মেধার হ্রাস বৃদ্ধি

মোহাম্মদ ওমর ফারুক দেওয়ান ::
১. আমার স্কুল জীবনের ফার্স্ট বয় কলেজ জীবনে জেলার কলেজে পড়েছে, আমি সেকেন্ড বয় ঢাকা কলেজে পড়ে পরবর্তীতে তার থেকে উপরে উঠে যাই, থার্ড বয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আমি তার থেকে পেছনে, সেভেন্থ বয় ডাক্তার যা আমি চিন্তাও করতে পারি না।
২. ঢাকা কলেজ জীবনে একই বিভাগে একই হোস্টেলে একই ডালভাত খেয়ে ঢাবিতে একই সাবজেক্টে পড়লেও এক বন্ধু ঢাবির শিক্ষক, আমি চিন্তাও করিনি, আশা করা তো দূরের কথা।
৩. অনার্স এপিয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে বিসিএস দিলাম, হয়ে গেল। ভালো সাবজেক্টের অনেক বন্ধু প্রিলিতেই আউট। বন্ধুরা বড় বড় চোখে আমার দিকে তাকায়। প্রিলিতে আউট হওয়া বন্ধুদের কেউ কেউ পরবর্তীতে সামনের ক্যাডারে চাকরি পায়, আমি এখন তাদের স্যার ডাকি।
৪. দুইটা ফার্স্ট ডিভিশন, দুইটা সেকেন্ড ডিভিশন নিয়ে লেখা পড়া শেষ। আমার এক বন্ধু চারটি সেকেন্ড ডিভিশন হলেও পরবর্তীতে সে দেশবিদেশের এতো বিখ্যাত সব বই পড়েছে যে আমি সেসব বইয়ের নাম মুখস্থ করতে দুবছর লাগবে। এখন সে আমার স্যার।
৫. পিএটিসিতে অনেক বন্ধুকে দেখেছি ভালো করে প্যান্ট পরতে পারেনা, যখন শুনলো আমি বাচ্চা বয়সের বিসিএস, তখন বলে দিলো চাকরি করতে করতে তো হাঁপিয়ে উঠবিরে…। এখন সে আমার স্যার। আমাকে জ্ঞানী কথা শোনায়।
৬. বিসিএস এসোসিয়েশনে গেলে সবাই বলে তুই করে বলতে হবে। কিন্তু যখন পদোন্নতি নিয়ে, পদ তৈরি বা আপগ্রেডের কথা বলি তখন বলে ব্যক্তিগত বিষয় এখানে না। তারা বুঝতে চায় না যে, আমি তার পদে যেতে চাই না বা তার পদ দখল করতেও চাই না, শুধু আমার জায়গায় একটু মানসম্মান নিয়ে থাকতে চাই, কয়েকটি পদ আপগ্রেড করে দাও, কয়েকটি পদ তৈরি করে দাও। বাস্তবতা হলো পদ আপগ্রেড বা পদ তৈরি করতে পাঁচ বছরেও পারা যায় না। কিন্তু তাদের পদ লাগে না পদোন্নতি পেতে। উপসচিব পদে তাদের জন্য ৮০% কোটা।
আহা মেধাবীরা! প্রতিযোগিতা পরীক্ষা দিয়ে উপসচিব হতে চায় না। একক মেধাতালিকা দিয়েও না। আমার কাছে মনে হয় তথাকথিত মেধাবীদের কেউ কেউ প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে মেধাবী, কেউ কেউ ভাইভায় ঘুষ দিয়ে পাশ করা মেধাবী, কেউ মামা চাচা বা শশুরের কল্যাণে মেধাবী। তাই তারা দ্বিতীয়বার মেধার যাচাইয়ে নারাজ, নাখোশ।
মেধাবীরা প্রকল্প সংক্রান্ত সকল প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে কিন্তু প্রকল্প তৈরি করে দিতে হয় আমাদের। জনপ্রশাসন থেকে কোন কাজ যেমন পদ তৈরি, প্রমোশন, পদ আপগ্রেড, নতুন দপ্তর খোলা ইত্যাদি সকল কাজে দপ্তর থেকে হাজারটা কাগজ দিতে হয় যা জনপ্রশাসন জারি করেছে কিন্তু সে কাগজগুলো তাদের সংরক্ষণে থাকার কথা। তারা সে কাগজ নিজেরা তো সংরক্ষণ করেইনি, ভুল স্বীকার করে যে কাজটা করে দিবে তাও করে না।
কারো উপজেলা পর্যায়ের গাড়ি কিনতে টাকার অভাব পড়েনা কেউ বিভাগীয় পরিচালক হয়েও গাড়ি পায় না। কারো নবম গ্রেডের জন্য জেলা পর্যায়ে সরকারি বাসা কেউ পঞ্চম গ্রেডের হয়েও পায় না।
যাই হোক, মেধার ঘষামাজার তারতম্যের কারণে মেধা হ্রাস বৃদ্ধি পায় এটা চিরন্তন সত্য। তাই চাকরি জীবনের প্রতি দশ বছর অন্তর অন্তর পিএসসির মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ে মেধা তালিকা হালনাগাদ করে সে অনুযায়ী পদোন্নতি হোক। নতুবা একক মেধাতালিকায় একই সাথে পদোন্নতি হোক। সকলের সমসুযোগ বিরাজমান থাকুক, এটা প্রর্থনা।
আরেকটা কথা, নিতান্ত হীন স্বার্থ হাসিলের জন্য রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি করে নির্বাচনে অবৈধ কান্ডকারখানায় যুক্ত হয়ে কোন ক্যাডার ক্ষমতায় স্বৈরশাসককে বসিয়ে গনতন্ত্র নস্যাৎ করে অবৈধ সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করুক এটা মেধাবীদের কাজ হতে পারে না। এই তথাকথিত মেধাবীরা সহযোগিতা না করলে বিগত স্বৈরশাসক এতো বছর ক্ষমতায় থাকতে পারতো না।
প্রকৃত মেধায় উদ্ভাসিত হোক সমাজ, সরকার, দেশ, রাজনীতি, গণতন্ত্র এই প্রত্যাশা।

লেখক : মোহাম্মদ ওমর ফরুক দেওয়ান,  উপপ্রধান তথ্য অফিসার, তথ্য অধিদফতর।

আরও পড়ুন::

গণমাধ্যমের শক্তি ও পেশাদারিত্ব

সড়কে ঝরছে প্রাণ, প্রতিকার কী?

ভূমিকম্প সম্পর্কে আপনি কতটুকু সচেতন

ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার

জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সঙ্গতি রেখে শিশুদের অধিকার ও পরিবেশ উন্নয়নের আহবান

আমি বাজের মতই এক ক্রুদ্ধ গর্জন শুনেছিলাম—গো অন, চার্জ

গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা : বর্তমান প্রবণতা