রাউজানে পুলিশের গাড়ি থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা

চট্টগ্রামের রাউজানে পুলিশের গাড়ি থেকে আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যার ঘটনায় দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অপহরণ মামলার আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা, পুলিশের কাজে বাধা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়। ঘটনার দিন রাতে (সোমবার) অপহরণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাউজান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজিজুল হাকিম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন বলে জানান রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল হারুন। নির্দিষ্ট কারো নাম নয়, অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় এবং আসামিদের সংখ্যাও উল্লেখ নেই বলে জানান ওসি।

জানা যায়, চট্টগ্রামের রাউজান থেকে অপহরণ হওয়া স্কুল শিক্ষার্থী শিবলী সাদিক হৃদয়ের (২০) খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয় সোমবার সকালে। অপহরণের ১৩ দিন পর পুলিশ তার খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে। অপহরণে খুন হওয়া স্কুল শিক্ষার্থী হৃদয় উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়া গ্রামের মো. শফিক ড্রাইভারের ছেলে। সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) ভোর হতে পুলিশের অভিযান রাউজানের কদলপুর-রাঙ্গুনিয়া সীমান্তবর্তী দলুছড়ি পাহাড়ি এলাকার বিভিন্নস্থান থেকে তারখণ্ডিত লাশ (দেহাবশেষ) উদ্ধার করে পুলিশ।

এদিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হৃদয়ের মরদেহ উদ্ধারের পর অভিযুক্ত উমংচিং মারমাকে নিয়ে ফেরার পথে উত্তেজিত জনতার রোষানলে পড়ে। পুলিশ এ সময় কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। তারা ওই যুবককে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এতে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি। আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন রাউজান থানার ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন (৪৬), এসআই শাহাদাত হোসেন (৩৫), এসআই কিশোর কুমার (৩২), সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আজিজুল হাকিম (২৯), এসআই কানু লাল (৪০), এএসআই শাহিদুল ইসলাম (৩৮) ও পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানের চালক।

গণপিটুনিতে নিহত উমংসিং মারমা রাঙামাটির বেতবুনিয়া ইউনিয়নের রঙ্গিপাড়া গ্রামের উথোয়াইমং মারমার ছেলে।

এ বিষয়ে রাউজান থানার ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যার ঘটনায় দুইটি মামলা হয়েছে। একটি হত্যা করা, অন্যটি পুলিশের কাজে বাধা ও গাড়ি ভাঙচুর করা। মামলায় আসামির সংখ্যা এবং নাম রাখা হয়নি। দুটি মামলার আসামিদের সবাই অজ্ঞাতনামা। ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘অভিযানে তার দেখানো বিভিন্ন জায়গা থেকে অপহৃত যুবক হৃদয়ের খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করি। লাশ উদ্ধার করে ফেরার পথে পঞ্চপাড়া গ্রামে পাঁচ শতাধিক নারীসহ স্থানীয়রা আমাদের পথরোধ করেন। উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়ি থেকে আসামি উমংচিং মারমাকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে। পুলিশ এ সময় কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

জানা যায়, অপহরণে খুন হওয়া শিবলী সাদিক হৃদয় পড়াশোনার পাশাপাশি কদলপুরে একটি মুরগির খামারে চাকরি করতো। সে কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। গত ২৮ আগস্ট রাতে ওই মুরগির খামার থেকে দিবাগত রাতে তাকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের দুই দিন পর অপহরণকারীরা তার পরিবারে ফোন করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

পরিবার অপহরণকারীদের সাথে কথা বলে ২ লাখ টাকায় রাজি হয়। কয়েকদিন পর অপহৃত হৃদয়ের বাবা শফি বান্দরবান এলাকায় ডুলাপাড়া নামক স্থানে গিয়ে দুইজন লোকের হাতে দুই লাখ টাকা তুলে দেন। কিন্তু তারা হৃদয়কে মুক্তি দেয়নি। অপহরণকারীরা ছেলেকে মুক্তি না দেওয়ায় তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পরে আসামিদের নাম উল্লেখ করা মামলা দায়ের করা হয় রাউজান থানায়।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, হৃদয় যে মুরগির খামারে চাকরি করতো সেখানে সবাই ছিলেন চাকমা যুবক। মুরগির ফার্মে চাকরি করা চাকমা যুবকদের দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল হৃদয়ের। গত দুই মাস আগে খামারে চাকমা যুবকদের সাথে হৃদয়ের ঝগড়াঝাটি হয়। পরে মুরগির খামারের মালিকরা বিষয়টি মিমাংসা করে দেন।

হৃদয়ের মা নাহিদা আকতার বলেন, ‘অপহরণের পর তার স্বামীর মোবাইলে একটি ফোন আসে। ফোনটি ছিল তার ছেলে হৃদয়ের। ফোনে হৃদয় বলে, ‘মা আমাকে রাত ১২টার দিকে কিছু মানুষ আটক করে নিয়ে আসে। আমি প্রায় ১২ ঘণ্টার মতো গাড়িতে ছিলাম। আপনারা ফোন দিয়েন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফোন দিলে আমাকে মেরে ফেলবে বলছে ওরা। এরপর আবার আমার মোবাইলে কল দিয়ে বলে ছেলেকে পেতে হলে ১৫ লাখ টাকা দিতে হবে। না হলে তোর ছেলেকে জীবিত আর পাবি না। পরে তাদের বুঝিয়ে আমরা ২ লাখ টাকায় রাজি করি। তাদের কথা মতো টাকা দিলেও তারা আমার সন্তানকে ফেরত দেয়নি। আমার স্বামী টাকা দিয়ে তাদের পায়ে পর্যন্ত পড়েন।’

আরও পড়ুন