‘বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতে আছে’- এমন বক্তব্য দিয়ে এক সপ্তাহ আগে আলোচনায় এসেছিলেন। ঠিক এক সপ্তাহ পর নতুন আরেক বক্তব্য দিয়ে তোলপাড় ফেলে দিয়েছেন দেশজুড়ে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের এই দুই বক্তব্য এখন বিরোধী রাজনীতির বড় খোরাক। নেট দুনিয়ার ভাইরাল উপাদান। মোমেন বচনে বিব্রত দলের নেতাকর্মীরাও। ‘শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারতকে বলেছেন’ ড. মোমেনের এমন বক্তব্যে বিব্রত আওয়ামী লীগের নেতারাও এখন তার সমালোচনা করছেন। শুক্রবার দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী মোমেনের বক্তব্যকে একান্তই তার নিজের বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ড. মোমেন যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আওয়ামী লীগ বা সরকারের বক্তব্য নয়। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান গতকাল আরও কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তিনি বলেছেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন আওয়ামী লীগের কেউ নন।
তার বক্তব্যের দায়ভার আওয়ামী লীগ নেবে না। গতকাল সকালে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। আবদুর রহমান আরও বলেন, ভারত নিয়ে আব্দুল মোমেনের বক্তব্য আওয়ামী লীগের দলীয় বক্তব্য নয়। কোনো দেশের সমর্থনে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা নির্ভর করে না।
আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্যের এমন বক্তব্যে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে আওয়ামী লীগের কেউ না হলে ড. মোমেন আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেন কীভাবে? আওয়ামী লীগের কেউ না হলে তাকে কেন এই দায়িত্ব দেয়া হলো। তিনি আওয়ামী লীগের না হলে তিনি তাহলে কার? দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মোমেনকে দলের লোক হিসেবে অস্বীকার করলেও রেকর্ড কিন্তু তা সমর্থন করছে না। কারণ কূটনীতিক থেকে রাজনীতিতে আসা মোমেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন। পরে তিনি সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির প্রথম সদস্য হন। নগর আওয়ামী লীগের এই কমিটি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অনুমোদনেই হয়েছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব থাকাকালেই সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের ১৫ নং ওয়ার্ডের কার্যকরী কমিটির সদস্য হয়েছিলেন ড. একে আব্দুল মোমেন। তখন অবশ্য সিলেটের রাজনীতিতে তিনি পদার্পণ করেননি। রাজনীতিতে আসবেন, আসছেন- এমন গুঞ্জন ছিল। ওই সময়ে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের ওই ওয়ার্ড কমিটিতে তাকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
আর এটি ছিল ড. একে আব্দুল মোমেনের আওয়ামী লীগের প্রথম পরিচয়। ২০১৫ সালের ২৬শে অক্টোবর ঘোষিত ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন মকসুদ বখত ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন হাজী এম এ মতিন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, ওই সময়ে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আসাদ উদ্দিন আহমেদ। তাদের অনুমোদন দেয়া কমিটিতে প্রথম সদস্য ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী ও প্রয়াত ড. আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ ছাড়া কমিটির তৃতীয় সদস্য ছিলেন তাদের আরেক ভাই ড. একে আব্দুল মুমিন। ওই কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সিলেটের আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে পা বাড়ান ড. একে আব্দুল মোমেন। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় দুই বছর আগে জাতিসংঘের চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে সিলেটে ফিরেন ড. মোমেন।
ওই সময় আওয়ামী লীগ নেতারাও তাকে সাদরে বরণ করে নেন। এরপর ২০১৯ সালের ৫ই ডিসেম্বর সিলেট আওয়ামী লীগকে নতুন করে গড়ে তুলতে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনের মাধ্যমে সিলেট আওয়ামী লীগে আমূল পরিবর্তন করা হয়। পুরাতনদের বাদ দিয়ে নতুনদের দিয়ে গঠন করা হয় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি। এর মধ্যে মহানগরের সভাপতি করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদ উদ্দিন আহমদকে ও সাধারণ সম্পাদক হন জাকির হোসেন। তাদের দু’জনকে দিয়ে কমিটি গঠনের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয় ২০২১ সালের ৮ই জানুয়ারি। কেন্দ্র অনুমোদিত ওই কমিটির প্রথম সদস্য হচ্ছেন ড. একে আব্দুল মোমেন। এখনো তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের প্রথম সদস্য হিসেবে বহাল রয়েছেন। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, জেলা ও মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সময় জেলার প্রথম সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছিল সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে ও মহানগরে রাখা হয় একে আব্দুল মোমেনকে।
ফলে সিলেট আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে ড. একে আব্দুল মোমেনের অবস্থান সুসংহত রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর সিলেট আওয়ামী লীগের অভিভাবকের ভূমিকায়ও রয়েছেন তিনি। তাকে ঘিরেই এখন আবর্তিত হচ্ছে সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতি। সিলেট আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মকাণ্ডেও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন ড. একে আব্দুল মোমেন। সিলেট সফরে এলে তিনি দলের কর্মকাণ্ডেও শরিক হন। আওয়ামী লীগ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।
খবর : দৈনিক মানবজমিন