পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ভোলা। এ সময় পুলিশের গুলিতে এক বিএনপি কর্মী নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম আবদুর রহিম। তার বাড়ি সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ডাকা জেলা বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে রোববার সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ১২ পুলিশ সদস্য ও ছাত্রদল সভাপতি নুরে আলমসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত নুরে আলম ও ইলিশা ইউনিয়ন ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক সুমনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিমে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে তাদেরকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ১১ বিএনপি নেতাকর্মীকে আটক করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে রোববার বেলা ১১টায় ভোলা জেলা বিএনপি প্রতিবাদ সমাবেশ এবং বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে। শহরের কালীনাথ রায়ের বাজার এলাকায় জেলা বিএনপি কার্যালয়ে সমাবেশ শেষে মিছিল করতে রাস্তায় নামেন দলীয় নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে তাদের। সংঘর্ষে পুলিশকে লক্ষ্য করে ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৩০ রাউন্ড টিয়ারশেল ও ১৬৫ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছোড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নেতাকর্মীরা আহত হয় তাদের ভোলা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় আবদুর রহিম মারা যান।
ঘটনার পর বেলা ১টায় জেলা বিএনপি সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর শহরের তার নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন।
এ সময় তিনি বলেন, পুলিশ বিনা উস্কানিতে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। পুলিশের গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী আবদুর রহিম নিহত হয়েছেন। জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ূন কবির, জেলা ছাত্রদল সভাপতি নুরে আলমসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তিনি এই ন্যক্কারজনক ঘটনার বিচার দাবি করেন।
এবং দ্রুত গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবি করেন জেলা বিএনপি সভাপতি। ভোলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরহাদ হোসেন সংবাদিকদের জানান, বিএনপি কর্মীরা প্রথমে পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং আত্মরক্ষার্থে ৩০ রাউন্ড টিআরশেল এবং ১৬৫ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছোড়ে। সংঘর্ষে ১২ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত ৬ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছ।
এদিকে দিনভর থেমে থেমে উত্তেজনা বিরাজ করলেও দুপুরের পর উত্তেজনা কিছুটা কমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। সন্ধ্যায় যুবলীগ নেতা মোস্তাক আহমেদ শাহিনের নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীদের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে সদর রোডে বিক্ষোভ করলে শহরময় ফের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। হত্যার ঘটনাসহ পুলিশ এসল্টের মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।