কক্সবাজার আদালত সেল : তিন’শ টাকার ভাত দিতে ৫’শ টাকা ঘুষ!
কক্সবাজার আদালত সেলে চলছে কোট পুলিশের নিরব চাঁদাবাজি। এ চাঁদাবাজির কারণে তাদের কাছে জেলার সাধারণ মানুষ জীম্মি হয়ে পড়েছে। কোন মানুষ কোর্ট হাজতে আসামী বা আত্মীয়-স্বজনকে দেখতে গেলেই দায়িত্বরত পুলিশকে দিতে হয় বিভিন্ন কায়দায় টাকা। টাকা না দিলে পায়ে ধরলেও ভিতরে যাওয়া যায় না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কক্সবাজার কারাগার থেকে নিয়মিত হাজিরা বা জামিনের জন্য অর্ধশতাধিক হাজতিকে কোর্ট সেলে আনেন। এরপর কক্সবাজারের কোর্টসেল পরিণত হয় চিড়িয়াখানায়। চিড়িয়াখানার মত টাকার বিনিময়ে টিকিট কাটিয়ে সাক্ষাত করতে হয়। কোর্ট সেলে বন্দীদের সাথে দেখা ও কথা বলা এবং ভাত-নাস্তা দিতে বন্দী স্বজনদের গুণতে হয় নগদ টাকা। এই কোর্টসেল দিন দিন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হচ্ছে।
সুত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে আজ আদালতে আনা হয় ৪৩ জন বন্দীকে। এছাড়া আত্মসমর্পণ করা এবং বিভিন্ন উপজেলা থেকে নতুন আসামী আনা হয় ২৮-২৯ জন। সেই হিসেবে আজ কোর্ট সেলে মোট আসামী দাঁড়ালো ৭০-৮০ জন।
কোর্ট সেলে হাজতিদের সাথে দেখা করতে আসা কয়েকজন স্বজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, কারাগারে যেহেতু বন্দীদের সাথে দেখা বা কথা বলা তেমন যায় না। সেহেতু কোর্ট সেলে আত্মীয়-স্বজনরা একনজরে দেখতে আসে। এতে গুণতে হয় নগদ টাকা। কোর্ট সেলে টাকা ছাড়া চলে না। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাজতির স্বজনদের থেকে তারা হাতিয়ে নেয়। টাকার অর্ধেক ভাগ পায় কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক ও বাকী টাকা পায় কোর্টসেলের দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা।
হাজতি রানার মা খালেদা আকতার জানায়, ছেলেকে এক নজর দেখতে আসলাম। দেখতে ৫’শ টাকা দাবী করে। তবে ৩’শ টাকা দিয়ে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে আসলাম। খুরশীদ নামে একজন পুলিশ আমার কাছ থেকে ওই টাকা নেন।
হাজতি আব্দু সালামের অভিভাবক আমির হোসেন রুবেল জানান, সাক্ষাৎ করতে তিনজন এক সাথে কোটসেলে ঢুকতে ১ হাজার ৫’শ টাকা দাবী করেন। কোনমতে ১ হাজার টাকা দিয়ে সাক্ষাৎ ও কথা বললাম। ২মিনিটও কথা বলতে দেয়নি, বের করে দিল পুলিশ সদস্যরা।
হাজতির শাহাদাতের অভিভাবক হামিদ বলেন, এক প্যাকেট ভাত ও একটি পানির বোতল ( দাম ২১০ টাকা) দিতে গুনতে হলো ৫’শ টাকা। পুলিশের একটি রুমে নিয়ে খুরশীদ নামের ওই পুলিশ টাকা নিলো।
বন্দীদের কয়েকজন স্বজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, টাকা ছাড়া কোর্ট সেলে দেখা করার কোন সুযোগ নেই। এমনকি এটিএসআই খুরশেদ নামের পুলিশের ব্যবহারও অনেক খারাপ। টাকা দিলে বন্ধুর মতো আচরণ করে, আর না দিলে কুকুরের মতো আচরণ করে মানুষ তাড়ায়। এসব ঘুষখোর পুলিশকে আইনের আওতায় আনা দরকার। বন্দীদের সমস্যা হবে ভেবে, কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস করে না বলে দাবী স্বজনদের।
গত ২৯ মার্চ কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক সারওয়ার আলম যোগদানের পর থেকে কোর্ট সেলে সবকিছুতে একটি নির্দিষ্ট রেট হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক সারওয়ার আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কোর্ট সেলের কোন বিষয়ে আমার বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই। আপনি প্রয়োজন মনে করলে এএসপি স্যার থেকে বক্তব্য নিতে পারেন।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম জানান, কোর্টসেলে বন্দীদের স্বজন থেকে টাকা নেওয়ার কোন বিধান নেই। সরকারী বরাদ্দ থেকে আসামিদের জন্য টাকা খরচ করা হয়। টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমার নজরে এখনও আসেনি। তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন, টাকা নেওয়ার অভিযোগ প্রমানিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।