এসি আকরামের জবানবন্দিঃ রুবেল খুনের অভিযোগে জেলে যাওয়ার পেছনের ঘটনা

প্রথম প্রকাশ : ৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ইং

জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামীলীগ সরকার। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী। আর বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। এরই মধ্যে সন্ত্রাসীরা দল বদল বা তাদের গডফাদার বদল করে ক্ষমতার ছাতার নীচে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন। ঢাকার বিভিন্ন টেন্ডার, চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে সন্ত্রাসীদের মধ্যে চলছে এলাকা নিয়ন্ত্রণ তৈরীর রোডম্যাপ। নগর ভবনের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গড়ে উঠেছে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বলয়।ঢাকার বিভিন্ন এলাকার কে কার গ্রুপকে কোনঠাসা করবে এ নিয়ে শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতা। প্রভাববিস্তার নিয়ে চলছে খুন খারাবী। ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসেই সন্ত্রাসীদের দমনে বঙ্গবন্ধু কন্যা বুদ্ধিমত্ত্বার পরিচয় দিয়ে কোন রাজনৈতিক নেতাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব না দিয়ে একজন অবসরপ্রাপ্ত আর্মি পার্সন ও বীর মুক্তিযোদ্ধাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কোন তদ্বির বা রাজনৈতিক সুপারিশ যাতে সন্ত্রাস দমনে প্রতিবন্ধকতা তৈরী না করে এমন ভাবনা থেকেই প্রধানমন্ত্রী এমন সিন্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাই পুলিশের দাপুটে কাজ পাগলা পুলিশ অফিসার আকরাম হোসাইন সন্ত্রাসী গ্রেফতারে সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।

৯৬এর মাঝামাঝিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় থেকে ৯৮ এর মাঝামাঝি সময়ে সন্ত্রাসীদের দাপটে অস্থির হয়ে উঠে ঢাকা। একের পর এক হত্যাকান্ড, চাদাবাজি, টেন্ডারবাজীসহ ঢাকার অপরাধ জগত দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ঢাকায় তাদের কর্মকাণ্ড চালাতে শুরু করে। এরই মধ্যে সুইডেন আসলাম, মোহাম্মদপুরের তোফায়েল আহমেদ জোসেফ, মীরপুরের আহাম্মদ নগরের দুই ভাই প্রকাশ ও বিকাশকে শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে গ্রেফতারে পুরষ্কার ঘোষণা করে সরকার। ডিবির কাজ পাগলা অফিসার খ্যাত এসি আকরাম এই সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে একের এক সফলতা অর্জন করতে থাকেন। এই চার শীর্ষ সন্ত্রাসীর তিন জনকেই গ্রেফতার করেন তিনি। ডিবি ও এসি আকরামের এই সাফল্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় অফিসার নিজেদের ব্যর্থতায় লজ্জিত হতে শুরু করেন। পুলিশেরই বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে অনেক উর্ধতন কর্মকর্তারা উদাহরণ দিতে শুরু করেন ডিবির এসি আকরাম অপরাধী ধরে কিভাবে, আর আপনারা খুঁজে পান না কেন?

এসি আকরামের এই সাফল্যে অনেকেই প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলতে থাকেন। সন্ত্রাসী বা অবৈধ অস্ত্রধারী গ্রেফতারে এসি আকরাম যখন সাফল্যের চূড়ায় তখন ১৯৯৮ সাল। ফেব্রয়ারী মাসের ঘটনা। বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারলেন, সরকারের এক প্রভাবশালী আমলার ছেলে ও সন্ত্রাসী মামুনের কাছে অবৈধ অস্ত্র ও গুলি রয়েছে। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেলো, জোয়ার সাহারা এলাকার একটি বাড়িতে ওই আমলার ছেলে তার সুন্দরী প্রেমিকা তনুজাকে নিয়ে অস্ত্রসহ অবস্থান করছে। এরপরই তিনি ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ব্যাগ ভর্তি গুলি, একটি সেভেন এমএম রাইফেলসহ দুই সন্ত্রসী ও এক নারীকে গ্রেফতার করেন।

ঢাকার অপরাধ জগতে দুই সন্ত্রাসীর একজন সরকারের এক আমলার সাদা পুত্র হিসেবে পরিচিত। ধানমন্ডি এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজেদুল হাসান ইমনের ডান হাত হিসেবে পরিচিত মামুন। ঠান্ডা মাথার খুনি মামুন একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটিয়ে পুলিশের ঘুম হারাম করে দিয়েছিলো। এমনিই এক পরিস্থিতে এসি আকরাম হোসাইন জোয়ার সাহারার ৮নাম্বার সড়কের ৪৪ নাম্বার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৯টি খুনসহ ১৭মামলার আসামি মামুন, আমলার সাদা পুত্র ও তার প্রেমিকা তনুজাকে গ্রেফতার করেন। একেবারে ইনটেক সেভেন এমএম রাইফেলসহ।

ঢাকায় তখন সন্ত্রাসীদের কাছ অবৈধ সেভেন এমএম অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাটি সংবাদমাধ্যম ফলাও করে প্রকাশিত হয়। সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করে এই দুই সন্ত্রাসীকে রিমান্ডে আনা হয়। ডিবি অফিসে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে এরা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিতে শুরু করে। দেশে অবৈধ অস্ত্রের সরবরাহকারী এবং কিভাবে এই অস্ত্র তাদের হাতে এলো বিষয়টি ছিলো রাষ্ট্র, সমাজ ও নাগরিক জীবনের নিরাপত্তার প্রশ্ন। তাই তাদের কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসায়ী চক্রের সন্ধান ও তথ্য আদায়ে রিমান্ড ছিলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্রেফতারের পর থেকেই তারা বেশ হম্বিতম্বি করছিলো। তাদের গ্রেফতার করে তিনি কাজটি ভাল করেননি বলেও আমলার সাদা পুত্র বেশ দম্ভোক্তি করছিলো। ঢাকায় সেভেন এমএম রাইফেল ও ৯১ রাউন্ড গুলিসহ আমলাপুত্র গ্রেফতারের বিষয়টি অপরাধ বিটের সংবাদকর্মীদের কাছে বেশ গুরুত্ব বহন করেছিলো। তাই ওই সময় ডিবি অফিসে সংবাদকর্মীরা তাদের মাধ্যম থেকে সংবাদ সংগ্রহে বেশ তৎপর ছিলেন।প্রভাবশালী আমলার অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী সাদা পুত্রকে নিয়ে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতেই ডিবি অফিসে ঘটলো অবিশ্বাস্য ঘটনা। এই ঘটনার জাল বিস্তৃত হলো তৎকালীন আইজিপি পর্যন্ত।

বিস্তারিত থাকবে পরের পর্বে………….

আরও পড়ুন