ইভিএম ও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন চায় আওয়ামী লীগ

আগামী সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকাল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভোট কারচুপি বন্ধে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বিকল্প নেই। একইসঙ্গে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজনের কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা একটি ‘পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজড চ্যাপ্টার’। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এ ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক এবং অবৈধ ঘোষণা করেছেন। সংবিধানের বাইরে গিয়ে ভোটের কোনো সুযোগ নেই। গতকাল নির্বাচন ভবনে আয়োজিত ইসির সঙ্গে সংলাপে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে। ভোট ডাকাতি ও ভোট কারচুপি বন্ধ করতে ইভিএম’র কোনো বিকল্প নেই। ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহারের শুরুর দিকে কিছু কিছু ভোটারের অপছন্দ থাকলেও সময়ের পরিক্রমায় প্রমাণিত হয়েছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল, ভোট কারচুপি-এসব বন্ধ করে একটি টেকসই স্বচ্ছ নির্বাচন পদ্ধতি বাস্তবায়ন ইভিএম ব্যবস্থায় সম্ভব।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অব্যাহত সহায়তা ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এখন ১ লাখ ৫০ হাজারের অধিক ইভিএম মেশিন রয়েছে, যা দিয়ে মোট ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৩ হাজার কেন্দ্রে শতকরা মাত্র ৩১ শতাংশ কেন্দ্রে ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোট নেয়া সম্ভব। আগামী নির্বাচনে ইভিএম মেশিনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে হবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা একটি ‘পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজড চ্যাপ্টার’। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক এবং অবৈধ ঘোষণা করেছে। ইতিমধ্যে দেশে দুইটি জাতীয় নির্বাচন বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোয় অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১১-এর বিধান অনুযায়ী এই বিষয়ে অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়ার এখতিয়ার নেই। এই বিষয়ে সাংঘর্ষিক কোনো মন্তব্য করা সংবিধান লংঘন করার শামিল। তিনি আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় কর্মকর্তা পর্যায়ে হাওয়া ভবনের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক দলীয় ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হয়। এই সব ব্যক্তিরা এখন নির্বাচন কমিশনের আওতাভুক্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছে। নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত রাখার লক্ষ্যে এই বিষয়ে কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

এছাড়া, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় দলীয়করণের অংশ হিসেবে পুলিশসহ সিভিল প্রশাসনে কর্মকর্তাদের তালিকা প্রস্তুতপূর্বক তাদের সব ধরনের নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বাইরে রাখতে হবে। নির্বাচন পরিচালনায় বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবর্তে কেবলমাত্র প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার পদে নিয়োগ করা। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্যদিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তিকরণ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকবে। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশে সেটা আর রাখা সম্ভব হয়নি। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে আমু বলেন, যারা নির্বাচনে আসতে চাচ্ছে না সেটা কিন্তু তাদের চিরকালীন অভ্যাস। ইভিএম’র বিরুদ্ধে কারও কোনো অভিযোগ নেই।

ইভিএমে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমনটি আমার জানা নেই। ইভিএম’র বিরোধিতা করে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে বিএনপি। এ সময় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দল নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করবে বলেও জানান তিনি। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ রয়েছে। ৭০ শতাংশ মানুষ ভোট দেয়। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। মাত্র কয়েক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছে। সুতরাং নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা রয়েছে। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা কমিশনের সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব। একইভাবে ইসিকে সহায়তা করা সরকারের সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব। আমরা সে দায়বদ্ধতা থেকেই সংলাপের আয়োজন করেছি। ১৯৭০ থেকে আমরা নির্বাচন দেখে এসেছি। ১৯৫৪ সালের নির্বাচন আমরা জানি। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন এক অর্থে সাম্প্রতিক। রাষ্ট্রপতি শাসিত নির্বাচন পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন হয়েছে। সংসদীয় পদ্ধতিতে ১৯৯১ সাল থেকে সম্ভবত নির্বাচন হচ্ছে।

অতীতের অনেক নির্বাচন নিয়েই সমালোচনা বা তর্ক-বিতর্ক হলেও ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অতিমাত্রায় সমালোচনা ও তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা প্রায় চার-পাঁচ পর্বে সংলাপের আয়োজন করেছিলাম। সুধীজনরা তাদের মতামত উপস্থাপন করেছেন। নির্বাচনে অর্থশক্তি, পেশিশক্তির প্রভাব, নির্বাচনে সহিংসতা, ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই করে বাক্স ভর্তি করা, ভোটকেন্দ্রে বাধা প্রদান, আমলাতন্ত্রের পক্ষপাতিত্ব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা, ইসির নির্লিপ্ততা ইত্যাদি বিষয়ে মতামত উঠে এসেছে। সিইসি বলেন, অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং ভোটাধিকার প্রয়োগের নিশ্চয়তা সম্পন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংবিধানের প্রতি অনুগত থেকে আইন ও বিধি-বিধান অনুসারে ইসি তার দায়িত্ব পালন করবে। আমরা আশা করি, সবাই নির্বচন কমিশনকে (ইসি) সহায়তা করবে এবং দলগুলোর দায়িত্বশীল আাচরণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সফলতা কামনা করছি। তিনি বলেন, সংলাপে কিছু বিষয় উঠে এসেছে।

অনেক পার্টি মনে করছে একদিনে নির্বাচন করা সমীচীন হবে না। ভারতের মতো পৃথক দিনে হওয়া উচিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপ্রতুলতাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা। অনেকে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার জন্য বলেছেন। সেনাবাহিনীর প্রতি জনমানুষের আস্থা অনেক বেশি বলে তারা মনে করেন। আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আরেকটা বিষয়ে সংকট থেকে যাবে, সেটা হলো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। ইভিএম নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে সমর্থন পেয়েছি। অধিকাংশ দল ইভিএম বিশ্বাস করছে না। এর ভেতরে কী জানি একটা আছে। ইভিএম নিয়ে আমাদের যে অনুভূতি আমরা ব্যক্ত করেছি। ফলাফল ৭১ শতাংশ পর্যন্ত ভোট কাস্ট হয়েছে। কিন্তু অনেককেই আস্থায় আনতে পারছি না। তারা মনে করছেন না কিছু একটা আছে। ইভিএম নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো স্বাধীনভাবে।

আরও পড়ুন