক ঢেউ একের পর এক আঘাত হানতে থাকে সৈকতে। জোয়ারের তীব্রতা লন্ডভন্ড করে দেয় সৈকতের কয়েকটি পয়েন্ট। একদা কর্মব্যস্ত কোলাহল মুখর একটি সৈকত হয়ে পরে জঞ্জালের স্তুপ। লাবণী সৈকত ঢেউয়ের ভয়াবহতার স্মৃতি নিয়ে এখন দাঁড়িয়ে আছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বৈরী পরিবেশে কক্সবাজার সমুদ্রউপকূল এমনিতে উত্তাল, তার উপর চলছে পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাব।জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বালিয়াড়ি রক্ষা করা যাচ্ছেনা। ইতোমধ্যে কলাতলী থেকে সুগন্ধা, সিগাল, লাবনী, শৈবাল হয়ে উত্তর দিকের সমিতির পাড়া পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সৈকত এখন লন্ডভন্ড। সৈকতের এমন হাল ৫০-৬০ বছরেও দেখেনি স্থানীয় বাসিন্দারা।

পরিবেশবাদী ও স্থানীয় প্রবীন নাগরিকদের অভিমত, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত জিও ব্যাগে বাঁধের কারণেই সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ি বিলীন হচ্ছে। ঝুঁকিতে পড়েছে একাধিক বহুতলভবন, দোকানপাট,হাজারো ঝাউগাছ। আজকে সৈকতের শ্রীহীন চেহারা দেখে মনটা ভরাক্রান্ত হয়ে গেল। এই আমাদের সমুদ্র সৈকতের চেহারা ? কখনো কল্পনা করেননি তারা।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, সৈকত রক্ষার জন্য বালুভর্তি যে জিও ব্যাগ ভর্তি বালুর বাঁধ দেয়া হচ্ছে, সেই বালু ড্রেজার মেশিন দিয়ে উত্তোলন হচ্ছে সমুদ্র থেকেই। বালুর বাঁধের ১০-১২ ফুট দূর থেকে উত্তোলণ করা হচ্ছে। বালুর এই বাঁধ যেমন ঠিকছেনা, তেমনি এই জিও ব্যাগ বাঁধের কারণে সৈকত বিলীন হচ্ছে। জিও ব্যাগ বাঁধ যেখানে নেই, সেখানকার সৈকতের চেহারা এখনও সম্মৃদ্ধ-দৃষ্টিনন্দন। সমুদ্রের ঢেউ এবং স্রোতধারাকে স্বাভাবিক নিয়মে চলতে না দিয়ে বাধা সৃষ্টির কারণে আগ্রাসী তান্ডব চালাচ্ছে। লাবনী সৈকতসহ কয়েকটি পয়েন্টের এমন পরিণতি তাই হচ্ছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে ধ্বংস স্তুপের মাঝে সব হারানো সৈকতের কান্নার দায় কে নেবে- প্রশাসন নাকি পানি উন্নয়ন বোর্ড? এমন প্রশ্ন পরিবেশবাদীদের।তারপরও পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসব আপ্রান চেষ্টা করছে ক্ষতিগ্রস্ত সৈকতকে পুরনো জীবনে ফিরিয়ে দেয়ার। কিভাবে খুব শীঘ্রই সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যায় সেই কৌশল উদ্ভাবন করতে আলাপ আলোচনা করছে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের সাথে। সৈকতের তীব্র ভাঙ্গনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া পর্যটন ব্যবসায়ী আর খোলা সমুদ্র তীর এখন আবার জাগছে। আবার আস্তে আস্তে জেগে উঠছে সেই পুরোনো সৈকতের রুপে।

সৈকতের লাবনীসহ কয়েকটি পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, সমুদ্রের সুন্দরের মায়াবী হাতছানি যেন একটুখানি আটকে যাচ্ছে, ভাঙ্গনের তীব্রতায় ধ্বংসের স্তুপে। আর সেই ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িড়েই ভ্রমন পিপাসুদের সমুদ্র দর্শন যেন থেমে নেই। এবার সৈকতের ধ্বংসস্তুপ দেখতে আসছে ভ্রমণ পিপাসুরা।

আরও পড়ুন