চিকিৎসায় সারে শ্বেতী রোগ, তবে যত দেরি তত ক্ষতি

শ্বেতী বা ধবল রোগ ও শ্বেতী রোগী নিয়ে মানুষের মনে অন্য রকম আতঙ্ক কাজ করে। এ রোগ নিজে যতটা না বিপদের তার চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর হয় আসলে সামাজিক কারণে। যার জন্য এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ভুগতে হয় মানসিক অবসাদে।

শ্বেতী কোনো ছোঁয়াচে বা অভিশপ্ত রোগ নয়। যথাযথ চিকিৎসা নিলে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরও ভালো থাকা যায়।

শ্বেতী রোগ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে জানার আগে জানতে হবে শ্বেতী রোগ আসলে কী। এ রোগকে ইংরেজিতে বলা হয় লিউকোডারমা বা ভিটিলিগো। ত্বকের মধ্যে মেলানোসাইট কোষে থাকে মেলানিন, যা ত্বকের স্বাভাবিক রঙের ভারসাম্য রক্ষা করে। মেলানিনের ক্রিয়াকলাপে বাধা সৃষ্টি হলে বা ভারসাম্য নষ্ট হলে দেখা দেয় শ্বেতী। শ্বেতী বা ধবল বংশগত কারণে হতে পারে। প্রতি ১০০ জন শ্বেতী রোগীর মধ্যে ৩০ জনের ক্ষেত্রেই শ্বেতী হয় বংশগত ধারায়। বাকি ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে শ্বেতী সাদা দাগ ছড়াতে থাকে নিজস্ব কারণে, যার মূলে রয়েছে মেলানিনের বিষয়টি।

এটা আসলে এক ধরনের ‘অটো ইমিউন ডিজিজ।’ শরীরের ‘ইমিউন সিস্টেম’ বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কোনো এক অজ্ঞাত কারণে নিজের শরীরের বিভিন্ন কোষ ও কলাকে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করে এ রোগে।

চিকিৎসা কী
শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির উপায় বা চিকিৎসার ক্ষেত্রে শ্বেতীকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয় সেগমেন্টাল ও নন সেগমেন্টাল। নন সেগমেন্টাল শ্বেতী কখনও দ্রুততার সাথে আবার কখনও ধীরে ধীরে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। ত্বকের একাধিক স্থানে বিস্তৃত সেগমেন্টাল শ্বেতীর বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেলে এবং এক বছর আর না বাড়লে পুরনো শ্বেতীর জন্য চিকিৎসা শুরু করা হয়।

ছোট আকৃতির ও সীমিত শ্বেতী মলম বা ওষুধেই সেরে যায়। মলম লাগানো বা ওষুধ সেবনের পাশাপাশি সকালবেলার রোদ লাগাতে হয় শ্বেতী আক্রান্ত স্থানে।
বড় আকারের শ্বেতী হলে মলম আর ওষুধে কাজ হতে প্রায় দুই বছর লাগতে পারে। ওষুধে কাজ না হলে অস্ত্রোপচার। শ্বেতী চিকিৎসায় যে অস্ত্রোপচার করা হয়, তার নাম পাঞ্চ গ্রাফটিং। যে ধরনের শ্বেতী বছর দুয়েক মোটামুটি একই জায়গায় অবস্থান করে, সেই শ্বেতী সারিয়ে তুলতে পারে এই পাঞ্চ গ্রাফটিং।

যত দ্রুত শ্বেতী রোগের চিকিৎসা শুরু করা যাবে তত ভালো ফল পাওয়া যাবে। এ কারণে শ্বেতী রোগ যখনই সন্দেহ হবে, সাথে সাথে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে খুব সহজে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এ রোগের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে সেটা মাথায় নিয়েই এর চিকিৎসা করতে হবে।

বি. দ্র. : এ লেখাতে শ্বেতী রোগ সম্পর্কে কেবল প্রাথমিক একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে। বিস্তারিত জানতে, বুঝতে ও প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।