বানভাসীদের আশ্রয়কেন্দ্রে অনাকাংখিত ঈদ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বন্যার পানি এখনো কমেনি। পাহাড়ি ঢল ও ঘনঘন বৃষ্টিপাত হওয়ায় বন্যার পানি নামছেই না। আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন এখনো অবস্থান করছে। অনেকে গবাদি পশু বাইরে স্থানান্তর করে বিপাকে পড়েছেন। সংকট রয়েছে গোখাদ্যেরও।

এদিকে রাত পোহালেই রবিবার (১০ জুলাই) ঈদুল আজহা। বন্যার পানি সবকিছুর সঙ্গে নিয়ে গেছে ঈদ আনন্দও। গত বছর ঈদুল আজহার নামাজ মাঠে পড়ে আনন্দের সাথে উদযাপন করেছিল ১২ বছরের শিশু আয়ান। এবারের বন্যা তার অভিজ্ঞতা পুরোটাই বদলে দিয়েছে। জীবনে আশ্রয়কেন্দ্রে কখনো ঈদ উদযাপন করতে হবে তার কল্পনাতেই ছিল না। ভয়াবহ বন্যায় এখন তার পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। বন্যার কবলে পড়ে এভাবে শত শত পরিবার এখন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। তাদের ঈদ এবার আশ্রয়কেন্দ্রে কাটাতে হবে।

৫২ বছর বয়সী অনফর উল্লাহ জানান, আমার জীবনে কখনো এভাবে বন্যা দেখিনি। আর আশ্রয়কেন্দ্রে কখনো ঈদের সময় কাটেনি।

তিনি আরও জানান, ঈদগাহে নামাজ পড়বো, হাশি-খুশি ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করব এমনটা হলো না। এবার আমাদের বড়ই দুর্ভাগ্য।

উঁচু এলাকা থেকে হাওর এলাকায় বিয়ে হয়েছে রাবেয়া বেগমের। বাবার বাড়ি উঁচু এলাকায় হওয়ায় বন্যার অভিজ্ঞতা নেই তার। কয়েক বছর থেকেই স্বাভাবিকভাবে সন্তানদের নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করছিলেন। কিন্তু এবার তিনি আশ্রয়কেন্দ্রে ঈদের সময় কাটাতে হবে।

রাবেয়া বেগম জানান, বন্যার কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে এবার ঈদ কাটাতে হবে। টাকা-পয়সা এখন আর হতে অবশিষ্ট নেই। এখানে খুবই কষ্টে দিনযাপন করছি।

এভাবেই এখন আশ্রয়কেন্দ্রে শত শত পরিবার ঈদ উদযাপন করবে। এসব দরিদ্র পরিবারের ঘরে নেই সেমাই-ফিন্নির আয়োজন। শিশুরা তাদের মনের আনন্দে পাড়ায় ঘুরে বেড়ানোর সেই ঈদ এবার আর নেই। বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এসব আক্রান্ত মানুষ।

বন্যায় বেশি আক্রান্ত হয়েছে উপজেলার ভূকশিমইল ইউনিয়নের সব গ্রাম। পাশাপাশি কাদিপুর ইউনিয়ন ও কুলাউড়া পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার মানুষও বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়েছেন।

এসব এলাকায় নেই ঈদ আনন্দের ছোঁয়া। সব জায়গায় পানি থাকার কারণে এসব এলাকায় পশু কোরবানি করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বন্যা আসার পরেই দুর্গত মানুষের আয় বন্ধ হয়ে পড়েছে। এসব পরিবার এখন ত্রাণের দিকে চেয়ে আছে। অনেকে দুর্গত মানুষের জন্য ঈদ উপহার নিয়ে যাচ্ছেন। তবে তা আক্রান্ত মানুষের তুলনায় অনেক কম।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, বন্যাকবলিত এলাকায় ও আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষের মাঝে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজ (৯ জুলাই) বিকেলে ঈদের উপহার হিসেবে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হবে। ঈদের দিন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সকল মানুষের মাঝে গরুর মাংসও বিতরণ করা হবে। বন্যার্ত মানুষের পাশে সবসময় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন রয়েছে বলে জানান তিনি।

উৎস : দেশ রূপান্তর

আরও পড়ুন