চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ‘নাপোড়া শেখেরখীল উচ্চ বিদ্যালয়’-এ শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সকালে স্কুল চালাকালীন এ্যাসেম্বলির সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দ্যেশ্যে মাইকিং করে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ‘মোবাইল বাদ দিয়ে বই ধরুন, মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করুন’ এ স্লোগান নিয়ে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এর পূর্বে ২ থেকে ৩ মাস ধরে প্রতি শ্রেণিকক্ষে আলাদাভাবে শ্রেণি শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের নানা ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হয়। মোবাইল ফোন ব্যবহার না করার জন্য উদ্ধুদ্ধ করা হয়। এ্যসেম্বলির সময় শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ব্যবহার বন্ধ ঘোষণার পরপরই উপস্থিত শিক্ষার্থীরা হাততালি দিয়ে ধন্যবাদ জানান এবং এ সিদ্ধান্তে একাত্মতা পোষণ করেন।
এ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক কাইছার উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীদের মুল্যবোধ ও ছাত্রত্ব দিন দিন অবনতি হচ্ছে। স্কুল থেকে যদি বাচ্চারা এসব ম্যানার তারা না পায় তবে ভবিষ্যতে তারা সমাজের জন্য কলঙ্ক বয়ে আনবে। তাছাড়া পরিক্ষার ফলাফল নিয়ে নাপোড়া-শেখেরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি সুনাম আছে। আমরা তা অব্যাহত রাখতে নিয়মিত বাচ্চাদের কাউন্সিলিং করি। মোটিভেশনাল স্পিস দিই। অভিভাবকদের সাথে পরামর্শ সভা করি। আমাদের শেষ যেটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা মোবাইল ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছি। আশাকরি, আমরা ভালো একটি জাতি গঠনে এই ধরণের উদ্যোগ নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারব।’
এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জাহাঙ্গির আলম জানান, ‘মফস্বল এলাকার অধিকাংশ শিক্ষার্থী মোবাইল ফোনের সঠিক ব্যবহার করছে না। খোদ তারা শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। এতে নানা অপ্রীতিকর অবস্থার আশংকা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা মোবাইলের অপব্যবহার করে মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। এতে পড়ালেখার সঠিক পরিবেশ যেমন বজায় থাকছে না তেমনি পড়ালেখার প্রতি মনযোগ হারাচ্ছে দিন দিন।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা যেন ভুলতে বসেছে বর্তমান প্রজন্ম। তাই কিছুদিন পরপর শোনা যাচ্ছে শিক্ষার্থীর হাতে শিক্ষক লাঞ্ছনার খবর। আর শিক্ষার্থীদের এমন অবক্ষয়ের জন্য দায়ী পরিবার ও অনিয়ন্ত্রিত মোবাইল ফোন। মোবাইলের প্রতি আসক্তি শিশুদের সামাজিক দক্ষতা নষ্ট করছে। ফলে তৈরি হচ্ছে শিশুদের নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা। শিশুদের পারিবারিক ও মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। তাই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের এ থেকে দূরে রাখতে হবে। মূলত লেখাপড়ার প্রতি মনযোগ সৃষ্টি ও মানোন্নয়নের জন্য আমাদের এ পদক্ষেপ।’
এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাথে ও সচেতন অভিভাবকদের সাথে বসে মতবিনিময় করেছি। তারা এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে এবং সাধুবাদ জানিয়েছে। তাছাড়া ২ থেকে ৩ মাস আগে শ্রেণিকক্ষে এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা হয়েছে। আজ এ্যাসেম্বলিতে চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়েছি। আগামী শনিবার অভিভাবকদের সাথে নিয়ে অভিভাবক সমাবেশ করবো। এতে তাদেরকে সচেতন করা হবে। বাচ্চাদের বাঁচাতে হবে। আমরা চাই বাচ্চারা মোবাইল বাদ দিয়ে বই ধরুক। আমি মনে করি বাঁশখালীর প্রত্যেক স্কুলে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ করলে আমরা অভিভাবকরাই উপকৃত হবো।’
উল্লেখ্য, বাঁশখালীর দক্ষিণ জনপদের ‘নাপোড়া-শেখেরখীল উচ্চ বিদ্যালয়’ বরাবরের মতো ২০২০ সালে রেজাল্টে উপজেলা প্রথম, বিজ্ঞান মেলায় বাঁশখালীতে প্রথম, সার্বিক শৃঙ্খলা,পড়ালেখার দিক দিয়ে প্রথম হলেও শিক্ষার্থী অনুপাতে আমাদের দালান নাই, ডিজিটাল ল্যাব নাই। স্কুলের অর্থায়নে কিছু শ্রেণি কক্ষ বাড়ালেও প্রায় ২ হাজার ৫ শত জন শিক্ষার্থী অনুপাতে শ্রেণি কক্ষ খুবই কম। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে হয় আমাদের। যদি সরকার বা উর্ধতন কারো অবকাঠামোগত সহায়তা পাই তাহলে বাঁশখালীর শ্রেষ্ট স্কুল হিসেবে উপহার দেয়ার কথা নিশ্চিত করেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
জানা যায়, ২০১৭ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) থেকে শ্রেণীকক্ষে কোন শিক্ষার্থী বা শিক্ষক মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে না বলে একটি পরিপত্র জারি করা হয়। তৎকালীন মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষক-শিক্ষার্থী মোবাইল ফোন নিয়ে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করছেন বা শ্রেণীকক্ষে মোবাইল ফোনে কথা বলছেন, এতে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান ও পাঠ্যগ্রহণ ব্যহত হচ্ছে।