লামায় প্রায় ৫ হাজার বসতবাড়ি বিধ্বস্ত,খোলা আকাশের নিচে বসবাস

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বান্দরবানের লামায় প্রায় ৫ হাজার বসতবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। জানা যায়, গত ৬ আগস্ট থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ৪দিন-রাত ডুবেছিল লামাবাসী। চার দিনের বন্যায় সবচেয়ে বেশি পানি হয় ৭ আগস্ট সোমবার রাতে। সেইরাতে বান্দরবান জেলার লামা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডসহ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। এতেকরে মাটির ঘরসহ কাঁচা-পাকা পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে ধসে পড়ে। লামা পেীর এলাকাসহ মেরাখোলা ও রুপসিপাড়া ইউনিয়ন এলাকায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

লামা পেীরসভার পাঁচ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলী আহমদ জানান, তার ওয়ার্ডে লামামুখ, কলিঙ্গাবিল, রাজবাড়ি, পশ্চিম রাজবাড়ি, চোরারবিল গ্রামে কমপক্ষে ২শত বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। জাহাঙ্গীর এর বাড়ির পাশে আব্দুল মন্নান এর মাটির ঘরটিও একইভাবে পানিতে ডুবে ধসে যায়। মন্নানের স্ত্রী কুলছুমা বেগম বলেন, আমার এক মেয়ে এইচএসসি পরীক্ষা দিবে। তার বই গুলো পর্যন্ত বাঁচাতে পারিনি। গত কয়েকদিন ধরে মানুষের ঘরে রাত কাটাচ্ছি। ৬ সন্তান নিয়ে কোথায় যাবো? কিভাবে এই ঘর মেরামত করব?

লামা সদর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো.খোরশেদ আলম জানান, তার এলাকায় ৫০টিরও বেশি মাটির ঘর পানিতে মিশে যায়। তারা অনেকে অন্যের বাড়ি কেউ খোলা আকাশের নিচে কোন রকম দিন পার করছেন।

বন্যা পরবর্তিতে ১২ আগস্ট লামা উপজেলা হলরুমে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্টিত হয়। সভায় মন্ত্রী প্রতিনিধি প্রদীপ কান্তি দাস আগামি তিন মাস লামায় সকল এনজিও ও ব্যাংক লোনের কিস্তি না নেওয়ার প্রস্তাব জানালে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন তাঁর প্রস্তাবকে স্বাগত জানান এবং সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
লামা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন বলেন, উপজেলার সবচেয়ে বেশি বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয় আমার ইউনিয়নে। ইউনিয়নের মেরাখোলা, আশ্রয়ণপ্রকল্প, বেগুনঝিরি, মেওলারচর, পাহাড় পাড়া, বৈল্যারচর গ্রাম গুলো উপর থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়। ভাসিয়ে নিয়ে যায় সবকিছু। গ্রাম গুলোর অধিকাংশ ঘর মাটির তৈরি ছিল। কোন মাটির ঘর নেই, ৩শত মাটির ঘর ধসে গেছে।

রূপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিং প্রƒ মার্মা বলেন, দুস্থ মানুষের আহাজারিতে মন ভেঙ্গে যায়। এত সামান্য বরাদ্দ দিয়ে বিশাল ক্ষয়ক্ষতি পূরণ সম্ভব না।

গজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাথোয়াইচিং মার্মা বলেন, ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় সরকারি বরাদ্দ অপ্রতুল।

লামা পৌরসভার মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে সাড়ে ৩ হাজার পরিবার পানিবন্ধী ছিল। দেড় সহস্রাধিক বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন, এবারের বন্যায় উপজেলায় কমপক্ষে ৫ হাজার ঘরবাড়ি বিধস্ত হয়েছে। প্রায় ৩ হাজার ৫শত পরিবার পানিবন্ধী হয়ে পড়েছিল। এই পর্যন্ত ৩৫ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ও নগদ ৯ লাখ টাকা সরকারি বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন