ঝুঁকিমুক্ত না হলেও প্রস্তুতি ঘাটতি নেই চামড়া ব্যবসায়ীদের

কোরবানির ঈদে দেশে একদিনে সবচেয়ে বেশি চামড়া সংগ্রহ করতে পারেন ব্যবসায়ীরা। তবে বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে দুশ্চিন্তায় তারা। ফলে এবার যারা চামড়া কিনবেন তাদেরকে ঝুঁকি নিয়েই ব্যবসায় নামতে হবে। তবুও মৌসুমকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিয়েছেন পাইকাররা।

গত বছরের তুলনায় একটু বেশি দামে চামড়া কিনতে হবে কিনা, তা এখনও জানেন না মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এখন পর্যন্ত আড়ত থেকে বা পোস্তার ব্যবসায়ীরা তাদের চামড়া সংগ্রহ করা নিয়ে কোনও নির্দেশনা বা দর ঠিক করে দেননি।

রাজধানীর মানিকনগর, গোপীবাগ ও রাজধানীর বাইরের পাবনা-সিরাজগঞ্জ এলাকার মৌসুমি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তারা কোরবানির পশুর চামড়া কিনবেন। কিন্তু সেটা বিক্রি করতে পারবেন কিনা তা নিশ্চিত নন। এখন গরমের সাথে বৃষ্টিরও আশঙ্কা রয়েছে। চামড়া নষ্ট হতে পারে দ্রুত। তারপরও কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়েছে পুরান ঢাকা লালবাগের পোস্তার প্রায় ১০০টি আড়ত। তাদের পাশাপাশি পাইকার ও ছোট আড়তদাররা চামড়া সংরক্ষণের প্রস্তুতি নিয়েছেন।সরকারও এদিকে গতবারের চেয়ে চামড়ার দাম বাড়িয়েছে। এবার লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দর প্রতি বর্গফুটে ৭ টাকা আর খাসির চামড়ার দাম ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান বলেন, আমরা আশা করছি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে এবার চামড়ার ভালো ব্যবসা হবে। পোস্তা প্রস্তুত আছে। সবাই নিজেদের আড়তের ঘরগুলো পরিষ্কার করে রেখেছেন।

মৌসুমি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব চামড়া লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। এতে ভালো দাম পাওয়া যাবে। পশু জবাইয়ের চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

টিপু সুলতান বলেন, এখন পর্যন্ত লবণের সরবরাহ ঠিক আছে। তবে, সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা হলো লবণের দামটা যেন কমিয়ে আনা হয়।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আফতাব খান বলেন, আমরা এবার পোস্তা এলাকায় সবাইকে চামড়া না এনে নিজ নিজ এলাকায় লবণজাত করার পরামর্শ দিচ্ছি। সাভার, হেমায়েতপুর, আমিনবাজার, বেড়িবাঁধ, কেরানীগঞ্জ, জিঞ্জিরা, টঙ্গী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁ, মুন্সীগঞ্জসহ ঢাকার আশপাশের বেশ কিছু এলাকায় লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যানুসারে, এ বছর গরু, ছাগল, ভেড়া ও উট মিলিয়ে ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। গত বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি। এরমধ্যে কোরবানি হয় ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি পশুর।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এরমধ্যে ৬৪.৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১.৮২ শতাংশ ছাগলের, ২.২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১.২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া।

গত অর্থবছরে (২০২১-২২) চামড়া খাতে রফতানি ছিল ১২৫ কোটি মার্কিন ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০৩ কোটি ডলার। রফতানির এ প্রবৃদ্ধি তার আগের বছরের তুলনায় ৩২ দশমিক ২৩ শতাংশ। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধি এমন হবে।

আরও পড়ুন