দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেছেন, দুর্নীতিবাজরা এখন ধরা পড়া ও শাস্তির আতঙ্কে আছে। যেকোনো সময় তারা ধরা পড়বে ও শাস্তির সম্মুখীন হবে।
তিনি বলেন, দুদক দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। আগে বলা হতো দুদক শুধুমাত্র চুনোপুঁটিদের নিয়ে কাজ করে, রুই-কাতলা ধরে না। এখন কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি জেলে আছে।
বুধবার (৩ আগস্ট) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শহীদ বীরোত্তম শাহ আলম অডিটোরিয়ামে দুদকের গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এই প্রথম চট্টগ্রামে দুর্নীতি দমন কমিশন গণশুনানির আয়োজন করেছে।
গণশুনানিতে দুদক কমিশনার বলেন, যিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন, মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত হিসেবেই থাকবেন। মামলার বিচার থেকে কোনো পরিত্রাণ নেই। জীবিত থাকতে অভিযুক্ত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। দুর্নীতির সহযোগী যারা থাকবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সমাজ থেকে দুর্নীতি সমূলে উৎপাটন করতে হবে উল্লেখ করে দুদক কমিশনার বলেন, আমাদের বক্তব্য হচ্ছে জিরো টলারেন্স টু করাপশন। এটা হচ্ছে আমাদের টার্গেট। আমরা যদি এর কাছাকাছি পৌঁছাতে পারি, তাহলেই আমাদের জন্য যথেষ্ট। যতক্ষণ পর্যন্ত জিরো টলারেন্সের নীতিতে সফল না হব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কার্যক্রম অবিরত ও শক্ত হাতে চলবে। আমরা কখনও পিছপা হব না।
তিনি বলেন, দুদক ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হচ্ছে। এখন দুদকের আকার ও সক্ষমতা বেড়েছে। দুর্নীতিকে আমলে নেওয়ার ও বিচার করার ক্ষমতা রয়েছে। দুদকের ৭০ শতাংশ মামলায় শাস্তি দিতে সক্ষম হয়েছি আমরা।
অনুষ্ঠানে দুদকের মহাপরিচালক এ কে এম সোহেল বলেন, আজ গণশুনানিতে সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা শুনব। জনগণকে সেবা দেওয়ার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন দিয়ে রাষ্ট্র নিয়োগ দিয়েছে। সেই সেবা পেতে অনৈতিকভাবে, অযৌক্তিকভাবে কেউ যদি কোনো ধরনের কষ্টের শিকার হন, তাহলে সেই বিষয়টি শোনার জন্য আজকের এই গণশুনানি। গণশুনানিতে আজকে যদি কোনো কর্মকর্তা প্রশ্নের সুদত্তর দিতে না পারেন, তাহলে এই অভিযোগ সরাসরি দুদকের যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে কমিটির সামনে উপস্থাপন করা হবে। এরপর তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও মামলাও হতে পারে।
চট্টগ্রামের সকল সরকারি অফিস নিয়ে গণশুনানির আয়োজন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এতে নগরের ২২টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৪৮টি অভিযোগ জমা পড়ে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) বিরুদ্ধে ৭টি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বিরুদ্ধে ৫টি, বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের বিরুদ্ধে ৪টি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বিরুদ্ধে ৪টি, আগ্রাবাদ ভূমি অফিসের বিরুদ্ধে ৩টি, এল এ শাখার বিরুদ্ধে ৩টি, রেলওয়ের বিরুদ্ধে ২টি, বিআরটিএ’র বিরুদ্ধে ২টি, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে ২টি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ২টি, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের বিরুদ্ধে ১টি, চট্টগ্রাম ওয়াসার বিরুদ্ধে ২টি, বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের বিরুদ্ধে ২টি, কেজিডিসিএলের বিরুদ্ধে ১টি, খাদ্য অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে ১টি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে ১টি, বিআরটিসির বিরুদ্ধে ১টি, বিটিসিএলের বিরুদ্ধে ১টি, যমুনা ওয়েল কোম্পানির বিরুদ্ধে ১টি, সড়ক ও জনপথের বিরুদ্ধে ১টি, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ১টি ও জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের বিরুদ্ধে ১টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে ৩৫টিরও বেশি অভিযোগের শুনানি হয় এবং বাকিগুলোর অভিযোগকারীরা অনুপস্থিত থাকায় শুনানি হয়নি।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন, পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়সহ চট্টগ্রাম দুদকের বিভাগীয় পরিচালকসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।