বিএম ডিপু অগ্নিকান্ড : ৮ মাসের অধিক হয়ে গেলেও চার্জশীট দাখিল হয়নি

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ব্যক্তি মালিকানাধীন বিএম কন্টেইনার ডিপোর ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা আজ আট মাস ১২ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ মামলার চার্জশীট দাখিল করতে পারেনি,ফলে মামলাটি কোন অগ্রগতির মুখ দেখেনি। ক্ষতিগ্রস্থরা পাচ্ছে না ক্ষতিপূরণ বা বিচার। উক্ত মর্মান্তিক ঘটনায় নিহত হন ৫১ জন। আহত হয়েছেন ২শ জনেরও বেশি মানুষ। ঘটনার তিন দিন পর সীতাকুণ্ড থানায় দায়ের হয় হয়েছিল মামলা। কিন্তু এত দিনেও আদালতে দাখিল হয়নি মামলার প্রতিবেদন।

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও মেডিকেল সনদে (এমসি) এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আটকে আছে বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর মোস্তাক আহমেদ।

১৬ জানুয়ারী রবিবার দুপুরে তিনি বলেন, মেডিকেল সনদ ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলেই আদালতে জমা দেওয়া হবে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন।

তিনি আরো বলেন, বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি গত অক্টোবর মাসে জেলা গোয়েন্দা শাখায় হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে এ মামলা তদন্ত করছি আমি। এর আগে মামলাটি তদন্ত করেছিল সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ।

তিনি আরও বলেন, এ দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ১৭ জনের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। অথচ এখানে ৫১টি লাশের দেহাবশেষ ছিল। আহতদের মেডিকেল সনদ পাওয়া যায়নি। এগুলো পাওয়া গেলে আদালতে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দিতে পারব। তিনি আরও বলেন, আমি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর এবং এর আগের তদন্ত কর্মকর্তাসহ সনদ ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অন্তত ১২-১৩ বার চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি লিখেছি। এমনকি আমি হাসপাতাল কর্মকর্তাদের সঙ্গে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবেও কথা বলেছি। কিন্তু এখনও সনদ মিলেনি। এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার বিষয়টি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও সনদ পাওয়ার ওপর নির্ভর করছে।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান নুর মোহাম্মদ বলেন, বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত সবার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এবং আহতদের মেডিকেল সনদ এখনো পাওয়া যায়নি। এগুলোর জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। এসব কাগজপত্র পাওয়ার জন্য আমরা একাধিকবার চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছি। এগুলো পাওয়া গেলে দ্রুত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে পারব।

চমেক হাসপাতালে দায়িত্বরত জেলা পুলিশের এএসআই মো. আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, আহতরা চমেক হাসপাতালের যে ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রাররা এসব মেডিকেল সনদ প্রদান করে থাকেন। বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে আহতদের সনদ ও নিহতদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমিও একাধিকবার যোগাযোগ করেছি। তারা দেব, দিচ্ছ-করতে করতে আটমাসের অধিক পার করে দিয়েছে।

এ বিষয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শামীম আহসান বলেন, কোনো কারণ ছাড়া তো মেডিকেল সনদ কিংবা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আটকে রাখা হয় না। হয়তো একটু সময় লাগতে পারে। প্রতিদিন শত শত মানুষ চমেক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন। পর্যায়ক্রমে এসব প্রতিবেদন সংশ্লিষ্টরা দিয়ে থাকেন বা দিতে বাধ্য।

প্রসঙ্গত ঃ গত বছর ২০২২ সালের ৪ জুন রাত সাড়ে আটটায় সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকা- ও বিস্ফোরণের ঘটনায় পর্যায়ক্রমে ৫১ জনের মৃত্যু হয়। দুই শতাধিকের অধিক মানুষ দগ্ধ ও আহত হয়েছিল। আহতদের চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরমধ্যে ৬৩ জনের চোখ আক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এখনো অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন,তাদের দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হতে পারে বলেও জানানো হয়।

বিস্ফোরণের ঘটনায় গত ৭ জুন ২০২২ ইং রাতে সীতাকুণ্ড থানার এসআই আশরাফ সিদ্দিকী বাদী হয়ে ডিপোর ৮ কর্মকর্তাকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। আসামিদের মধ্যে রয়েছেন বিএম কন্টেইনার ডিপোর মহাব্যবস্থাপক নাজমুল আক্তার খান, উপমহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) নুরুল আক্তার খান, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) খালেদুর রহমান, সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্বাস উল্লাহ, জ্যেষ্ঠ নির্বাহী (প্রশাসন) নাছির উদ্দিন, সহকারী ব্যবস্থাপক আবদুল আজিজ, ডিপোর শেড ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম ও সহকারী ডিপো ইনচার্জ নজরুল ইসলাম। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩৩৭/৩৩৮/৩০৫.ক/৪২৭ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে গত আট মাসে এই মামলায় কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

মামলার এজাহারে বলা হয়, বিএম কন্টেইনার ডিপোতে প্লাষ্টিক ড্রামভর্তি কেমিক্যাল কন্টেইনারে থাকার কথা ফায়ার সার্ভিসকে জানায়নি মালিকপক্ষ। এ কারণে কেমিক্যালভর্তি কন্টেইনারের আগুন পানিতে নেভানো সম্ভব হয়নি। কেমিক্যালের কারণে এক কন্টেইনার থেকে আরেক কন্টেইনারে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে হতাহতের ঘটনা দ্রুত ঘটে যায়।

বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ জানায়, বিস্ফোরণের পর গত নভেম্বর মাসে বিএম কন্টেইনার ডিপোর আমদানি-রফতানি পণ্য ব্যবস্থাপনা পুরোদমে শুরু হয়েছে। দুর্ঘটনার পর ডিপো ব্যবহার করে আমদানি-রফতানি ও খালি কন্টেইনার সংরক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ডিপো সংস্কার করার পর গত ২২ আগস্ট শুধু খালি কন্টেইনার সংরক্ষণের অনুমোদন দেয় কাস্টমস। গত ২৫ অক্টোবর ৯ শর্তে পোশাকপণ্য রফতানি কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার অনুমোদন দেওয়া হয়। শর্ত পরিপালন করায় গত ৭ নভেম্বর আমদানি-রফতানি কার্যক্রম পুরোদমে শুরুর অনুমোদন দেওয়া হয়।

তবে বিএম ডিপো রাসায়নিক পণ্য ব্যবস্থাপনার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে কাস্টমস।

এদিকে চালুর পর গত ডিসেম্বর শেষদিকে আবারো অগ্নিকান্ড ঘটে, সংরক্ষিত পাটের গুদামে,ফায়ার সার্ভিস প্রায় দুই ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে।