বিচারকদের মতানৈক্যে প্রশ্নবিদ্ধ চট্টগ্রাম বেতারে নাট্যশিল্পী তালিকাভূক্তি প্রক্রিয়া

বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রে নাট্যশিল্পী তালিকাভূক্তির অডিশনে বিশেষজ্ঞ বিচারক মন্ডলী এবং বেতারের বিচারকদের ভিন্ন ভিন্ন নাম্বার ও ভিন্নমতের ফলে প্রায় ১৪বছর পর তালিকাভূক্তির প্রক্রিয়া নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজাল। অডিশনের জন্য তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেল ও বেতারের তিনজনের সমম্বয়ে গঠিত প্যানেলের বিচারকদের মধ্যে পাশ মার্ক নিয়ে দেখা দিয়েছে দ্বিমত। ফলে বিশেষজ্ঞ তিন বিচারক চূড়ান্ত তালিকায় স্বাক্ষর না করেই চলে গেছেন বলে জানা গেছে।

দীর্ঘ ১৪ বছর পর অনুষ্ঠিত এ অডিশনে বিশেষজ্ঞ বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরষ্কার প্রাপ্ত নাট্যকার, বেতারের ‘ক’ শ্রেণির নাট্যকার ও প্রযোজক রবিউল আলম, বেতারের ‘ক’ শ্রেণির অতিথি নাট্য প্রযোজক সঞ্জীব বড়ুয়া এবং বেতারের ‘ক’ শ্রেণির অতিথি নাট্য প্রযোজক মোঃ মহসীন। এছাড়া বেতারের তিনজন কর্মকর্তা বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অডিশন বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন কেন্দ্রের আঞ্চলিক পরিচালক এস এম মোস্তাফা সরোয়ার।

জানা গেছে, ছয় বিচারকের দেয়া গড় নম্বরের ভিত্তিতে ৬০-৭০% পাশ মার্ক হিসেবে ধরে ফলাফল ধার্য্য করার বিষয়ে মত দেন বিশেষজ্ঞ বিচারক টিম। কিন্তু “গ“ শ্রেণির এ শিল্পী অন্তর্ভূক্তিতে বেতার কর্তৃপক্ষ ৮০% নম্বর পাশ মার্ক হিসেধে ধরে ফলাফল ঘোষণার সিন্ধান্ত নিলে মতানৈক্যের সৃষ্ট হয়। ফলে বিশেষজ্ঞ তিন বিচারক ফলাফলের চূড়ান্ত শীটে স্বাক্ষর না করেই চলে যান। অন্যদিকে বেতার কর্তৃপক্ষ তাদের নেয়া সিন্ধান্ত ৮০% নম্বরে স্থির থেকেই চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

গত ২২/২৩ আগস্ট বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রে নাট্যশিল্পী তালিকাভুক্তির এ অডিশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। উক্ত কণ্ঠ পরীক্ষায় ৮০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭০ জনের মতো অংশগ্রহণ করেছে বলে জানা যায়। দীর্ঘদিন নাট্যশিল্পী অডিশন না হওয়ায় এমনিতেই জটে আটকে গেছেন অন্তর্ভূক্তিতে আগ্রহী শিল্পীরা। ফলে শিল্পী সংকটে ভোগা চট্টগ্রাম দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে নাট্যাঙ্গনে। এমতবস্থায় শিল্পী সংকট কাটিয়ে নতুনদের জায়গা করে দিতে ৬০-৭০% নম্বরকেই যুক্তিযুক্ত মনে করে অভিমত ব্যক্ত করেছেন তিন বিশেষজ্ঞ বিচারক প্যানেল। এতে করে একদিকে যেমন ভালো কন্ঠের অধিকারী ও গুণী মেধাবী তরুণরা সুযোগ পাবে, তেমনি নাট্যাঙ্গনের শিল্পী খরাও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। কিন্তু ৮০% নম্বর ধরে পাশ হিসেবে করায় এখানে অনেকেরই ঝড়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। যেখানে ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৬০% নম্বরকেই পাশ মার্ক হিসেবে ধরা হয়, সেখানে চট্টগ্রামের জন্য ৮০% নম্বর অযৌক্তিক ও বিমাতাসূলভ বলেও তারা মনে করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞ বিচারক প্যানেলের দুই সদস্য জানান, বিচারক হিসেবে আমরা তিনজন উপস্থিত ছিলাম এবং বেতার থেকে তিনজন কর্মকর্তা বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। আমরা সুষ্ঠুভাবেই পরীক্ষার্থীদের অডিশন গ্রহণ করি। পরীক্ষায় পাশ মার্ক হিসেবে বেতার কর্তৃপক্ষ ৮০% গড় মার্ক নির্ধারণের কথা বললে আমরা ৬০% নম্বর গড় মার্ক ধরে ফলাফল ঘোষণার জন্য বলি। কিন্তু তারা তাদের সিন্ধান্তে অনড় থাকার কারণে পরবর্তীতে আমরা ৭০% প্রস্তাব করি। কিন্তু আমাদের দেওয়া মার্ক ও বেতারের তিনজন বিচারকের দেওয়া মার্ককে বিবেচনা করে প্রাপ্ত গড় নম্বর হিসেব করলে দেখা যায় অনেক ভালোমানের কণ্ঠ শিল্পী অকৃতকার্য হয়ে যাবে।

বিশেষজ্ঞ বিচারকরা আরও বলেন, ৮০ শতাংশ পাশ নম্বর বেতারের ইতিহাসে নেই। কণ্ঠস্বর পরীক্ষায় যে প্রার্থী ৮০ শতাংশ নম্বর পায়, তাকে সরাসরি ‘ক’ শ্রেণিতে পাশ করানো উচিৎ। যারা অডিশন দিতে এসেছে তাদেরতো তালিকাভূক্ত করা হবে ‘গ’ শ্রেণিতে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের মতামতকে অগ্রাহ্য করে তাদের সিন্ধান্তে অনড় থাকার ফলে আমরা চূড়ান্ত ফলাফলে স্বাক্ষর করব না বলে বেতার ভবন ত্যাগ করি। এছাড়াও দুই দিনের অনুষ্ঠিত কণ্ঠস্বর পরীক্ষায় আমাদের সাথে কেন্দ্রের আঞ্চলিক পরিচালক একবারের জন্যও সৌজন্যতামূলক কথা বলেননি এবং উপ-আঞ্চলিক পরিচালক শাহীন আকতার আমাদের সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য তার কক্ষের সামনে নিয়ে গেলেও তিনি আমাদের সাথে দেখা করেননি। এটা আমাদের জন্য কষ্টের ও মানহাণিকর বলে আমরা মনে করি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রের উপ-আঞ্চলিক পরিচালক শাহীন আকতারের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বিকার করেন। তিনি বলেন, এমন অভিযোগের কথা আমার জানা নাই। তাছাড়া বিশেষজ্ঞ বিচারকগণ নির্বাচিত পরীক্ষার্থীদের ফাইনাল শীটে স্বাক্ষরও করেছেন। আমরা আমাদের অফিসিয়াল নিয়মানুযায়ী অডিশন কার্যক্রম সম্পন্ন করছি।

আরও পড়ুন