দোহাজারীতে অসহায় দুইটি পরিবারকে নিজ অর্থায়নে গৃহ নির্মাণ করে দিলেন আব্দুল নবী খান
চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভায় অসহায় দুইটি পরিবারকে নিজ অর্থায়নে দুইটি সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দানবীর আব্দুল নবী খান। প্রায় দশ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা এই ঘরগুলোর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে নবনির্মিত ঘরের শুভ উদ্বোধন ও চাবি হস্তান্তর করা হয়।
জানা যায়, দোহাজারী পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের খান বাড়ি এলাকার মৃত আবুল খায়েরের ছেলে কৃষক কামাল উদ্দিন গত দশ মাস আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর দশম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে এবং নবম ও পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া দুই ছেলেকে নিয়ে খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছিলেন তাঁর স্ত্রী ফেরদৌস আক্তার। ঝুপড়ি সাদৃশ্য তাঁদের বসতঘরটি জরাজীর্ণ হয়ে গেলেও টাকার অভাবে মেরামত করতে পারছিলেন না। তিন সন্তানের লেখাপড়ার খরচ ও সংসারের খরচ চালানোই যেখানে কষ্টকর সেখানে ঘর মেরামত করবেন কিভাবে। অসহায় এই পরিবারের বিষয়টি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দানবীর আব্দুল নবী খানের দৃষ্টিগোচরে আনেন তাঁর বড় ভাই আব্দুল সবুর খান। অবশেষে নিজ অর্থায়নে অসহায় এই পরিবারটিকে তিন কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে দেন জনাব আব্দুল নবী খান। উপরে রঙিন টিন ও চারদিকে পাকা দেয়াল ঘেরা ঘরটিতে এটাচ বাথরুম ও কিচেন ছাড়াও শোবার ঘর রয়েছে তিনটি।
মরহুম কামাল উদ্দিনের পরিবারের পাশাপাশি খানবাড়ি এলাকার মৃত নুরুল আলমের এতিম সন্তাদেরকেও একই ডিজাইনের আরেকটি সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দানবীর আব্দুল নবী খান। মৃত নুরুল আলমের ভাই খাইর আহমদ জানান, বছর খানেক আগে তার ভাই নুরুল আলম ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সে মারা যাওয়ার ছয় মাস পর তার স্ত্রী রোশনা বেগমও ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর মৃত নুরুল আলমের কলেজ পড়ুয়া এক মেয়ে ও ষষ্ট শ্রেণি পড়ুয়া এক ছেলের অসহায়ত্বের কথা অবগত হয়ে নিজ অর্থায়নে তিন কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে দেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দানবীর আব্দুল নবী খান।
স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি প্রায় দেড়লাখ টাকা ব্যয়ে ওই এলাকার ফয়েজ খান, মো. আমির ও এক অসহায় মহিলার জরাজীর্ণ ঘর মেরামত করে দেন আব্দুল নবী খান।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে মরহুম কামাল উদ্দিন ও মরহুম নুরুল আলমের পরিবারের জন্য নবনির্মিত ঘর দুইটি শুভ উদ্ভোধন ও চাবি হস্তান্তর উপলক্ষে মরহুম কামাল উদ্দিনের ঘরের সামনে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ আবদুল জব্বার চৌধুরী, দোহাজারী পৌরসভা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল শুক্কুর, সাধারণ সম্পাদক বশির উদ্দিন খান মুরাদ, সাবেক দোহাজারী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লা আল নোমান বেগ, উপজেলা কৃষকলীগ সাধারণ সম্পাদক নবাব আলী।
আলোচনা সভায় আব্দুল নবী খান বলেন, আমি আমার সাধ্যমত অসহায় মানুষের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। আমরা পৃথিবীতে কেউই চিরস্থায়ী থাকতে পারবো না। আমরা যদি নিজ নিজ এলাকার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই এবং তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই তবে এর উত্তম প্রতিদান মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে পরকালে দেবেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, খানপ্লাজার সত্বাধিকারী আলী আজম খান, দোহাজারী পৌরসভা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি যথাক্রমে- শাহ্ আলম মেম্বার, এসএম জামাল উদ্দিন মেম্বার ও সাবেক জাতীয় ফুটবলার আসকর খান বাবু, প্রধান শিক্ষক বিষ্ণু যশা চক্রবর্তী, দক্ষিণ জেলা যুবলীগ নেতা হাসান মাহমুদ, উপজেলা যুবলীগ সদস্য লোকমান হাকিম, আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক জাতীয় ফুটবলার শওকত খান, এরশাদুর রহমান সুমন, হেলাল মাহমুদ, দেলোয়ার হোসেন, যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম সুমন, আব্দুল হাকিম রাজু, এসএম রবিন, দোহাজারী পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মশিউর রহমান রাশেদ, সাধারণ সম্পাদক আলম খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নুরুল আলম আজাদ, উপজেলা তাঁতীলীগ আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম সহ স্থানীয় গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মফিজুর রহমান বলেন, মানুষের প্রতি দরদ ও মমত্ববোধ থেকে যারা ভালো কাজ করে তাদের মৃত্যুর পরেও মানুষ তাদেরকে স্মরণ করে। নির্দিষ্ট একটা সময়ের জন্য আমরা এই পৃথিবীতে এসেছি। নির্দিষ্ট সেই সময় ফুরিয়ে গেলে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে আমরা সবাই চলে যাবো। সম্পদ নিয়ে আমরা কেউই কবরে যেতে পারবো না। বেঁচে থাকতেই সম্পদের সৎ ব্যবহার করে যেতে হবে। মানুষের জন্য কিছু করতে পারার মধ্যে আনন্দ ও মানসিক প্রশান্তি নিহিত রয়েছে। সমাজের বিত্তশালীদেরকে আব্দুল নবী খানের মত নিজ নিজ এলাকার অসহায় মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।