কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা এমএলএম কোম্পানী আমার বাজার

ই-কমার্সের আড়ালে এমএলএম ব্যবসা করা আমার বাজার লিমিটেড গ্রাহকদের জমা করা কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। লক্ষ লক্ষ গ্রাহকের অর্থ লুটে রাজধানীর পল্টনের ভিআইপি রোডস্থ কাশফিয়া প্লাজা (৫ম তলা) কোম্পানিটির আলিশান অফিস বন্ধ করে দিয়েছে ২০২২ সালে। তবে রামপুরার কাঁচা বাজার এলাকায় আলী টাওয়ার (চতুর্থ তলার) একটি বাসায় দুই রুমের অফিস নিয়ে প্রতারণার কার্যক্রম এখনো চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছে, আমার বাজার লিমিটেড একটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং ভিত্তিক (এমএলএম) ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। প্রলোভন দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ গ্রাহকের কাছ থেকে বিনিয়োগের নামে সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২ লাখ টাকা করে নিয়েছে। টাকা নিয়ে আজ অবধি অনেক গ্রাহককে পণ্য বা টাকা কিছুই দেয়নি। ফলে বিনিয়োগকারীরা তাদের টাকা হারিয়ে নানা জায়গায় ধর্ণা দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। এ কোম্পানীতে পণ্য সরবরাহ করে টাকা পয়সা না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন বেশ কয়েকজন সাপ্লায়ারও। তাদের টাকা আটকে থাকায় ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে তারা। ইতোমধ্যে বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত না পেয়ে মঞ্জু শাহ্ নামের এক শেয়ার হোল্ডার ঢাকার পল্টন থানায় গত ২৩/০৮/২১তারিখে একটি সাধারণ ডায়েরী (নং-১৩৭৯) লিপিবদ্ধ করেছেন।

আরএস এন্টারপ্রাইজ নামক একটি পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী কামরুল হাসান জানান, আমি আমার বাজার কর্তপক্ষকে বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ করেছি। ২০ লাখ টাকার ওপরে বকেয়া টাকা পাওনা আছি। তারা টাকাও দিচ্ছেনা, কবে দিবে তারও কোনো সদুত্তর দিচ্ছেনা।তেমনি আরেকটি প্রতিষ্ঠানে একিউর এর স্বত্ত্বাধিকারী আবদুল মতিন মুক্ত জানান তিনি ৩০ লাখে বেশি টাকা পাওনা আছেন।তারা বলেন আমাদের মতো আরও প্রায় ৩০টির মতো সাপ্লাইয়ার প্রতিষ্ঠান তাদের কাছে টাকা পাবে।

বিএফআইইউয়ের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমার বাজারে চারটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা জমা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৯০ কোটি ১২ লাখ টাকা রাজীব হাসানসহ কয়েকজন ব্যক্তি নগদ উত্তোলন করেছে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে অধিকাংশ নগদ উত্তোলন অস্বাভাবিক হিসেবে প্রতীয়মান হয়। এভাবে নগদ অর্থ উত্তোলন ও উৎস গোপন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে কিনা তার গভীর অনুসন্ধান প্রয়োজন। আমার বাজারে নগদ মার্চেন্ট হিসাব থেকে ১৫ হাজার ১০৬টি এমএফএস হিসেবে ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় অনুসন্ধান প্রয়োজন। বিভিন্ন গ্রাহককে প্রতারণার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, পণ্য সরবরাহের প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নিয়ে পণ্য না দেওয়া প্রতারণার শামিল। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী এটা একটা অপরাধ।

জানা যায়, ২০১৭ দিকে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি ট্রেনিং সেন্টারের সাবেক সিইও এবং ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের এমডি রফিকুল আমিনের আপন ভাতিজা মো. আশরাফুল আমিন ‘আমার বাজার লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। এমএলএমের আদলে প্রতিষ্ঠানটি ই-কমার্সের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করত।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডার ৪৯ জন। চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন মো. মামুনুর রশিদ। ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) হিসেবে নাম রয়েছে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের।

গ্রাহকরা অভিযোগ করেন, ডেসটিনির আদলে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানটিতে গ্রাহকদের কাছ থেকে নগদ টাকাই নিতেন। পণ্য কেনার কিছু টাকা ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নেওয়া হতো। ফলে অধিকাংশ টাকার ব্যাংক হিসাব নেই। গ্রাহকদের পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডার ও পণ্য বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানগুলোর শতকোটি টাকারও বেশি পাওনা রয়েছে আমার বাজার লিমিটেডের কাছে। পাওনাদারদের পাওনা না দিয়ে পল্টনের অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন রামপুরার একটি বাসায় লুকিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানীর কাছ থেকে পণ্য সাপ্লাই নিয়ে তাদেরকে টাকা পয়সা না দিয়ে নিঃস্ব করেছে বলে জানা গেছে।

গ্রাহকরা জানিয়েছে, মাত্র ১১শ টাকা দিয়েই আমার বাজার লিমিটেডের সদস্য করা হতো। পণ্যসহ সদস্য হতে জমা দিতে হতো ১৫শ টাকা। এভাবে পণ্য দেওয়ার কথা বলে নিবন্ধিত গ্রাহকের মাধ্যমে সারাদেশে সদস্য থেকে টাকা সংগ্রহ করে আমার বাজার লিমিটেড। এ কাজে নানা চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন ও লোভনীয় অফার ঘোষণা দেওয়া হতো। এ ছাড়া মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে নানা ধরনের চুক্তির খবরও বিজ্ঞাপন আকারে প্রচার করে গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করা হতো।

কোম্পানি শেয়ার হোন্ডার ৪৯ জনের নাম থাকলে ও অডিট রিপোটে ২২,৩৯৭,৫৩৯ টাকা, শেয়ার ডিপোজিট মানি দেখানো হয়।(২০১৮-২০১৯) অর্থ বছরে। ৪৯ জন শেয়ার হোন্ডারের নাম কোম্পানি মেমোরেন্ডাম থাকলেও শেয়ার হোল্ডারের নাম দেখা যায় ১২১ জনের। অর্থাৎ এইখানে দেখা যায়, অনেকের কাছে থেকে শেয়ার মানি বাবদ টাকা উত্তোলন করেছে নামে বেনামে। অপরদিকে কিছু কিছু গ্রাহককে কোম্পানীর অংশীদার বানানোর লোভ দেখিয়ে তাদেরকে শেয়ার কেনার জন্য প্রলুদ্ধ করেন।চট্টগ্রাম থেকে শেয়ার হোল্ডার নামে ২ কোটি টাকা উত্তোলন করেন।ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের থেকে ক্যাপ্টেন শওকত ইসলাম,মনজুর হোসেন ভূঁইয়া, হাফেজ ইসমাইল সিদ্দিকী, মঞ্জুর মোরশেদ, আব্দুল হাকিম, অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল আজিম, এডভোকেট নুরুল আফসার, উজ্জল সেন, তপন কান্তি নাথ,আলমগীর হোসেন,কামরুল হাসান রিয়াদ সহ আরো অনেক ব্যাক্তি থেকে শেয়ারের নামে টাকা উত্তোলন করেন। সেইসব গ্রাহক শেয়ার হোল্ডার হওয়ার জন্য টাকা জমা দিলেও বর্তমানে সেটা তাদের থেকে লোন হিসেবে নিয়েছে বলে কোম্পানীর হিসাবে লিপিবদ্ধ আছে।

বর্তমানে কোম্পানি (চেয়ারম্যান) মামুনুর রশিদ পালাতক রয়েছেন। কোম্পানি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মনিরুজ্জামান সাথে যোগাযোগ করলে অপর প্রান্ত থেকে অন্য একজন বলেন, উনি অসুস্থ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কোম্পানির পরিচালক প্রশাসন গোলাম রব্বানী সুমন ও পরিচালক ক্রয় সুলতান মাহমুদ পল্টু জন্মভূমি সিটি প্লট নামে হাউজিং ব্যবসা করছেন।

সরজমিনে দেখা যায়, এই অফিসে বসে নানা ধরনের অবৈধ ব্যবসা করছেন পরিচালকরা। অবৈধ ক্রিপ্টোকারেন্সি নামে কোটি কোটি টাকা ফ্রান্সে পাচার করছেন পরিচালকরা। বর্তমানে কোম্পানির রামপুরা অফিসের দায়িত্বে থাকা পরিচালক মঞ্জুর মোরশেদের সাথে যোগাযোগ করলে তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। আমার বাজার নামীয় এ এমএলএম কোম্পানীর কয়েকজন পরিচালক বর্তমানে ইন্সুরেন্স কোম্পানীর সাথে যুক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে মাসুদুর রহমান, আব্দুল হান্নান বাবুল,।

চলমান……