বাঁশখালীতে ধানের বাম্পার ফলনে চাষীর মুখে হাসির ঝিলিক

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে ঘন সবুজের সমারোহ। বসন্ত বাতাসে বোরো ধানের সবুজ ঢেউ উপজেলার সকল কৃষকের মন ভরিয়ে দিচ্ছে। ঢেউয়ের মতো খেলে যাচ্ছে ধান গাছের সবুজ পাতা ও কাঁচা শীষ। পুরোদমে ধানের শীষে দুধ-দানা গঠন শুরু হয়েছে। কিছু কিছু ধান ক্ষেতে সোনালী রং ধরেছে। আগাম চাষ করা কিছু কিছু এলাকায় সোনালী ধান ঘরে উঠতে শুরু করছে। আর এমন সবুজ সমুদ্রের ঢেউয়ে দুলে উঠছে প্রকৃতি। ইরি-বোরো ধানের শীষে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। ধানের কাঁচা শীষ দেখে আনন্দে বুক ভরে উঠে কৃষকের মন। যেন হারিয়ে যায় সবুজ মাঠে। দিগন্ত জোড়া সবুজ ফসলের মাঠ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরো বিকশিত করে তুলেছে। রমজানের পরপরই সোনালী ধান কাটা হবে এমনটি জানান উপজেলার ধান চাষীরা।
সরোজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি, চাম্বল, শীলকূপ, বৈলছড়ী, কালীপুর, সাধনপুর, পুকুরিয়া, বাহারছড়া, খানখানাবাদ, কাথারিয়া, ছনুয়া, শেখেরখীল, গন্ডামারা, সরল ও পৌরসভার জলদী এলাকায় বোরো ধানের ভাল ফলন হয়েছে। অল্প কয়দিন পরেই ধান কাটা শুরু করবে কৃষকরা। অনুকূল আবহাওয়া, কৃষকের নিবিড় পরিচর্যা, যথাসময়ে জমিতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগের কারণে বোরোর বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ। ফলে মাঠে দোল খাওয়া নতুন ধানের নতুন স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি অফিসসুত্রে জানা যায়, চলতি বছর উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১১ হাজার ৩ শত হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ৫ হাজার ২শত হেক্টর, উফশী জাতের ৬ হাজার ১শত হেক্টর। এ বছর মোটা ধানের ফলন ৮.৫ মেট্রিক টন, চিকন ধানের ফলন ৬.২ মেট্রিক টন আশা করা যাচ্ছে।

উপজেলার ১১ হাজার ৭৫০ জন প্রান্তিক কৃষককে বোরো প্রনোদনা ও ৩ হাজার কৃষককে আউশ প্রনোদনা প্রদান করা হয়েছে।
রমাজানের পরপরই পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে উপজেলা জুড়ে। রাশি রাশি সোনালী ধানে ভরে উঠবে কৃষাণীর শূন্য গোলা। বোরো মৌসুমকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখে এ অঞ্চলের চাষিরা। এবছর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল। সার, বীজ ও বালাইনাশক সংকট ছিল না। ফলে ফসলের মাঠ অনেক সুন্দর হয়েছে। ধানের সবল-সতেজ চারা এবং শীষ বের হয়েছে। তাই এবার ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি বোরো মৌসুমে ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, ‘কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শে চাষাবাদকৃত ইরি-বোরো ধান গতবারের চেয়ে এবার ভালো হয়েছে। বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি ধান কাটা শুরু হবে। সামনে ইদুল ফিতর। ইদের পরেই পুরোদমে ধান কাটা শুরু করবে কৃষকেরা। তখন পূরণ হবে কৃষকের স্বপ্ন।’ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বললে তারা আরও জানান, ‘চলতি বছরে ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছি আমরা। কোনো ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে বিগত বছরের তুলনায় এবার ভালো ফলন ঘরে তুলতে পারব।’

বাঁশখালী উপজেলার কৃষিবান্ধব কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আবু সালেক জানান, ‘চলতি মওসুমে বাঁশখালী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার অধিক জমিতে। ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে টিমভিত্তিক কাজ করেছি। কৃষকদের নানা সহায়তার পাশাপাশি পরামর্শ দিয়েছি। এবার ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। তাই ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছি। রমজানের পরপরই পাকা ধান মাড়াইয়ের কাজ পুরোদমে শুরু হবে।’

আরও পড়ুন