ঝর্ণার রাণী হিসেবে খ্যাত মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝর্ণা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের খৈয়াছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পূর্ব দিকের পথ ধরে খৈয়াছড়া ঝর্ণার চির চেনা পথ অন্যদিনগুলোর তুলনায় কিছুটা ভিন্ন ছিল। ১০ ধাপের এই ঝর্ণায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকতো এই পথ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বের খৈয়াছড়া ঝর্ণার ৩ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ। যেটি খৈয়াছড়া ঝর্ণা রেল ক্রসিং নামে পরিচিত। এই পথে শুক্রবার দুপুর ১ টার দিকে মাইক্রোবাস-ট্রেন সংঘর্ষে ঝরে যায় ১১ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর প্রাণ। ঘটনার পর থেকে খৈয়াছড়া ঝর্ণায় কমেছে পর্যটক, যারা ঝর্ণা দেখতে এসেছেন তাদের মাঝে দেখা গেছে আতঙ্ক।
সরেজমিনে দেখা যায়, আগের মতো পর্যটক নেই চিরচেনা খৈয়াছড়া ঝর্নায়। নেই আগের সেই কোলাহল। পিচ ঢালা কালো পথ দিয়ে মাঝেমধ্যে দু’একটা মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা পর্যটক নিয়ে ঝর্ণার দিকে যাচ্ছে। তবে অন্যসব দিনের তুলনায় খুবই কম। কেউবা ঝর্ণা থেকে ফিরে আসছেন। যে লেভেল ক্রসিংয়ে শুক্রবার দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে লাইনে গাড়ি উঠার আগে ১-২ মিনিট অপেক্ষা করছে। অনেকটা ভয়ে ভয়ে পার হচ্ছে গাড়ি। কিছু গাড়ি রেল লাইনের পাশে এসে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। গেটম্যান ইশারা দিলে তারপর পার হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খৈয়াছড়া ঝর্ণা রেলক্রসিংয়ের গেটম্যান সাদ্দাম রেলের নিয়োগপ্রাপ্ত গেটম্যান নন। একটি প্রকল্পের আওতায় ক্যাজুয়াল কর্মচারী হিসেবে কন্ট্রাক্টর থেকে বেতন পেতো সে। খৈয়াছড়া ঝর্ণা রেল ক্রসিংয়ের সিগন্যাল সিস্টেম অকার্যকর। এখানে সিগন্যাল বাতি জ¦লে না, সিগন্যাল সিস্টেম অকেজো হয়ে রয়েছে। সাদ্দাম আটক হওয়ার পর থেকে সেখানে অস্থায়ী গেটম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সুভাষ চন্দ্র দাশ, রিপন দাশ ও নকুল দাশ। গেটম্যান সুভাষ চন্দ্র দাশ বলেন, রেলওয়ে ওয়েম্যান হিসেবে সীতাকুন্ডের বারৈয়াঢালা রেল স্টেশনে কর্মরত রয়েছি আমরা। শুক্রবার দুর্ঘটনার পর সাদ্দাম আটক হলে আমাদেরকে এখানে উিউটি করতে বলা হয়। আমরা অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালন করছি।
কথা হয় ঝর্ণা থেকে ফেরার পথে কুমিল্লা থেকে আসা একদল পর্যটকের সঙ্গে। তারা জানান, শুক্রবারের দুর্ঘটনার কথা আমরা শুনেছি। কিন্তু আমাদের ঝর্ণায় আসার সকল প্রস্তুতি ইতিপূর্বে নিয়ে নেওয়ায় আসতে বাধ্য হয়েছি। তবে মনের মধ্যে কিছুটা ভয়ও কাজ করছে।
ওই সড়কের নিয়মিত সিএনজিঅটোরিকশা চালক সেলিম উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন অনেক গাড়ি ঝর্ণার দিকে যায়। বিশেষ করে সরকারি ছুটির দিনগুলোতে সড়কে গাড়ির চাপ বেশি থাকে। গত শুক্রবারও উল্লেখযোগ্য পর্যটকের আগমন ঘটে। তবে দুর্ঘটনার পর আগের তুলনায় কমে গেছে গাড়ি, কমে গেছে পর্যটক। হয়তো মানুষের মধ্যে ভয় ঢুকে গেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ভোলা মিয়া বলেন, আজকে যেভাবে সতর্কতার সাথে রেলক্রসিং দিয়ে গাড়িগুলো পারাপার হচ্ছে এভাবে যদি শুক্রবার একটু খেয়াল করে রেললাইন পার হতো তাহলে এতো বড় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটতো না। এছাড়া ওই সময় গেটম্যান ঘটনাস্থলে ছিল না বলে জানান তিনি।