দেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে আগামী ১০ জুলাই। ঈদ সামনে রেখে রাজধানীতে দুটি স্থায়ীসহ মোট ২০টি পশুর হাট বসছে। যেখানে চাঁদ রাত পর্যন্ত চলবে কোরবানির পশু বিক্রি। অন্যদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে বিপণীবিতানগুলোতে এবং বাস, লঞ্চ ও ট্রেন টার্মিনালেও বাড়ছে মানুষের ভিড়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিপণীবিতানে মানুষের আনাগোনা বেড়েছে, যা অব্যাহত থাকবে চাঁদরাত পর্যন্ত। ফলে পশুর হাট, বিভিন্ন টার্মিনাল ও বিপণিবিতানগুলোকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে আগামী কয়েকদিনে বাড়বে গাড়ির চাপ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঈদ উদযাপনের বাকি আর এক সপ্তাহ। ফলে এখন থেকেই রাজধানীতে গাড়ির চাপ বাড়তে শুরু করেছে। তবে এখন পর্যন্ত সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। তবে কোরবানির হাটগুলোতে বেচাকেনা পুরোপুরি শুরু হলে যানজট আরও বাড়বে।
রোববার (৩ জুন) সকাল থেকে রাজধানীতে গাড়ির চাপ বাড়তে দেখা গেছে। একদিকে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস। অন্যদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে রাস্তায় মানুষের উপস্থিত বেড়ে যাওয়ায় এই চাপ দেখা দিয়েছে।
রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, রাজারবাগ, মতিঝিল ও যাত্রাবাড়ী এলাকার সড়কে যানজট দেখা গেছে। অফিস টাইমে এসব সড়কে ঘণ্টার বেশি সময় ধরে মানুষকে যানজটে বসে থাকতে হয়েছে বিভিন্ন যানবাহনে। তবে এর মধ্যে মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে যাত্রাবাড়ীর হানিফ ফ্লাইওভারে। সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ৮টা থেকে হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে ও ওপরে যানবাহনের জটলার সৃষ্টি হয়। যা দুপুর পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এর ফলে অফিসগামী মানুষকে পড়তে হয়ে চরম বিপাকে। দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে থাকার পর অনেককে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতেও দেখা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর হানিফ ফ্লাইওভারে গাড়ির চাপ বেড়েছে মাওয়াগামী যানবাহনের কারণে। ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসবে ততই যানজট বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
হানিফ ফ্লাইওভারের ওপরে বাসে যানজটে আটকে থাকা যাত্রী ইমরান হোসেন বলেন, এখন প্রতিনিয়ত ফ্লাইওভারের ওপরে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফ্লাইওভারে আটকে গেলে হেঁটেও পার হওয়া যায় না। তাই যানজট শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফ্লাইওভারেই বসে থাকতে হয়।
রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটগুলোতে এখনও সেই অর্থে কেনাবেচা শুরু হয়নি। তবে হাটে কিছু ক্রেতা আসছেন এবং কোরবানির পশু দেখে চলে যাচ্ছেন। তবে রাজধানীর কোরবানি হাটে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ট্রাকে করে পশু আসা শুরু করেছে। ফলে হাট এলাকাগুলোতে কিছুটা যানজট সৃষ্টি হলেও তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে।
এ বিষয়ে হাট সংশ্লিষ্ট এলাকায় দায়িত্ব ট্রাফিক সার্জেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন অল্প ট্রাক আসছে কোরবানি পশু নিয়ে। তাই হালকা যানজট হলেও তা দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া হাটে ক্রেতাদের উপস্থিতিও নেই বললেই চলে। তাই এখন পর্যন্ত যানজট পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
তবে ২-৩ দিন পর হাটকেন্দ্রিক এলাকাগুলোতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ২-৩ দিন পর হাটে পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হবে। এছাড়া প্রতিদিন হাটে ট্রাকে ট্রাকে পশু আসতে থাকবে। অন্যদিকে হাটে বাড়বে ক্রেতাদের উপস্থিতিও। ফলে সবমিলিয়ে বিগত বছরগুলোর মতোই দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হবে।
ঈদকেন্দ্রিক যানজট নিয়ে যাত্রাবাড়ী থেকে উত্তরাগামী রাইদা পরিবহনের বাসের চালক মো. সেলিম বলেন, আর দুয়েক দিন কিছুটা শান্তিতে গাড়ি চালাতে পারব। কোরবানির হাট শুরু হলে রামপুরা থেকে কুড়িল পর্যন্ত তিনটি হাট বসবে। আফতাবনগর হাট, সাঈদ নগর হাট ও ৩০০ ফিট কোরবানির পশুর হাটের কারণে রামপুরা থেকে কুড়িল পর্যন্ত রাস্তায় তীব্র যানজট থাকবে। যা ঈদের আগের দিন রাত পর্যন্ত চলবে। তবে এসময় যানজট থাকলেও মনে আনন্দ থাকে। কারণ সবাই কোরবানির গরু-ছাগল নিয়ে যায় রাস্তা দিয়ে, তা দেখতে ভালো লাগে।
যানজট পরিস্থিতি নিয়ে ডিএমপির ট্রাফিক গুলশান বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. ইমরান হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত যানজট স্বাভাবিক রয়েছে এ এলাকায়। এখনও কোরবানির ঈদকেন্দ্রিক যানজট শুরু হয়নি রাস্তায়। আরও কয়েকদিন পর রাস্তায় গাড়ির চাপ বাড়বে যখন কোরবানির পশুর হাটগুলো পুরোদমে চালু হবে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আমরা সবসময় সচেষ্ট রয়েছি।