বাম্পার ফলনের লক্ষ্যে বাঁশখালীতে চলছে বোরো চাষ

প্রকৃতিতে চলছে শীতের মহোৎসব। বাংলাদেশে সাধারণত শীত পড়ে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে। এখন মাঘের উত্তরী হিমেল হাওয়া, হাড় কাঁপানো শীত, ও ঘনকুয়াশা উপেক্ষা করেই চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বোরো ধান রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। বাঁশখালী জুড়ে চলছে বোরো ধানের চারা রোপণের কাজ। সঠিক সময়ে বোরো ধান রোপণ করতে পেরে খুশি কৃষকরা। কৃষকদের আশা, আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে এবারও তারা বাম্পার ফলন পাবেন।

বাঁশখালী উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছেন, বাঁশখালীতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১১ হাজার ৩০০ হেক্টর। বীজতাল হয়েছে প্রায় ৫৮০ হেক্টর। বোরো প্রনোদনা হিসেবে ৮ হাজার জন কে উচ্চফলনশীল ২ কেজি হাইব্রিড বীজ এবং ৭ হাজার জন কে উফশী ধানের বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন স্থানের কৃষকেরা ভোর থেকে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফসলের খেতে। শীতকে উপেক্ষা করে ধানের চারা রোপণ করছেন। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও উপজেলার ছনুয়া, পুঁইছড়ি,শেখেরখীল, চাম্বল, শীলকূপ, গন্ডামারা, পৌরসভার জলদী, সরল, কাথরিয়া, বৈলছড়ী, কালীপুর, সাধনপুর, পুকুরিয়া, বাহারছড়া, খানখানাবাদ এলাকায় বোরো চাষাবাদ শুরু করেছে কৃষকরা। কোনো কোনো ইউনিয়নে দো-ফসলি জমির ওপর বোরো চাষাবাদ হয়েছে। আবার লবণসহিষ্ণু এলাকায়ও ব্যাপকহারে বোরো চাষাবাদ করা হয়েছে। চাম্বল, জলদী, বৈলছড়ী, সাধনপুর, পুঁইছড়ি, নাপোড়া, কালীপুর ও শীলকূপের আশ-পাশের ছড়ার পানি দিয়ে ব্যাপকভাবে এলাকায় কৃষকরা বোরো চাষাবাদ শুরু করেছে। বিশেষ করে এ অঞ্চলে বিদ্যুৎচালিত মোটর ও ডিজেল ব্যবহার করে গভীর ও অগভীর নলকূপের পানি এবং প্রধান সড়কের পূর্ব ও পশ্চিম পার্শ্বে বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র ব্যবহার করে কৃষি জমিতে পানি সেচের করা হয়।

উপজেলার বাহারছড়া ইউপির কৃষক জাকের হোসেন বলেন, ‘আমাদের শীত-গরম বলতে কিছুই নেই। প্রতি বছরই ধানের চাষ করি। এ বছরও করছি। তবে বীজের দাম বেড়েছে। শ্রমিকের মজুরিও বেশি। ফলন ভালো হলে লাভের মুখ দেখা যাবে এমনটি আশা করছি।’

এদিকে, বোরো চাষাবাদের শেষ সময়ে চারা রোপণ চলছে। তবে শীতের তীব্রতায় বেকায়দায় পড়েছেন কৃষকরা। তারা বলেন, শীতের তীব্রতা অব্যাহত থাকলে ফলনে ক্ষতি হবে।

শীলকূপের একচাষী আনোয়ারুল আজিম বলেন, ‘সবকিছুর দাম বেশি থাকায় ট্রাক্টর খরচ, শ্রমিকের মজুরী, সার-বীজসহ ধান চাষে ব্যয় বেশি হচ্ছে। তবে শীতের তীব্রতা অব্যাহত থাকলে চাষাবাদ ব্যাহত হবে, ফলন কম হবে।’

বাঁশখালী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আবু সালেক বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরও আবহাওয়ার অবস্থা অনেক ভাল। কৃষকদের মাঝে সরকারি কৃষি প্রনোদনা হিসেবে ধানের বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়েছে মাঠপর্যায়ে সহকারি কর্মকর্তা কৃষকের পাশে থেকে ভালো ধান উৎপাদনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিগত বছরে পানি সিন্ডিকেটের কারণে প্রান্তিকের চাষিরা হয়রানীর শিকার হয়েছে। হয়রানী রোধে সরকারীভাবে পানি সেচের মূল্য নির্ধারণের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়ের অফিসে ৫ জানুয়ারী সভার আহ্বান করা হয়েছে। বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে বোরো ধানে বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি।’

আরও পড়ুন