চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) প্রাঙ্গণে চলমান বেপরোয়া মাদক সেবনের বিরুদ্ধে কথা বলায় চুয়েট সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে হেনস্থা এবং সাংগঠনিক সম্পাদককে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির উপ গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আইদিদ আলমের নেতৃত্বে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল এই হামলা করেছেন বলে জানান চুয়েটে কর্মরত সাংবাদিকরা।
চুয়েট শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে দিন দিন বেড়েছে মাদক সেবনের পরিমাণ। কিছু কিছু ছাত্র-ছাত্রী মাদকসেবন করে থাকে। মাদকসেবিরা খালি নিজেদের রুমে সেবন করেই বসে নেই। চট্টগ্রাম শহরগামী বাসগুলোতে জনসম্মুখে মাদকসেবন তাদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বারবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে লেখালেখি করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকরি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
মঙ্গলবার চুয়েট সাংবাদিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. গোলাম রব্বানী সাম্প্রতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান বেপরোয়া মাদক সেবনের বিরুদ্ধে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে লেখেন। তার লেখায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এর সদ্য বিলুপ্ত কমিটির উপ গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আইদিদের নেতৃত্বে প্রায় দশ জনের একটি দল গত বুধবার দুপুরে সমিতির সভাপতি জিওন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক সায়েদ চৌধুরীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্ত্বরে ডেকে নেয়। তাদের চার ঘন্টার ও বেশি সময় তারা আটকে রেখে গালাগালি ও হেনস্থা করে। এসময় তারা বারংবার ছাত্রলীগের পরিচয় ব্যবহার করে সাংবাদিক সমিতির নেতৃবৃন্দকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিতে থাকে। এবং সাংবাদিক সমিতি মাদকের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে যদি কোনো লেখালেখি করে তাহলে তাদের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে বলে তারা হুশিয়ারি করতে থাকে।
পরে বেলা চারটার দিকে তারা সাংগঠনিক সম্পাদক মো. গোলাম রব্বানীকে ডেকে নেয়। প্রথমেই তার থেকে ফোন কেড়ে নেয় ও তাকে হেনস্থা করতে থাকে। পরবর্তীতে আইদিদ আলম, মো. ইমরান হাসান মুরাদ, শেখ নাহিয়ান তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এলোপাতারি ভাবে মারধর করে। তিনজনই চুয়েটের ২০১৭-২০১৮ সনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে আইদিদ মেকাট্রোনিক্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং, মুরাদ যন্ত্রকৌশল, নাহিয়ান কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র।
এ ঘটনার বিচার চেয়ে আজ বৃহস্পতিবার চুয়েট সাংবাদিক সমিতি একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তারা ঘটনারর সাথে জড়িত সকলের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ডোপ টেস্ট ও শারিরীক নির্যাতনকারী তিনজনের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার এর দাবি জানায়। এরপর সকাল ১১টার দিকে জড়িতদের বহিষ্কারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।
এবিষয়ে ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, বিষয়টি আশঙ্কাজনক। ফেসবুকে পোস্ট করা নিয়ে যেকোনো শিক্ষার্থীর উপর এভাবে চড়াও হওয়া তাদের ঠিক হয়নি। গায়ে হাত তোলার মতো এমন কাজ করার অধিকার নেই তাদের। অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পরিচালক আরও বলেন, আমরা ছাত্রকল্যাণ দপ্তর বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিবো।
চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। আমি বিষয়টি ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে আজই অবগত করবো৷ অভিযোগ খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।