চা’য়ে কেবল চেয়ে থাকতেই মন চায়

চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নের পাহাড়ী এলাকার প্রায় ৩৪০০ একর জায়গা জুড়ে বেলগাঁও চা-বাগানটি অবস্থিত। খৈয়াছড়া চা বাগান, ক্লিফটন চা বাগান ও কর্ণফুলী চা বাগানের পরেই মানের দিক থেকে এখানের উৎপাদিত চায়ের যেমন রয়েছে পুষ্টিগুণ, তেমনি এ বাগানের উৎপাদিত চায়ের কদর রয়েছে দেশজুড়ে। বাঁশখালী উপজেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থান অধিকারী পর্যটন এলাকা দক্ষিণ চট্টগ্রামের আলোচিত বাঁশখালীর বেলগাঁও চা-বাগান। দৃষ্টিনন্দন বাগানটি মন কাড়ছে দর্শনার্থীদেরও। এখানে প্রায় ৭০০ একর জায়গায় চা পাতা উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিক্রয়ের কাজ চলে। বর্তমানে ৭০০ (নারী-পুরুষ) শ্রমিক চা পাতা সংগ্রহ থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণের কাজে জড়িত। এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৪লক্ষ কেজি। সর্বশেষ ২০২৩ সালের আপডেট তথ্যানুযায়ী বর্তমানে, বাংলাদেশে ১৬৮টি বাণিজ্যিক চা এস্টেট রয়েছে (সর্বশেষ খাগড়াছড়ি জেলায়)।

২০২৪ সালের তথ্যানুযায়ী সারাদেশে ২৫তম স্থানে স্বাক্ষর রাখলেও কাটিং, কোয়ালিটি, গুণগতমান সহ ভালো দামের জন্য চট্টগ্রামে এ বাগানটির অবস্থান তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এবছর রেকর্ড পরিমাণ তাপমাত্রা ও অনাবৃষ্টির কারনে বাগানে কচিপাতা গজে উঠতে বিঘ্ন ঘটেছে। একটু বৃষ্টিপাত হলেই সবুজে সবুজে ভরে যেতো বাগানটি। সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, উঁচু-নিচু ও ঢালু পাহাড়ে নারী-পুরুষ চা শ্রমিকরা চা বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে। কেউ কেউ কচি পাতা তুলে চায়ের উপযোগী পাতা তৈরিতে কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশীয় চা সংসদ চট্টগ্রাম ব্রাঞ্চের চেয়ারম্যান ও বৈলগাঁও চা-বাগানের ম্যানেজার আবুল বাশার বলেন, ‘এই বাগানের চা পাতার সুখ্যাতি রয়েছে সারাদেশে। এ কারণে দেশের যতসব চা-বাগান রয়েছে, বাঁশখালীর চা-বাগানের পাতা মানের দিক দিয়ে অন্যতম। এই মান ধরে রাখার জন্য চা-বাগানে কর্মরতরা প্রতিদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আমাদের উৎপাদন যত বৃদ্ধি পায় সরকার রাজস্ব তত বেশি পায়। আমি বাগানের দায়িত্বগ্রহণ করার পর থেকে চা উৎপাদন বাড়ানোসহ ক্লোন চায়ের দিক দিয়ে দেশের সেরা চা বাগানে পরিণত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। চা বাগানের উন্নয়ন হলে দেশের জনগণ উপকৃত হবে এবং স্থানীয় জনগণ নানাভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে।’ তিনি আরো বলেন, এই চা বাগানের অভ্যন্তরিণ অঞ্চলে ৭শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাসহ অন্যান্য সার্বিক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে।

চির সবুজের বিশাল বিচরণক্ষেত্র বৈলগাঁও চা-বাগানটি দেশের অর্থনীতিতে যেমন ভুমিকা রেখে যাচ্ছে তেমনি ধীরে ধীরে সেরা পর্যটন স্পটের জায়গা হিসেবে দখল করে নিচ্ছে দর্শনীয় স্থানটি। মনকাড়া এই চা-বাগানে উঁচু নিঁচু পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে চা-গাছ আর চা-গাছ। এই ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থান চা-বাগানে প্রতিদিনই দর্শনার্থীর ভীড় জমে। আধুনিক পর্যটন স্পট হিসেবে সারাদেশে সুপরিচিত হয়ে উঠেছে বাগানটি। বিশাল চা-বাগানের মনোরম দৃশ্য দেখার জন্য প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানা শ্রেণীর মানুষ ছুটে আসে। বিভিন্ন স্কুল থেকে শুরু করে কলেজের শিক্ষার্থী-শিক্ষকেরা এই চা-বাগানে শিক্ষা সফরের আয়োজন করে থাকে। দেশের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম মিডিয়াগুলো তুলে ধরছে চা বাগানের মনোরম দৃশ্য ও এর অর্থনৈতিক অবস্থান।

বেলগাঁও চা-বাগান অফিসের তথ্যানুযায়ী জানা যায়, ১৯১২ সালে ইংরেজরা যখন বাগানটি শুরু করেন তখন বাগানের ম্যানেজার ছিলেন মি. হিগিন। মাত্র ৮ একরের চা বাগানটি বাংলাদেশ চা-বোর্ড ১৯৯২ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্র অনুযায়ী চাঁদপুর বৈলগাঁও চা-বাগান ব্যবস্থাপনার জন্য রাগীব আলীর স্বত্বাধিকারীর নিকট হস্তান্তর করেন। অতপর ২০০৩ সালে বাঁশখালী টি কোম্পানির সমুদয় শেয়ার ক্রয় করে ব্র্যাক এবং কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এর বিধান অনুযায়ী এ কোম্পানিকে ব্র্যাক বাঁশখালী টি কোম্পানি লিমিটেড নামকরণ করা হয়। ব্র্যাক চা বাগানটির মালিকানাস্বত্ব গ্রহণ করার পর ২০০৪ সালে চা কারখানা চালু করে। অতপর চাঁদপুর বেলগাঁও চা বাগানের মালিকানা ব্র্যাক বাঁশখালী টি কোম্পানি লিমিটেড’র নিকট থেকে গত ২০১৫ সালের ৫ নভেম্বর থেকে সিটি গ্রুপ পরিচালিত ফজলুর রহমান গংয়ের ভ্যান ওমেরান ট্যাংক টার্মিনাল (বাংলাদেশ) লি. এবং ইন্টারন্যাশনাল ওয়েল মিলস্ লি. ক্রয় করেন। আজবধি চা-বাগানটি সিটি গ্রুপের অধিনে পরিচালিত হয়ে আসছে।

যেভাবে আসবেন (দর্শনার্থীদের জন্য): চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে বাঁশখালী থানার পুকুরিয়া ইউনিয়নে এই চা-বাগানটি অবস্থিত। চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট অথবা নতুন ব্রীজ থেকে বাঁশখালীগামী স্পেশাল সার্ভিস, ক্লোজডোর সুপার সার্ভিস, এসআলম বাস যোগে বাঁশখালীর প্রবেশপথ চাঁদপুর বাজারে নামতে হবে। বাজার থেকে সোজা পূর্বদিকে প্রায় ২ কিলোমিটার পথ সিএনজি, অটোরিক্সা, প্রাইভট গাড়ি নিয়ে বৈলগাঁও চা-বাগান।