১০ বছর বয়সে মা ও বাবাকে হারান রিজপী আক্তার তিশা। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সে সবার বড়। এতিম হওয়ার পর থেকে নানী নুর বানুর কাছে বড় হয়েছে তারা। নানাও মারা গেছেন। মামা নেই, আছে চার জন খালা; নানী অন্যের বাড়িতে কাজ করে তাদের পড়াশোনা ও যাবতীয় খরচ চালাতো। যখন তিশার বিয়ের বয়স হলো তখন তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই নানীর। অবশেষে খবর পেয়ে ওই এলাকার স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব নিয়ে বিয়ে দিল তিশার। স্বেচ্ছাসেবকদের এগিয়ে আসায় নানী ও স্বজনদের চোখে-মুখে হতাশা কাটিয়ে আনন্দাশ্রæর দেখা মিলে।
শুক্রবার (২২ জুলাই) উপজেলার ১৫ নং ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বড় কমলদহ গ্রামের আসকর আলী মাঝি বাড়ীর আব্দুর রহমানের মা-বাবা হারা এতিম মেয়ে রিজপী আক্তার তিশার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের সাতবাড়িয়া গ্রামের রেজাউল করিমের পুত্র ওমর ফারুক অন্তর। তিশার বিয়ের জন্য আদর্শ ছাত্র ও যুব সমাজের উদ্যোগে সাহায্যের আবেদন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করা হয়। এসময় অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তাতে সাড়া দেন মানবিক পুলিশ মুক্তা চৌধুরীও। পরে তার সহযোদ্ধা স্বেচ্ছাসেবদের সহযোগিতায় ওই মেয়ের সম্পূর্ণ বিয়ের খরচ বহন করা হয়। এতে সহযোগিতা করেন আলোর সন্ধানে স্বেচ্ছায় রক্তদান সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা জনি খান, জারা’স টিম লিডার আনজুমান জারা, নাইমুল সিফাত, আব্দুল হালিম, আদর্শ ছাত্র ও যুব সমাজের সভাপতি রিফাতুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক এমএ হাসনাত, আইন বিষয়ক সম্পাদক শাকিল আহমেদ, সীতাকুন্ড যুব বøাড ফাউন্ডেশনের অর্থ সম্পাদক নুর উদ্দিনসহ আরো অনেকেই।
রিজপী আক্তার তিশার নানী নুর বানু জানান, আমার স্বামী মারা গেছে বেশ কয়েকবছর পূর্বে। আমার কোন ছেলে নেই, চারটি মেয়ে; ইতিমধ্যে ৩ টির বিয়ে দিয়েছি। আমার অনেক দুঃখে কষ্টে জীবন চলে। তারমধ্যে আমার নাতনী রিজপী আক্তার তিশা যখন থেকে বিবাহ উপযুক্ত হয় তখন থেকে আমার দুশ্চিন্তার শেষ নাই। স্বেচ্ছাসেবকরা এগিয়ে আসায় আমার দুশ্চিন্তা দূর হলো। আমি তাদের জন্য দোয়া করি তারা যেন ভবিষ্যতেও এমন কাজ চালিয়ে যেতে পারে।
মানবিক পুলিশ মুক্তা চৌধুরী ও সরোয়ার উদ্দিন জানান, নিজেদের অর্থে বিভিন্ন সামাজিক কার্য্যক্রম পরিচালনা করে আসছি আমরা। কিন্তু বড় অনুষ্ঠানগুলো আমরা যৌথভাবে পরিচালনা করি। তাই সামাজিক কর্মকান্ডে সকলের দোয়া ভালোবাসা ও সহযোগিতা কামনা করছি। যারা এতিম মেয়েটির বিয়ের জন্য সাহায্য করেছেন তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
আদর্শ ছাত্র ও যুব সমাজের সভাপতি রিফাতুল ইসলাম জানান, এতিম মেয়েটির বিয়ের কোন আয়োজন অপূর্ণ রাখিনি আমরা। সে যেন বুঝতে না পারে সে এতিম, সেজন্য গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে সকল আয়োজন আমরা স্বেচ্ছাসেবীরা করেছি। বরযাত্রী আপ্যায়নের মধ্যদিয়ে বিয়েটা সুন্দরভাবে শেষ করতে পেরে মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। যারা আমাদের এই আয়োজনে সাড়া দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।