ঢাকার সমাবেশে আসলাম চৌধুরী’র মুক্তির জোরালো দাবী চায় তৃণমূল

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর মুক্তির দাবিতে জোরালো বক্তব্য চায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মহাসমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে আসলামু চৌধুরীর মুক্তির দাবিতে স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আশা করে চট্টগ্রাম তথা সারাদেশের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। ২০১৬ সালের ১৫মে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়ে এ নেতা এখন পর্যন্ত কারাভোগ করছেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন সভা সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা ওনার মুক্তির দাবি জানালেও ঢাকার কোনো বড় সমাবেশে আসলাম চৌধুরীর মুক্তির ব্যাপারে কোনো বক্তব্য বা কর্মসূচী না আসায় তৃণমুলের নেতাকর্মীরা কিছুটা হতাশ বলেও জানা গেছে।

জানা গেছে, আন্দোলন সংগ্রামে জোরালো ভূমিকার কারণে আসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম তথা দেশজুড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে খুব জনপ্রিয় নাম। আন্দোলন সংগ্রামে আপোষহীন ভ‚মিকার পাশাপাশি সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সুখে-দুঃখে পাশে থেকে তিনি তাদের আস্থা ও বিশ্বাসের ঠিকানায় নিজেকে পরিণত করেছেন। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের এ কৃতী রাজনীতিবিদ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা, মহানগর ও দক্ষিণ জেলার রাজনীতিতেও অত্যন্ত প্রিয়ভাজন একজন নেতার অবস্থান তৈরী করতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে তার মুক্তির দাবি শুধু সীতাকুন্ড নয়, পুরো চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের বিএনপি পরিবারের অন্যতম দাবি তথা ইস্যুতে পরিণত হয়েছেন।

বিএনপি’র এ যুগ্ম মহাসচিব প্রথম কারাবরণ করেন ২০১২ সালের ২৪ জুন, দ্বিতীয়বার কারাবরণ করেন ২০১৩ সালের ৬জুন, তৃতীয়বার কারাবরণ করেন ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারী নগরীর কাজির দেউড়ী মোড়ে দলের কর্মসূচী থেকে এবং চতুর্থবার কারাবরণ করেন ২০১৬ সালের ১৬ মে, ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে। আগের তিনবার গ্রেপ্তার হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে প্রায় বছরাধিককাল কারাভোগ করলেও সর্বশেষ ২০১৬ থেকে এ পর্যন্ত একটানা একপ্রকার বিনা বিচারেই কারাভোগ করে যাচ্ছেন এ নেতা। কারাবরণের ৭ বছর অতিক্রম করলেও দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে তার মুক্তির বিষয়ে কোন জোরালো কর্মসূচী দেয়নি দলটির হাইকমান্ড।

আসলাম চৌধুরী মুক্তি পরিষদের ব্যানারে ঢাকায় মানববন্ধন ও প্রেস কনফারেন্স করা হলেও সেটাকে বৃহত্তর কর্মসূচী হিসেবে মানতে নারাজ দলটির তৃণমূলের কর্মীরা। এর বাইরে চট্টগ্রামের বড় সমাবেশগুলোতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নগর বিএনপির আহবায়ক ডাঃ শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বিভিন্ন সময়ে আসলাম চৌধুরীর মুক্তি দাবি করে বক্তব্য রেখেছেন। চট্টগ্রামে আসলাম চৌধুরীর মুক্তির দাবিতে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন সমূহের উদ্যোগে মিছিল মিটিং, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, মুক্তি পরিষদের ব্যানারে নানা কর্মসূচী পালিত হলেও কেন্দ্র থেকে কর্মসূচী চান নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তর জেলা বিএনপি’র সদস্য কাজী সালাহউদ্দিন বলেন, আসলাম চৌধুরীর মুক্তিতে আইনী কোনো বাধা নেই। সরকার ইচ্ছে করেই একের পর মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে কারাবন্দী করে রেখেছে। একটি মামলায় জামিন হলেও নতুন করে মামলা দিয়ে তাকে আটকে রাখা হচ্ছে।

সীতাকুন্ড যুবদলের আহবায়ক ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, আমরা চাই ২৭ তারিখের সমাবেশ থেকে আসলাম চৌধুরীর মুক্তির দাবিতে জোরালো বক্তব্য আসুক। প্রয়োজনে তার মুক্তির জন্য দল কর্মসূচীও দিতে পারে।

চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা মামুনুর রশিদ মামুন বলেন, আমরা যারা তৃণমুলে রাজনীতি করি তাদের প্রাণের দাবি আসলাম চৌধুরীর মুক্তি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা হিসেবেও আমরা তার মুক্তি চাই। তার মুক্তির দাবিতে দলের সময়োপযোগী কর্মসূচী চাই আমরা আগামী জনসভা থেকে।

এদিকে আসলাম চৌধুরীর আইনজীবী নাসিমা আক্তার ডলি বলেন, আসলাম চৌধুরী প্রায় সব মামলাতেই জামিন পেয়েছেন। কিন্তু ওনি বের হতে গেলে নতুন করে মামলা দিয়ে আটকে রাখা হচ্ছে। জেলগেটে শ্যোন এরেস্ট দেখানো হয়। শুধু তা-ই নয়, তাকে চট্টগ্রাম, কেরানীগঞ্জ, কাশিপুর, ফেনীসহ বিভিন্ন কারাগারেও নানা সময়ে স্থানান্তরিত করা হয়। একজন শিক্ষিত সাবেক বিসিএস ক্যাডারকে এভাবে একজেল থেকে আরেক জেলে নিয়ে গিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবেও কষ্ট দেয়া হচ্ছে বলে নেতাকর্মীদের দাবি। যে জেল এলাকায় তার কোনো মামলা নাই, সেখানে তাকে রাখাটাকে অযৌক্তিক এবং অমানবিক।

এদিকে আসলাম চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী মঞ্জুরুল ইসলাম দাবি করেন, গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছিল, তাতে ছয় মাসের মধ্যেই তিনি জামিন পেয়ে গেছেন। কিন্তু তাকে মুক্তি না দিয়ে শতাধিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। জামিন নিতে গেলে সরকার বারবার সময়ের আবেদন করে, কালক্ষেপণ করে আটকে রাখছে। তার মুক্তির ব্যাপারে তাই তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বৃহত্তর কর্মসূচী চায় দলের কাছে।

আরও পড়ুন