হাটহাজারী উপজেলার নাঙ্গলমোরা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বারের খরিদা ও মৌরশী সম্পত্তিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বর্তমান চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ ও মেম্বার নুরুল আলম কর্তৃক জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ ওঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
বুধবার (৬ ডিসেম্বর) বিকাল ৪টার দিকে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, জায়গায় থাকা জাতীয় ফল কাঠাল গাছ কেটে রাস্তাটি করা হয়।
অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার নাঙ্গলমোরা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড নজির আহমদ সওদাগর বাড়ির মসজিদের সীমানা ঘেঁষে দক্ষিণ পাশে হাটহাজারী মৌজার আরএস ১৫১১,১৫১০,১৫১৩ তৎ সামিল বিএস ১৭৬৬,১৭৬৫,১৭৫০ দাগে আকতার হোসেন ভুট্টো এর সাথে নজির আহমদ সওদাগর গংদের জমি নিয়ে সিমানা বিরোধ চলে আসছিলো। এ নিয়ে হাটহাজারী সহকারী জজ আদালতে আকতার হোসেন বাদী হয়ে অপর মামলা ৮১/২২ দায়ের করেন এবং মামলার বাদির আর্জির প্রেক্ষিতে ২৫ মে ২০২২ সালে উভয় পক্ষকে স্থিতাবস্তায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।এছাড়াও গত ২৮/০৩/২০১৯ইং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন আকতার হোসেন ভুট্টো। এই অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রাম্য আদালত সীমানা বিরোধ হিসাব চিহ্নিত করতে উভয় পক্ষকে স্ব স্ব প্রতিনিধি নিয়োগের কথা বলা হয়। এতে গ্রাম্য সালিশী বৈঠকে প্রত্যেক পক্ষ থেকে একজন করে ৪ জন প্রতিনিধি প্রেরণ করে।
২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল উক্ত সালিশী বৈঠকের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, উভয় পক্ষের স্ব স্ব দাগাদারি জমির মধ্যেখানে পূর্ব থেকে স্থিতি সীমানা পাকা দেয়ালকে সীমানা দেয়াল হিসেবে চিহ্নিত করে পক্ষগণকে স্ব স্ব অবস্থানে স্বত্ব দখল বজায় রাখা আদেশ দেয়া হয় এবং বিবাদীগণের দাবির কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়।
এরপর বিবাদী নজির আহমদ সওদাগর গংয়ের পক্ষে তার পুত্র নজমুল কাদের গত ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর নাঙ্গলমোরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিতভাবে জানান বাদী আকতার হোসেন ভুট্টো এর সহিত তাদের মধ্যে কোন দাবী দাওয়া নাই মর্মে অবহিত করেন। এতে আরও স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, বাদী আকতার হোসেন এবং বিবাদী নজির আহমদ সওদাগর গংয়ের মধ্যে আর কোন বিরোধ নেই। তাহলে কি করে চেয়ারম্যান ও মেম্বার মিলে আমার মৌরশী ও খরিদা সম্পত্তিতে ১০০ ফুট লম্বা এবং ৪ ফুট প্রশস্ত জায়গায় আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের প্রকল্প দিয়ে আরসিসি ঢালাই দেয়? মাত্র ধনী ৪টি পরিবার এর জন্য টাকার বিনিময়ে আমার জায়গায় রাস্তা নির্মাণ যা মাস্তানি কিংবা গুন্ডামীর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তারা আমাকে যোগসাজশে মিথ্যা মামলা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে রাস্তা করার সুযোগ নিয়েছেন। না হয়, আমি থাকলে তারা আমার জায়গায় রাস্তা নির্মাণ করতে পারতেন না এমন দাবি তাদের।
চেয়ারম্যান ও মেম্বার ইউনিয়ন পরিষদের সকল গ্রামপুলিশ নিয়ে শুক্রবার সকালে জোর করে রাস্তার কাজ করার সময় আমি সরকারি জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল করেছি কিন্তু পুলিশ আসেনি। এর আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মডেল থানায় পৃথকভাবে অভিযোগও দিয়েছি তারপরও সহযোগিতা পায়নি জানান আকতার হোসেন ভুট্টো।
আক্ষেপ নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের একমাত্র উপার্জন ছেলে আকতার হোসেন ভুট্টো জানান, আজকে যে চেয়ারম্যান আমার ক্রয় করা জায়গায় রাস্তা করেছেন তার নিজের আপন শ্যালক শওকত হোসেন এর জায়গা আমি কিনেছি। তাও আবার সেই চেয়ারম্যান নিজেই আমার কাছে বিক্রি করেছেন। তাহলে তিনি সবই জানার পরও কেন জোর করে আমার জায়গায় রাস্তা নির্মাণ করলেন? তিনি যদি রাস্তা দেয়ার বিষয়টি জানতে তাহলে কেন তিনি আমার কাছে পুরো জায়গা বিক্রি করলেন? তিনি যদি জনদরদী হয়ে থাকতে তাহলেই কিছু জায়গা বিক্রি না করেও পারতেন কিংবা আমার কাছে থেকে টাকা কম নিতেন! এখন চেয়ারম্যান সাহেব নিজেও লাভ করলেন, শ্যালককেও লাভ করিয়ে দিলেন এবং ২/১টা পরিবার কেও লাভ করিয়ে দিলেন শুধু ক্ষতি করলেন আমার এটাই কি জনদরদী চেয়ারম্যান! এটা কেমন অমানবিক নিষ্ঠুর নির্যাতন করলেন চেয়ারম্যান সাহেব! আমি জেলা প্রশাসন ও সরকার প্রধানের কাছে ন্যায় ও সুষ্ঠু বিচার চাইছি এবং আমি আমার জায়গা ফিরে পেতে চাই। কেননা এতে আমার প্রায় ২০/৩০ লাখ টাকা মূল্যের জমি রাস্তায় চলে গেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় মেম্বার নুরুল আলম বলেন, এখানে কোন নিষেধাজ্ঞা ছিল না। আপনাদেরকে যেসব কাগজ পত্র দিয়েছে তা নকল। এই রাস্তাটি হালদা নদীর বেড়িবাঁধের সাথে সংযোগ হবে।
নাঙ্গলমোরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ জানান, এলাকাবাসীর উন্নয়নের স্বার্থে সড়ক করেছি। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আমার জানা নেই। এছাড়াও যদি অভিযোগকারী আকতার হোসেন ভুট্টো যদি প্রমাণ করতে পারে তার জায়গা। তাহলে আমি নিজেই আবার সেই রাস্তা বন্ধ করে দেব।
এ প্রসঙ্গে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান বলেন,নির্বাচনে তফসিল নিয়ে ব্যস্ততার কারণে আমি এটি দেখার সুযোগ পাইনি।আমি এখন এটি দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।