হাতিরঝিল থানায় তরুণের মৃত্যু
রাজধানীর হাতিরঝিল থানা হেফাজতে সুমন শেখ (২৫) নামের এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের দাবি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে পরিবারের দাবি, তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ স্বজন ও এলাকাবাসী আজ শনিবার থানার সামনে বিক্ষোভ করেন।
শনিবার দুপুরে থানা হাজত থেকে সুমনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহত সুমনের স্ত্রী জান্নাত আক্তার অভিযোগ করেন, সুমন রামপুরায় ইউনিলিভারের পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র পিওরইট–এর বিপণন অফিসে ছয় বছর ধরে কাজ করতেন। মাসে ১২ হাজার টাকা বেতন পেতেন। শুক্রবার রাতে সেখান থেকে পুলিশ তাঁকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে যায়।
হাতিরঝিল থানার সামনে ছেলে রাকিবকে (৬) পাশে নিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জান্নাত বলেন, ‘আমার স্বামীকে ধরার পর পুলিশ পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় ওরা তাঁকে মেরে ফেলছে। যারা আমার ছেলেকে এতিম করল, আল্লাহ তাদের বিচার কইরো।’
পরিবারের সদস্যদের দাবি, সুমন শেখকে আটকের কথা শুনে রাতেই তাঁরা থানায় যান। তখন তাঁদের বলা হয়, সকালে তাঁকে আদালতে পাঠানো হবে। সকালে তাঁরা আবার থানায় গেলেও তাঁদের সুমনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়নি।
তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার আজিমুল হক বলেন, পিওরইটের একটি চুরির মামলায় গ্রেপ্তার তিন আসামির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই অফিস থেকে ৫৩ লাখ টাকা চুরির মামলা হয়েছিল। চুরির ঘটনায় ওই অফিসের বিতরণ ব্যবস্থাপক মোসলেম উদ্দিন মাসুদ বাদী হয়ে ১৫ আগস্ট হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় ওই অফিসের কর্মী আল আমিন, সোহেল রানা ও অনিক হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আজিমুল হক বলেন, তিনজনের দেওয়া তথ্য ও অফিসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সুমনকে চিহ্নিত করা হয়। গত শুক্রবার বিকেলে রামপুরা এলাকা থেকে তাঁকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে তাঁর বাসায় অভিযান চালিয়ে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৭০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। অভিযান শেষে রাত ১১টার দিকে তাঁকে থানার হাজতখানায় রাখা হয়।
উপকমিশনার আজিমুলের দাবি, হাজত থেকে সকালে (শনিবার) সুমনকে আদালতে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু রাত ৩টা ৩২ মিনিটে সুমন পরনের ট্রাউজার দিয়ে গলায় ফাঁস দেন, যা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। সেই ফুটেজ সুমনের স্ত্রীসহ স্বজনদের দেখানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় রাতে দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক (এসআই) হেমায়েত হোসেন ও কনস্টেবল মো. জাকারিয়াকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার হাফিজ আল ফারুক, তেজগাঁও অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার রুবায়েত জামান ও মোহাম্মদপুর অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মুজিব পাটোয়ারিকে নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।
হাতিরঝিল থানার সামনে গিয়ে দেখা গেছে, থানার মূল গেট বন্ধ। সুমন শেখের পরিবারের সদস্যরা ও স্থানীয় কয়েক শ বাসিন্দা থানার সামনে বিক্ষোভ করছেন। পুলিশ সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া কাউকে থানায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা ঊর্মি আক্তার বলেন, কেউ অপরাধ করলে আইন অনুযায়ী তাঁর শাস্তি হবে। কিন্তু থানায় আটকে কেন তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে। সুমনের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, থানায় পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে একজন আসামি কীভাবে আত্মহত্যা করেন। এটা পুলিশের দায়িত্বে চরম অবহেলা।
হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্র জানায়, ময়নাতদন্ত শেষে সুমন শেখের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
সুমন শেখ পশ্চিম রামপুরার ঝিলকানন এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জের দাড়িকান্দি এলাকায়। সুমনের বাবার নাম পেয়ার আলী।