দোহাজারীতে জমি বিরোধে মারামারি

এক ভাইয়ের মৃত্যু, আরেক ভাইয়ের অবস্থা সংকটাপন্ন, ভাতিজা জেলে

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে শুক্রবার (২৮ জুলাই) আপন তিন ভাই ও ভাতিজার মধ্যে মারামারিতে আহত চার জনের মধ্যে ছালেহ আহমদ নামে এক ভাই চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন শনিবার (২৯ জুলাই) সকাল ৭টায় মারা গেছেন।

অপরদিকে আরেক ভাই মনির আহমদ সংকটাপন্ন অবস্থায় চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহতদের মধ্যে আরেক ভাই বশির আহমদ চমেক থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফিরে এসে ঘটনার দিন রাতে ভাই ছালেহ আহমদ ও ভাতিজা ইব্রাহিমকে আসামি করে মামলা করেন। সেই মামলায় নিহতের ছেলে ইব্রাহিমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেলে থাকার কারণে নিজের মৃত বাবার জানাজায় অংশ নিতে পারেনি, কবরে মাটিও দিতে পারেনি ছেলে ইব্রাহিম। নিহত ছালেহ আহমদের বৃদ্ধা মা ছফুরা খাতুন তাঁর সন্তান হারানোর বেদনায় শোকের মাতম করছেন। জমি নিয়ে পারিবারিক মারামারির এমন পরিণতিতে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, দোহাজারী পৌরসভার ৯নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার পাড়া এলাকায় মৃত মুন্সি মিয়ার চার ছেলে- ছালেহ আহমদ, নজির আহমদ, বশির আহমদ ও মনির আহমদের মধ্যে গত একযুগ ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। স্থানীয় সালিশে বারবার মীমাংসার উদ্যোগ নিলেও উভয় পক্ষের অনড় অবস্থানের কারনে বিষয়টি সুরাহা হয়নি।

নিহত ছালেহ আহমদের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, ছালেহ আহমদ সৌদি আরব থাকাকালীন সময়ে সেখান থেকে দেশে টাকা পাঠান মা ছফুরা খাতুনের নামে জমি কিনতে। ভাইয়েরা মায়ের নামে জমি না কিনে যৌথভাবে চার ভাইয়ের নামে জমি কেনেন। কয়েক বছর পর ছালেহ আহমদ প্রবাস থেকে দেশে আসার পর এবিষয়ে অপর ভাইদের সাথে ঝগড়াঝাটি হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে ২০১১ সালে ছালেহ আহমদের সঙ্গে বশিরের মারামারির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় তার ভাই বশির আহমদের স্ত্রী শিরিন আক্তার বাদী হয়ে মামলা করে। সে মামলায় ছালেহ আহমদের ১০ বছর ৪ মাস সাজা হয়। দেড়মাস পরে সে জামিনে বেরিয়ে আসে। এরপর থেকে ছালেহ আহমদ তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে পার্শ্ববর্তী সাতকানিয়া উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের মরফলা এলাকায় বসবাস করছেন।

শুক্রবার (২৮ জুলাই) সকালে বিরোধীয় জমিতে আমন ধানের চারা রোপন করা নিয়ে পুনরায় তাদের মধ্যে জমির মালিকানা নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। নিজেদের মধ্যে মারামারিতে মনির আহমদ, বশির আহমদ, ছালেহ আহমদ ও তার ছেলে ইব্রাহিম আহত হয়।

স্থানীয়রা আহত মনির আহমদ ও বশির আহমদকে উদ্ধার করে দোহাজারী হাসপাতালে পাঠালে তাদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। অপরদিকে মনির আহমদ ও বশির আহমদকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করার অভিযোগে ছালেহ আহমদের ছেলে ইব্রাহিমকে এলাকাবাসী আটক করে কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে বেঁধে রেখে দোহাজারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে খবর দেন। ছালেহ আহমদকেও ঘেরাও করে রাখেন স্থানীয়রা। সংবাদ পেয়ে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে দোহাজারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পিতা-পুত্রকে উদ্ধার করে দোহাজারী হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তাদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরদিন শনিবার সকাল ৭টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ছালেহ আহমদ। সন্ধ্যা ৭টায় স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। অপরদিকে চমেক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে এসে ঘটনার দিন রাতে বশির আহমদ বাদী হয়ে তার ভাই ছালেহ আহমদ ও ভাতিজা ইব্রাহিমকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় পুলিশ ইব্রাহিমকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।

এ বিষয়ে চন্দনাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দোহাজারী পৌরসভার দিয়াকুল এলাকায় বিবাদমান ভাই-ভাতিজার মধ্যে শুক্রবারে মারামারি সংঘটিত হয়েছে। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে দোহাজারী হাসপাতালে নিয়ে এলে তাদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে ছালেহ আহমদ নামে একজন মারা গেছেন। অপর পক্ষে মনির আহমদ নামে একজনের অবস্থাও সংকটাপন্ন। এঘটনায় বশির আহমদ বাদী হয়ে ছালেহ আহমদ ও তার ছেলে ইব্রাহিমকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। সে মামলায় ইব্রাহিম নামে একজনকে আটক করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন