চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভায় অবস্থিত রেলস্টেশন পাইকারি কাঁচা বাজারটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ পাইকারি সবজি বাজার হিসেবে পরিচিত। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক থেকে একশ মিটার দূরত্বে সাঙ্গু নদীর দক্ষিণ পাড়ের অংশে অবস্থিত এ বাজারে দৈনিক গড়ে ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকার শাক-সবজি বেচা-কেনা হয় বলে জানা গেছে। প্রতিদিন ভোর পাঁচটা থেকে শুরু করে সকাল দশটার মধ্যে পাইকারি এই সবজি বাজারটিতে বেচা-কেনা শেষে হয়ে যায়।
জানা যায়, বিলুপ্ত দোহাজারী ইউনিয়ন থাকা অবস্থায় দোহাজারী রেলওয়ে মাঠে পাইকারি সবজি বাজারটি প্রতিবছর রেল কর্তৃপক্ষ লাখ লাখ টাকার দরপত্রের মাধ্যমে ইজারা দিত। পরবর্তীতে দোহাজারী পৌরসভায় রুপান্তর ও দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ কাজ শুরু হলে রেলওয়ে মাঠটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের বিভিন্ন যানবাহন ও রেললাইন নির্মাণ সামগ্রী রাখায় ব্যবহৃত হলে পাইকারি সবজি বাজারটিতে সবজি বিক্রি করতে আসা চাষীরা রেলওয়ে মাঠ সংলগ্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে আসছে। ফলে কোন রকমের ইজারা ছাড়াই বাজারটি থেকে একটি সিন্ডিকেট প্রতিদিন শত শত কৃষকের কাছ থেকে প্রায় অর্ধ লাখ টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে দোহাজারী পৌরসভা বিপুল অংকের রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এদিকে দোহাজারী পৌরসভা গত ২৯ ফেব্রুয়ারি হাট-বাজার/সিএনজি ও ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা স্ট্যান্ড ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তির ক্রমিক নং ৫ এ থাকা কৃষক পাইকারি সবজি বাজার সকাল (স্টেশন রোড দোহাজারী) নামক বাজারের ইজারায় স্থগিতাদেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক নাঈমা হায়দার ও বিচারক কাজী জিনাত হকের যৌথ বেঞ্চ। গত ২০ মার্চ (বুধবার) এক যৌথ বেঞ্চের মাধ্যমে আদেশের রিট পিটিশন নং ৩২৭৮/২০২৪ বাদী মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বনাম সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ৭ জনকে বিবাদী করে রিট পিটিশন মূলে এই আদেশ দেন হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি মুমিনুল ইসলাম চৌধুরীর সত্যায়িত কপি মূলে জানা যায়, উক্ত বাজার নিয়ে এলাকার স্থায়ী বাসিন্দাদের চলাচল বাধা আসায় জনগণ সংক্ষুব্ধ হচ্ছে মর্মে আমলে নিয়ে বিচারক এই স্থগিতাদেশ দেন। আদেশটি দুই সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হবে বলেও জানা যায়।
সরেজমিনে বাজারটিতে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন রেলস্টেশনের আশে পাশে ট্রাকের সারি। পাইকারি ক্রেতারা সবজি ক্রয় করে তুলছেন ট্রাকে। সবজি বিক্রি করতে আসা কয়েকজন চাষী জানান, একজন ইজারাদার বাজারের কিছু অংশ ইজারা নিয়েছে বলে শুনেছি, সেখানে তারা দোকান করে মাসিক ও দৈনিক ভাড়া নিচ্ছে। আমরা চাষীরা যেই জায়গায় শাক-সবজি বিক্রি করি, সেই জায়গা রেলওয়ে বা দোহাজারী পৌরসভা কেউই কোন ধরনের ইজারা দেয়নি। তবুও কিছু লোক আমাদের কাছ থেকে হাসিলের টাকা আদায় করে। শুনেছি এ বছর দোহাজারী পৌরসভায় বাজার ইজারা দিচ্ছে।
দোহাজারী পৌরসভা পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শামসুদ্দিন বলেন, “পৌরসভার মধ্যে কোন প্রতিষ্ঠান হাট বাজার ইজারা দিতে পারে না। হাট বাজার ইজারা দেওয়ার মালিক একমাত্র পৌরসভা। শুনেছি একজন লোক বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে একটি দাগের জায়গা মালামাল রাখা এবং খালাস করার জন্য অনুমোদন নিয়েছে। কিন্তু রেলওয়ে কতৃপক্ষ কোন বাজার ইজারা দেয়নি। তারা যে কৃষকদের কাছ থেকে টাকা (হাসিল) নিচ্ছেন তা সম্পূর্ণ অবৈধ। আমরা পৌরসভা আইন অনুযায়ী এ বছর দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশন বাজারের ইজারার আহবান করেছি। আদালতকে মিথ্যা ব্যাখ্যা দিয়ে স্টেশন রোডের মধ্যে বাজার বসানোর অজুহাতে তৈরি স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করবো।”
রিট পিটিশনকারী মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, “দোহাজারী পৌরসভা কর্তৃপক্ষ দোহাজারী ষ্টেশন রোডে কাঁচা বাজারের দরপত্র আহবান করেছেন। দোহাজারী ষ্টেশন রোডটি পূর্ব দোহাজারীর একটি বিশাল জনগোষ্ঠির চলাচল। এ সড়কের উপর সকালের কাঁচা বাজার বসালে যানজট সৃষ্টি হবে। তাই এলাকাবাসীর গণস্বাক্ষর নিয়ে ষ্টেশন রোডের কাঁচা বাজার ইজারার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগসহ মহামান্য হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছি। বিজ্ঞ আদালত তা আমলে নিয়ে ইজারা কার্যক্রম স্থগিতের আদেশ প্রদান করেছেন।”