গুমাই বিল যেনো নদীর মোহনা
গেলো সপ্তাহ জুড়ে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় পানির নিচে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার গুমাই বিল। গত ৯ দিন ধরে গুমাই বিলের মোট কৃষিজমির পায় ৮০ ভাগ কৃষি জমি পানির নিচে রয়েছে।
গুমাই বিল ছাড়াও ছাড়াও উপজেলার সরফভাটা, শিলক, পদুয়া, বেতাগী, পারুয়া ও সাহাব্দীনগর ইউনিয়নের কৃষিজমিসহ অন্তত ১৮টি বিল ডুবে গেছে। এতে লোকসানে নিঃস্ব হবার শঙ্কায় দিনযাপন করছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভাসহ আমনের মোট কৃষিজমির লক্ষ্যমাত্রার পরিমাণ ১৫ হাজার ৪৪৫ হেক্টর। তবে এবারের অতিবৃষ্টিতে গুমাই বিলসহ উপজেলার মোট কৃষি জমির ৩ হাজার ২০০ হেক্টর কৃষি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
উপজেলার মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বে থাকা অন্তত ৫ জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গেলো সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এখন বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় বেশ কিছু স্থানের পানি নেমে গেছে। এখন পর্যন্ত গুমাই বিলের ৮০ ভাগ জমি পানির নিচে। তবে চাষাবাদের পর ১সপ্তাহের বেশি পানি থাকায় বেশকিছু ধানের চারা টিকবেনা। এক্ষেত্রে বন্যা সহনশীল ধানের জাত ব্রি-৫১ টা ১২দিন পর্যন্ত টিকে থাকবে। কৃষকদের অন্যান্য পছন্দের ধান টিকে থাকার সম্ভাবনা কম।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার মরিয়ম নগর এলাকার কাপ্তাই সড়কের উত্তর পাশে বিলের পর বিল ডুবে গেছে পানিতে। দেখে মনে হলো এ যেনো শস্যভাণ্ডার গুমাই বিল নয়, বিশালাকৃতির জলাশয়। বিলে পাড়ে বসে রয়েছেন বেশ কয়েকজন কৃষক। এখনও চার ফুট পর্যন্ত পানি জমে রয়েছে বিলে। কেউকেউ জাল দিয়ে মাছ ধরছে, নৌকায় করেও মাছ ধরতে দেখা গেছে কয়েকজনকে। পানি নিষ্কাশনের খালগুলো কচুরিপানায় ভরপুর হওয়ায় প্রবাহ কম। মরিয়ম নগর চৌমুহনী থেকে কাটাখালী পর্যন্ত কাপ্তাই সড়কের দক্ষিণ পাশে পানি নিষ্কাশনের খালটি দখলে ও দূষণে বিপন্ন। এ খালে বাঁধ দিয়ে কেউকেউ গড়ে তুলেছে মৎস প্রকল্প।
প্রকৃতপক্ষে অতিবৃষ্টি ও দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় পানির নিচে তলিয়ে গেছে গুমাই বিল। গুমাই বিলের পানি নিষ্কাশনের খালগুলো পরিস্কার না করায় ও দখলে দূষণে দ্রুত পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে।
গুমাই বিলের স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কাপ্তাই সড়কের দক্ষিণ পাশে গুমাই বিলের পানি নিষ্কাশনের খালটির বেশ কিছু অংশ দখল করে গড়ে উঠেছে স্থাপনা। কিছু অংশ দূষণে বিপন্ন ও খালের বাকি অংশে বাঁধ দিয়ে মৎস প্রকল্প করায় দ্রুত পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হচ্ছে বলে দাবী স্থানীয় কৃষকদের।
গুমাই বিলে ৪ কানি জমির চাষাবাদ করেছেন মরিয়ম নগর এলাকার কৃষক সুদর্শন সিংহ। তিনি বলেন, ” এবার গুমাই বিলের ৮০ ভাগ আমন চাষাবাদ শেষ।আমার চাষাবাদে এখন পর্যন্ত কানি প্রতি প্রায় ১২ হাজার টাকা খরচ করে ফেলেছি। আজ প্রায় ১ সপ্তাহের বেশি পানিতে ডুবে রয়েছে। ধানের চারা বাঁচে কিনা তাও জানিনা”।
গুমাই বিলের মরিয়ম নগর এলাকার দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম বড়ুয়া জানান, “গুমাই বিলের ৫০ ভাগ মতো চাষাবাদ করেছে কৃষকরা। এতে আমনের বন্যা সহনশীল ধানের জাত ব্রি ৫১ বেশি। এগুলোর ক্ষতি হবে না আশা করছি। বৃষ্টি কমলে পানি নেমে যাবে। তবে মরিয়ম নগর চৌমুহনী থেকে কাটাখালী এলাকা পর্যন্ত খালটি দখলে ও দূষণে বিপন্ন। এতে করে পানি নিষ্কাশন দেরিতে হচ্ছে”।
কৃষক রুস্তম আলী বলেন, “গত ৯ দিন ধরে যেসব ধানের চারা পানির নিচে তলিয়ে গেছে সেসব আর হবে না। জমি তৈরি, চারা রোপণ, সার ও খাজনা ও শ্রমিকদের মজুরিসহ কানি প্রতি জমিতে খরচ গুনতে হয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা। এখন নষ্ট হলে সব শেষ। নতুন করে বীজতলা তৈরি করে আবারও চাষাবাদ করতে হবে। তবে তখন আর মৌসুম থাকবে না”।
জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, “প্রায় ৮-৯ দিন ধরে বৃষ্টি হওয়ায় উপজেলায় বেশিকিছু কৃষি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তবে এখন শুধুমাত্র গুমাই বিলেই পানি রয়েছে। গুমাই বিলের পানি যাতে নেমে যায় নজর রাখা হচ্ছে। এছাড়াও গত কয়েকদিন আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও জানিয়েছি”।