দুইদিনে হালদায় ভেসে উঠলো ৩ মৃত কাতলা মা মাছ

বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষিত দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে গত দুই দিনে তিনটি বড় সাইজের মৃত কাতলা মা মাছ ভেসে উঠেছে। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ চলাকালে দুইদিনে হালদায় তিনটি মৃত কাতলা মাছ ভেসে উঠায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হালদা বিশেষজ্ঞরা।

গত ২৫ জুলাই সকালে হালদা নদীর কাগতিয়া স্লুইচ গেইট এলাকা থেকে ৯ কেজি ১০০ গ্রাম ওজনের মৃত কাতলা মাছ ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয়রা। মাছটি পঁচে গিয়ে দুর্গন্ধ হয়ে যায়। পরে প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে মৃত মাছটি মাটি চাপা দেওয়া হয়।

২৬ জুলাই মঙ্গলবার সকালে হালদা নদীর গড়দুয়ারা নয়াহাট এলাকা থেকে ১২ কেজি ২৬০ গ্রাম ওজনের আরও একটি মৃত কাতলা মাছ উদ্ধার করা হয়। মাছটির দৈর্ঘ্য ৩ ফুট ২ ইঞ্চি, প্রস্থ ১ ফুট। একই দিন (২৬ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নদীর হালদা-সর্তা মোহনা থেকে আরও একটি মৃত কাতলা উদ্ধার করা হয়।

পরপর দুইদিনে তিনটি মৃত কাতলা পাওয়া যাওয়ায় স্থানীয়রা উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। স্থানীয়রা বলছেন, এভাবে মা মাছ মারা গেলে হালদারর জন্যে অনেক ক্ষতি হবে। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ চলাকালে হালদায় মৃত কাতলা মা মাছ পাওয়া দুঃজনক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এর আগের সপ্তাহে সাত দিনে ৩টি মৃত ডলফিন উদ্ধার হয়। হালদার বিভিন্ন অংশ থেকে ভাসমান অবস্থায় স্থানীয়রা ডলফিনগুলো উদ্ধার করে।

নৌকা বা বালু উত্তোলনের ড্রেজারের ধাক্কা এবং মাছ ধরার কারেন্ট জালে আটকে এসব ডলফিনের মৃত্যু বলে ধারণা করা হয়। এর মধ্যে একটি ডলফিনের ঠোঁটের নিচের অংশ কাটা ও দাঁতগুলো ফেলে দেয়া হয়। পঁচে গিয়ে দুর্গন্ধ হওয়ায় ডলফিনগুলো পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ডলফিনগুলো মাটি চাপা দেয়া হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, সারা দেশে যখন উৎসবমুখর পরিবেশে মৎস্য পক্ষ উদযাপিত হচ্ছে, দেশের সর্বত্র দেশীয় মাছ সংরক্ষণ এবং মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তখন হালদা নদীতে পরপর দুইদিন তিনটি ব্রুড (প্রজননে পরিপক্ক) মাছের মৃত্যু খুবই অপ্রত্যাশিত। তিনি বলেন, মাছ শিকারের জন্য বিষপ্রয়োগ করা হচ্ছে। যার ফলে বিষক্রিয়ায় কাতলা মাছ তিনটির মৃত্যূ হয়েছে বলে মাছ দুটির লক্ষণ দেখে আমরা ধারণা করছি। মাছগুলো পঁচে গেছে, তাই মাটি চাপা দেয়া হয়েছে।

হালদা নদীর উপর পিএইচডি ডিগ্রিধারী হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, হালদা নদীর বিভিন্ন অংশে ও শাখা খালে অবৈধভাবে বিভিন্ন ধরনের জাল, বড়শি ও রাসায়নিক বিষ ব্যবহার করা হয়। যা হালদার জলজ বাস্তুতন্ত্রের জন্য হুমকি। আমাদের জাতীয় সম্পদ হালদা নদীর বাস্তুতন্ত্রকে স্বাভাবিক অর্থাৎ মাছ, ডলফিন ও অন্যান্য জলজ প্রাণির নিরাপদ বাসস্থান গড়ার লক্ষ্যে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে প্রশাসনের পাশাপাশি হালদা সম্পর্কিত সবাইকে আরো বেশি তৎপর হতে হবে। হালদা নদীর দূষণের মাত্রা জানতে হালদার পানি গুণাবলি পরীক্ষা করে দূষণের উৎস/স্থান নির্ণয় করা অতীব জরুরী। হালদার বাস্তুতন্ত্রকে তার চিরচেনা স্বাভাবিকরূপে এবং হারানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে হালদা নদী উপর অভিজ্ঞ গবেষকদের সমন্বয়ে বিশেষজ্ঞ দল গঠন ও নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে।

রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুস সামাদ সিকদার বলেন, হালদায় মৃত কাতলা মাছ পাওয়া গেছে শুনেছি। কেন মারা গেছে সেটা বলতে পারবো না। হয়তো বয়সের কারণে হতে পারে অথবা কোন কিছুর সাথে শ্বাস আটকে মারা যেতে পারে। দেখুন, হালদায় আমরা নিয়মিত অভিযান করছি। গতকাল (মঙ্গলবার) সারাদিন আমরা হালদায় ছিলাম। ৫হাজার মিটার জাল জব্দ করেছি। হালদায় সব ধরণের যান্ত্রিক নৌকা, বালু উত্তোলন, ড্রেজার, মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। হালদা রক্ষায় যা নিষেধ রয়েছি সেগুলো বাস্তবায়নে কাজ করছি। এখন কেন কাতলা মারা যাচ্ছে টেকনেশিয়ান বলতে পারবেন।

হালদায় পরপর দু’দিন মিললো মৃত কাতলা মাছ – CTG SANGBAD24

মাত্র ১দিনের ব্যবধানে হালদায় মিললো আরেকটি মৃত ডলফিন – CTG SANGBAD24

৬দিনের ব্যবধানে হালদা নদীতে আবারও মিললো মৃত ডলফিন – CTG SANGBAD24

হালদায় আবারও মিললো মৃত ডলফিন – CTG SANGBAD24

আরও পড়ুন