প্রজেক্টের ত্রুটির কারণে দেড় বছরেরও বেশী সময় ধরে লালবাগ কেল্লার সাউন্ড সিস্টেম প্রদর্শনী বন্ধ রয়েছে। যার ফলে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারছে না মোগল শাসকদের স্থাপত্য নিদর্শন ঐতিহ্যবাহী লালবাগ কেল্লা। দেড় দশকের বেশী সময় ধরে ঝর্ণার ফোয়ারাগুলো অচল। আমেরিকার অর্থায়নে কেল্লার হাম্মামখানার সংষ্কার করার পর গত সপ্তাহ থেকে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে ঢাকা শহরের প্রথম দোতলা ভবন কেল্লার মিউজিয়ামটি। কেল্লায় আসা দর্শনার্থীদের জন্য ভেতরে নেই কোন সেড বা ছাউনি। যার ফলে ঝড়বৃষ্টি হলেই দর্শনার্থীদের ভোগান্তিতে পরতে হয়।বিকেলে শুধুমাত্র লালবাগ চৌরাস্তার দিকের একটি গেট খুলে দেয়ার কারনে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট। বিশেষ করে কেল্লার প্রবেশ গেটির পাশে দর্শনার্থীদের রাখা গাড়ি পার্কিং স্থানে ফিরে আসতে চরম ভোগান্তিতে পরতে হয়।নানা সমস্যা নিয়েই শনিবার পালিত হচ্ছে বিশ্বযাদুঘর দিবস।জানা গেছে,এরই মধ্য কেল্লার সংষ্কার ও ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে প্রিন্স করিম আগা খান ট্রাস্ট ফর কালচার কর্তৃপক্ষ লালবাগ কেল্লা সংষ্কার করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিশ্ব যাদুঘর দিবস পালন উপলক্ষে শনিবার সকাল ৯টায় লালবাগ কেল্লার গেট থেকে একটি বনার্ঢ্য র্যালী বের করা হয়।এবারের প্রতিপাদ্য শিক্ষা ও গবেষণার জন্য যাদুঘর।
লালবাগ কেল্লার দায়িত্বরত কাষ্টোডিয়ান মোঃমুখলেছুর রহমান ভূঁইয়া বললেন,আমি দায়িত্ব নেয়ার পরই মাননীয় সাংস্কৃতিক মন্ত্রী মহোদয়ের সহযোগিতা ও আন্তরিকতায় এরই মধ্যে লালবাগ কেল্লাকে অন্ধকার মুক্ত করে আলোকিত করেছি। আগে রাতে লালবাগ কেল্লা থাকতো ঘুটঘুটে অন্ধকার। এখন কেল্লার স্থাপিত্য গুলোকে আলোর সাহায্য দৃষ্টিনন্দন করার পদক্ষেপ নিয়েছি।যার ফলে এখন রাতের বেলাও কেল্লার সৌন্দর্য আশপাশের উচু ভবন এমনকি বিমান থেকেও যাত্রীরা কেল্লার রাতের সৌন্দর্য দেখতে পায়। কেল্লার সাউন্ড সিস্টেম প্রদর্শনী বন্ধের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে আমাদের আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গেই আমাদের হাটতে হবে। কেল্লার সাউন্ড সিস্টেম বর্তমান প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই তা প্রদর্শন করা যাচ্ছে না। প্রজেক্টের ত্রুটির কারনেই তা হচ্ছে। তিনি বলেন, লালবাগ কেল্লা শুধু বাংলাদেশ তথা পুরান ঢাকারই ইতিহাস,ঐতিহ্য ও গৌরব নয়, বিশ্বেরও ঐতিহাসিক প্রত্নতত্ত্ব। তাই এর রক্ষনাবেক্ষণে শুধু সরকারের দু-চারজন কর্মকর্তা আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদিয়ে সম্ভব নয়। লালবাগ কেল্লার চারপাশের বাসিন্দা ও স্থানীয় জনগনকেও এই ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ রক্ষায় সচেতন ও সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে। কারন স্থানীয় এলাকাবাসীকে মনে রাখতে হবে লালবাগ কেল্লা তাদেরই গৌরব ও ঐতিহ্যময় ইতিহাস। তাই এই দূর্গের সৌন্দর্য রক্ষার মূল দায়িত্ব তাদেরই পালন করতে হবে। মোঃ মুখলেছুর রহমান বলেন, এরই মধ্যে আমেরিকার অর্থায়নে ঝুকিপূর্ণ কেল্লার হাম্মামখানার সংষ্কার করে মিউজিয়ামটি চালু করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করে প্রিন্সকরিম আগা খান ট্রাস্ট ফর কালচার লালবাগ কেল্লার সংষ্কার তাদের অর্থায়ন করে দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের অর্থ সংকট থাকায় ইচ্ছা থাকা সত্বেও লালবাগ কেল্লাকে স্থানীয় ও বিশ্ব পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করার পদক্ষেপ নিতে পারছি না।তিনি বলেন, কেল্লার ভেতরে দর্শনার্থীদের জন্য কোন ছাউনি বা সেড নির্মাণ ইচ্ছা থাকলেও করা যায় না। কারন প্রত্নতত্ত্ব আইনের কারনে তা বাধা হয়ে দাড়ায়। তাই স্থাপত্যের সৌন্দর্য বহাল রেখেই ছাউনি বা সেড নির্মাণে বিশেষজ্ঞের পরামর্শেই করতে হবে। বিষয়টি আমাদের ভাবনায় রয়েছে। তিনি বলেন, কেল্লার ভেতরের পুকুরটিতে এখন প্রাকৃতিক পানিতে পরিপূর্ণ হওয়ার আর সম্ভাবনা নাই। কারন পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় খনন করেও পানি পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই।তাই বিকল্প পথে পানি সংরক্ষণ করে পুকুরের সৌন্দর্য রক্ষা ও দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
বিকেলে কেল্লার কাঠের গেট খ্যাত উত্তর দিকের একটি গেট খুলে দেয়ায় লালবাগ চৌরাস্তায় ভয়াবহ যানজট তৈরী প্রসঙ্গে তিনি,বলেন,মাঝের প্রবেশ গেটটি শেষ সময়ে খুলে দিলে মুখচেনা স্থানীয়দের অনেকেই প্রবেশের চেষ্টা করেন এতে বিশৃঙ্খলা তৈরী হয়।তবে পার্কিং এ গাড়ি রাখা দর্শনার্থীদের সমস্যাটির বিষয়ে তিনি বলেন আমরা সাড়ে চারটা অর্থাৎ বন্ধের আধঘন্টা আগপর্যন্ত এই প্রধান গেট দিয়ে দর্শনার্থীদের বাহির হওয়ার সুযোগ দিচ্ছি।যাতে পার্কিং গাড়ি রাখা দর্শনার্থীরা যানজট এড়িয়ে তাদের গাড়িতে পৌছাতে পারেন।মিঃ রহমান বললেন,পুরান ঢাকার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও পুরাকীর্তি সংরক্ষণে ঢাকা দঃসিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস যথেষ্ট আন্তরিক।