চীনও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে : লিউ চিয়েন ছাউ

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে মত দিলেন চীনের ইন্টারন্যাশনাল ডিপার্টমেন্ট অব চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (আইডিসিপিসি/সিপিসি) মন্ত্রী লিউ চিয়েন ছাউ। বললেন, চীনও বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায়। সংবিধানকে সমুন্নত রেখে অনুষ্ঠেয় এমন নিরপেক্ষ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকা উচিত।

শুক্রবার চীনের ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান এমপি’র নেতৃত্বাধীন ৪ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মন্ত্রী লিউ চিয়েন ছাউ- এর নেতৃত্বাধীন সিপিসি প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়। বৈঠকে ঢাকার প্রতিনিধিদলের বাকি ৩জন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও চীন আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক আহ্বায়ক তরুণ কান্তি দাস কান্তি, আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য খালেদ মাসুদ আহমেদ ও সদস্য সুমন কুণ্ডু উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য এবং চীন আওয়ামী লীগের নেতা তরুণ কান্তি দাস কান্তি বলেন, হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বিভিন্ন ইস্যুতে বিস্তৃত পরিসরে আলোচনা হয়েছে। সিপিসি প্রতিনিধিদলের নেতা মন্ত্রী লিউ চিয়েন ছাউ দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশ (চীনা ভাষায় ‘মংজালা কোয়ো’)-এর অত্যাসন্ন দ্বাদশ নির্বাচন প্রশ্নে বিবদমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন। আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি জানান, উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বৃহত্তর স্বার্থে চীনও বাংলাদেশে একটি সুন্দর নির্বাচন আশা করে। যাতে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। তাছাড়া নির্বাচনটি সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে।

চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-বিআরআই সম্মেলন উপলক্ষ্যে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদল দেশটি সফর করেছে জানিয়ে তরুণ কান্তি দাস কান্তি আরও বলেন, চীনের উপমন্ত্রী ছুণ হাই ইয়েন এবং ইউনান প্রদেশের গভর্নর ওয়াং ইউ পো’র সঙ্গেও দলনেতা ফারুক খান এমপি তথা বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অত্যন্ত ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, চীনা উপমন্ত্রী বলেছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, টেকসই এবং স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন নিশ্চিতকরণে চীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার ধারাবাহিক আলোচনাকে অব্যাহতভাবে উৎসাহিত করে চলেছে। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মিয়ানমারে ‘গো অ্যান্ড সি’ এবং বাংলাদেশে ‘কাম অ্যান্ড টক’ সফরের উদ্যোগকেও চীন স্বাগত জানায়।

প্রত্যাবাসনের প্রয়োজনে চীনের পক্ষ থেকে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন উপমন্ত্রী। তরুণ কান্তি দাস কান্তি জানান, সফরকালে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল বিআরআই নিয়ে প্যানেল আলোচনাসহ বিভিন্ন বৈঠকে অংশ নেয়। সেখানে ফারুক খান এমপি দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করা এবং গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ইস্যুতে এক সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য, গত ৯ থেকে ১১ই নভেম্বর চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিংয়ে সিপিসি’র উদ্যোগে ৩ দিনব্যাপী ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ (বি আর আই) ‘সিপিসি ইন ডায়ালগ উইথ পলিটিক্যাল পার্টিজ অব সাউথইস্ট অ্যান্ড সাউথ এশিয়ান কান্ট্রিজ’ সম্মেলন হয়। এতে বিশেষভাবে আমন্ত্রিত ছিল বাংলাদেশ। সেই সম্মেলনে যোগ দিতে ৮ই নভেম্বর চীন সফরে যায় চার সদস্যের প্রতিনিধিদল, মঙ্গলবার তারা ঢাকা ফিরেন।

সম্মেলনে ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিলিপাইন এবং ভারতসহ এশিয়ার ১৮টি দেশ অংশ নেয়। সেমিনার ও বৈঠকে ৫১টি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, কয়েকজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিকসহ ২০০-এর অধিক প্রতিনিধি যোগ দেন। সেখানকার প্যানেল আলোচনায় ফারুক খান এমপি বিআরআই’র প্রকল্পে বাংলাদেশে সড়ক ও সেতু নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রাজধানী শহর এবং গ্রামীণ বাংলাদেশের মধ্যে সংযোগ সহজীকরণের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এসব প্রকল্প সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় নিঃসন্দেহে একটি ভালো ও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।
চীন কী ঋণের ফাঁদে বাংলাদেশকে ফেলেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ফারুক খান বলেন, আমার কাছে মনে হয়, এটা একটি অপপ্রচার। যেখানে ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষের জীবনমানের সুফল দৃশ্যমান, সেক্ষেত্রে এমন পারসেপশন বা ধারণার সঙ্গে বাংলাদেশ মোটেও একমত নয়।

উৎস : মানবজমিন

আরও পড়ুন