ঢাকা ব্যুরো :: আশির দশকে বিটিবিতে হুমায়ুন আহমেদ এর ধারাবাহিক নাটক কোথাও কেউ নেই নাটকের বদি চরিত্রের অভিনেতা আব্দুল কাদের আর নেই।
তিনি মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) শনিবার (২৬ ডিসেম্বর,২০২০ইং) ভোরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ক্যান্সার রোগের আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
বিক্রমপুরের এই কৃতি সন্তান অভিনেতা আব্দুল কাদেরকে চেন্নাই থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছিলো চিকিৎসার জন্য। এরপর থেকে তার চিকিৎসা চলছিলো দেশেই।
অভিনেতা আবদুল কাদের এর বাড়ি মুন্সীগনজ জেলার টঙ্গীবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে। তারপিতার নাম মরহুম আবদুল জলিল।মাতার নাম মরহুমা আনোয়ারা খাতুন।স্ত্রী খাইরুননেছা কাদের। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক।
আব্দুল কাদের মুন্সিগন্জ সোনারং হাইস্কুল ও বন্দর হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচ.এস.সি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ অনার্স ও এমএ করেন।
অর্থনীতিতে সিঙ্গাইর কলেজ ও লৌহজং কলেজে অধ্যাপনা এবং বিটপী বিজ্ঞাপনী সংস্থায় এক্সিকিউটিভ হিসেবে চাকরির পর ১৯৭৯ সাল থেকে আর্ন্তজাতিক কোম্পানী ‘বাটা’তে চাকুরিরত ছিলেন।
এদেশের নাট্যাঙ্গনে আবদুল কাদের একটি সুপরিচিত নাম। স্কুল জীবন থেকেই অভিনয় শুরু হয় তার।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অমল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার প্রথম নাটকে অভিনয় শুরু।
১৯৭২-৭৪ পরপর তিন বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মহসিন হল ছাত্র সংসদের নাট্যসম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে আন্তঃহল নাট্য প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন মহসিন হলের নাটক সেলিম আল দীন রচিত ও নাসিরউদ্দিন ইউসুফ নির্দেশিত ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’ -এ অভিনেতা হিসেবে পুরষ্কার লাভ করেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রযোজিত বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ জ্ঞানের অনুষ্ঠান ‘বলুন দেখি’ -তে চ্যাম্পিয়ান দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে পুরষ্কারও লাভ করেন আবদুল কাদের।
১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ডাকসু নাট্যচক্রের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৩ সাল থেকে থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য এবং চার বছর যুগ্ম-সম্পাদকের ও ছয় বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে থিয়েটারের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) হিসেবে আছেন।
১৯৭৪ সালে ঢাকায় আমেরিকান কলেজ থিয়েটার ট্রুপ কর্তৃক আয়োজিত অভিনয় কর্মশালায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সাল থেকে টেলিভিশন ও ১৯৭৩ সাল থেকে রেডিও নাটকে অভিনয় শুরু হয় তার। টেলিভিশনে তার অভিনিত প্রথম কিশোর ধারাবাহিক
নাটক ’এসো গল্পের দেশে’।
আবদুল কাদের বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাট্যশিল্পী ও নাট্যকারদের সংগঠন টেলিভিশন নাট্যশিল্পী ও নাট্যকার সংসদ’ টেনাশিনাস -এর সহ-সভাপতি।
থিয়েটারের প্রায় ৩০টি প্রযোজনায় প্রতিটিতে অভিনয় এবং ১০০০টিরও বেশী প্রদর্শনীতে অভিনয়ে অংশগ্রহণ করেছেন।
উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটক: পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, এখনও ক্রীতদাস, তোমরাই, স্পর্ধা, দুই বোন, মেরাজ ফকিরের মা।
১৯৮২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবে বাংলাদেশের নাটক থিয়েটারের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ -এ অভিনয়। এছাড়া দেশের বাইরে জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, কোলকাতা, দিল্লী, দুবাই এবং দেশের প্রায় সবকটি জেলায় আমন্ত্রিত অভিনয় করেছেন। এছাড়া টেলিভিশনে দুই হাজারের বেশী নাটকে অভিনয় বহু বিজ্ঞাপন করেছেন।
উল্লেখ্য যে গত ৮ ডিসেম্বর চেন্নাইয়ে নেওয়া হয় আব্দুল কাদেরকে। পরে ১৫ ডিসেম্বর ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানা যায়। চেন্নাইয়ের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসায় তেমন অগ্রগতি হয়নি।
অনেকদিন ধরেই আবদুল কাদের অসুস্থ। ঠিকমতো খেতে পারছিলেন না। বিভিন্ন হাসপাতালে একাধিকবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও তার কোনো রোগ ধরা পড়ছিল না। পরে পুরো শরীর সিটি স্ক্যান করে জানা যায়, এই অভিনেতার টিউমার হয়েছে। টিউমার ধরা পড়ার পর পারিবারিক সিদ্ধান্তে তাকে চেন্নাইয়ের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই হাসপাতালে আবারও পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হলে ডাক্তাররা বোর্ড মিটিং করে এই অভিনেতার পরিবারকে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবর দেন। ক্যানসার তার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছিলো।তার মৃত্যুতে দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।