নিজস্ব প্রতিবেদক :: বাঙ্গালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন মাতৃভাষার স্বীকৃতি। রফিক, সালাম, বরকতসহ লাখো ভাষা শহীদের আত্মদানে রঞ্জিত বর্ণমালা বাংলাদেশের পরিচয় বহনকরে বিশ্বদরবারে। বিশ্বে একমাত্র আমাদেরই রয়েছে ভাষার জন্য লড়াইয়ের সতন্ত্র ইতিহাস।
রহমান সাহেব। যিনি নিজের চোখেই দেখছেন অগ্নিঝরা সেই দিনটিতে ভাষার অধিকার আদায়ে বাংলার দামাল ছেলেদের বুলেটের সামনে বুক পেতে দিতে। দেখেছেন ভাষা শহীদদের তাজা রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হতে। সেই থেকে যেন বাংলাই হয়েছে রহমান সাহেবের আর রহমান সাহেব বাংলার। সেদিনের সেই কিশোর রহমান আজ বয়সের ভারে জীবনের শেষ প্রান্তে, তবু জীবনে একটি বারের জন্য অন্যভাষা মুখে উচ্চারণ পর্যন্ত করেননি তিনি।
কিন্তু বিধিবাম। রহমান সাহেবের একমাত্র সন্তান বর্ণ। যার চলনে বলনে পুরো আধুনিকতার ছাপ। কথায় কথায় পশ্চিমা ইংরেজি শব্দের উচ্চারণ আর ভিনদেশী হিন্দি গানের সুরে অদ্ভুত দেহভঙ্গিমা। যা একজন মনে প্রাণে বাঙালি পিতার আক্ষেপ তার সন্তানকে সত্যিকারের বাঙালি হিসেবে গড়ে তুলতে না পারার।
কথায় কথায় ইংরেজি বলা আর হিন্দি গানের গহ্বরে নিজের সত্ত্বাকে ভুলে গেছে বর্ণ। আর এ নিয়ে সৃষ্টি হয় পিতা- পুত্রের মধ্যে স্নায়ু যুদ্ধ, বাড়ে কঠিণ এক দূরত্ব। প্রতিনিয়ত নিজের মন আর বিবেকের সাথে যুদ্ধ করতে করতে জীবন সায়াহ্নে এসে নিজের আদর্শের কাছে নিজেই যেন হেরে যেতে বসেছে রহমান সাহেব।
তারই আকুলতা আর দীর্ঘশ্বাসের আক্ষেপে আজন্মকাল হৃদয়ে বাংলাভাষাকে লালন করে আসা এক পিতার কন্ঠে উচ্চারিত হয় হতাশার সুর ” আমার একমাত্র সন্তান বর্ণ কেন বুঝতে চায়না বাংলা আমার মা, বাংলা আমার সবুজ শস্য ক্ষেতে হলুদ ফুল, বসন্তে কোকিলের গান। কে জাগাবে তার বিবেককে”।
তারপর একদিন গভীর ঘুমের কোলে এক স্বপ্নে অবশেষে বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড়ায় বর্ণ। এখানে বিচারকের ভূমিকায় আবর্তিত হয় ভাষাশহীদ রফিক -সালাম-বরকতের ছায়ামূর্তি। বর্ণের অন্তচক্ষুতে আলোর সঞ্চার ঘটে। সে ওঠে দাঁড়ায়। পিতার কবিতার বইটিকে বুকে আঁকড়ে ধরে। বর্ণের কন্ঠে ধ্বনিত হয়, সত্যি কি আমি ভুল পথ ধরে হাঁটছি? সত্যি কি আমার বিবেক বুদ্ধি লোপ পেয়েছে? তাঁরা যে বললো বারবার এই বাংলার বুকে আঘাত এসেছিল কিন্তু বাঙালি কখনও মাথা নত করেননি। হে ভাযা শহীদ তোমরা যে ত্যাগ স্বীকার করে আমার মাতৃভাষাকে ছিনিয়ে এনেছিলে, যেভাবে তোমাদের রক্তে রঞ্জিত বর্ণমালা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের জন্য উপহার দিয়ে গেলে। আজ আমরা তোমাদের ভুলে গেলাম। ভুলে গেলাম নিজের অস্তিত্বকে। বিদেশি ভাষার ডামাডোলে গা ভাসিয়ে দিয়ে আমি আমার মায়ের ভাষাকে অসম্মান করলাম? হে খোদা এ-তো লজ্জার। ঘৃণার। ছি ছি, আমি যে, নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না… “।
এভাবেই এগিয়ে চলে নাটকের পটভূমি। এগিয়ে চলে আগামী প্রজন্মের সাথে মাতৃভাষার সাঁকো তৈরি করে দেয়ার অনন্ত প্রয়াস।
আহমেদ কামাল আফতাব’র গল্প অবলম্বনে লালন দাশের রচনা ও পরিচালনায় বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে নির্মিত হয় মাতৃভাষা নিয়ে প্রথম ভিজুয়্যাল নাটক “ভাষা”। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বিন্দু মিডিয়া ও থিয়েটার স্লোগান’র যৌথ প্রয়োজনায় নির্মিত নাটকটিতে প্রধান সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বিন্দু মিডিয়া’র ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর কবি, গল্পকার ও সংবাদকর্মী সবুজ অরণ্য।
প্রতিভাবান তরুণ আলোকচিত্রী প্রান্ত শর্মা’র চিত্র সঞ্চালনায় নগরীর বিভিন্ন লোকেশনে চিত্রায়িত নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে টুটুল গাংগুলী, সুদাম দাশ, রাজিব চৌধুরী, সুমন দত্ত, রুবেল দাশ, আহমেদ কামাল আফতাব, সজীব দেব, তপতী মজুমদার, জলি দাশ, অধরা দাশ, মামুন খাঁন রাহী, রিয়াজ-উল-কবির এবং মাষ্টার আদিত্য ভদ্র অনুরাগ।
নাটকটি নির্মাণে পর্দার অন্তরালে থেকে সার্বিক সহযোগিতা করে গেছে বিন্দু মিডিয়া ক্রিয়েটিভ টিমের সদস্য আর.কে দেব, জাহিদুল আলম, অনন্যা অর্পিতা সহ থিয়েটার স্লোগান পরিবার’র সদস্যরা।
আসছে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে চলছে ৩০ মিনিট ব্যাপ্তির নাটকটির শেষাংশের সম্পাদনার কাজ। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের প্রত্যাশা ২১ ফেব্রুয়ারীর প্রথম প্রহরে নাটকটি তাদের ইউটিউব চ্যানেল বিন্দু মিডিয়ায় প্রচার করা সম্ভব হবে।
পরে