কক্সবাজারে পর্যটকের মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল

কক্সবাজার লাইট হাউজস্থ ‘ঢাকার বাড়ি-২’ নামে একটি কটেজে এক ব্যক্তির রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে নুরুল হুদা নামের এক দালাল। বুধবার (৯ নভেম্বর) বিকাল ৫ টার দিকে এই রহস্যঘেরা ঘটনা ঘটেছে।
নিহত ওই ব্যক্তির নাম বুলু রুদ্র (৪৫)। তিনি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের মৃত সুদর্শন রুদ্রের ছেলে। তার সাথে ছিল কথিত দুলাভসই দুলাল রুদ্র নামে একব্যক্তি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বিকেলে ৫টায় ‘ঢাকার বাড়ি’ কটেজ থেকে অজ্ঞান অবস্থায় এক ব্যক্তিকে বের করেন আনেন কয়েকজন ব্যক্তি। ওই ব্যক্তিকে বের করে একটি সিএনজি অটোরিকশা তুলে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আশিকুর রহমান বলেন, বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে একব্যক্তিকে জরুরি বিভাগে আনা হয়েছিল। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়।

ঢাকার বাড়ি-২ নামে একটি হোটেল থেকে তাকে আনা হয়েছে বলে তার এক স্বজন জানান। তবে ওই স্বজনও কৌশলে পালিয়ে যায়। ওই ব্যক্তির শরীরে কোন ধরনের আঘাত দেখা যায়নি। এছাড়া মৃত্যুর কারণও নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। মৃতদেহ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে সদর মডেল থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে। ময়না তদন্তের পর ঘটনার বিস্তারিত জানা যাবে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. নাজমুল বলেন, কটেজে এক ব্যক্তি অসুস্থবোধ করায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মারা গেছে বলে শুনেছি। তবে অন্য কোন কারণ আছে কিনা জানি না। ময়না তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে। এ পর্যন্ত কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি, অভিযোগ পেলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এদিকে, কটেজে ওই ব্যক্তি মারা যাওয়ার পরপরই ভাড়াটিয়া ইসমাইল হোসেন শাহীন, মো. লোকমান ও ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্টরা সবাই আত্মগোপনে চলে যায়।

একটি সুত্র জানিয়েছেন, বিকালে বুলু ও দুলাল ওই কটেজে খদ্দের হিসেবে যান। সেখানে বৃষ্টি নামে পতিতাকে ভাড়া করেন। লিপকিস দেয়া নিয়ে বুলুকে অন্ডকোষ চেপে ধরা হয়েছিল। অবশ্য ভাড়াটিয়া সৈকতপাড়ার ইসমাইল হোসেন শাহীনের প্রেমিকা ছিল সিলেটি পুরি খ্যাত ওই বৃষ্টি। খদ্দের জোর করে লিপকিস দেয়া নিয়ে বাকবিতন্ডার জেরে এই ঘটনা পরবর্তী মৃত্যু পর্যন্ত গড়ায় বলে প্রকাশ।

প্রশ্ন উঠেছে, হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে রোগীর রেজিস্ট্রার খাতায় পুলিশ কেইস লেখেননি সহযোগীরা। বুলুর সাথে থাকা কথিত দুলাভাই কৌশলে পালিয়ে যাওয়া নিয়ে আরও রহস্যের দানা বেঁধেছে। পতিতার ঢেরার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হলে পতিতা বৃষ্টির রুমে কারা কারা গিয়েছিল, কখন কিভাবে তাকে রুম থেকে বের করা হয়েছিল, সবকিছু উদঘাটন হবে।

স্থানীয়রা জানান, কটেজ জোনের ‘ঢাকার বাড়ি-২’ কটেজটি পতিতাদের ডেরা হিসেবে পরিচিত। সেখানে নিয়মিত ৫০/৬০ জন যৌন কর্মী নিয়ে চলে দেহ ব্যবসা। প্রতিনিয়ত সেখানে লাইন ধরে খদ্দররা যাতায়াত করে। লাইটহাউজস্থ মাঝের গলি নামে পতিতা পল্লী হিসেবে পরিচিত ওই কটেজটির মালিক রেজাউল করিম রাজু নামে একব্যক্তি। তার কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে কটেজ পরিচালনা করেন মো. আব্বাস, বাবুল ও বশর।

গত কয়েক মাস আগে উপ ভাড়া নেন ইসমাইল হোসেন শাহীন, লোকমান ও বশর। ৫০/৬০ জন দেহজীবি নিয়ে তারা নিয়মিত প্রকাশ্যে সেখানে দেহ ব্যবসা চালান। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে দেহ ব্যবসা ও মানবপাচার আইনে মামলাও রয়েছে। জেলও খেটেছেন তারা বহুবার। তারপরও তারা ঢাকার বাড়ি-২ কটেজ ভাড়া নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে অনৈতিক ব্যবসা।

এ বিষয়ে কটেজ মালিক রেজাউল করিম বলেন, পোকখালীর আব্বাসের সাথে কটেজ বিক্রির বিষয়ে আমার বায়না হয়েছে। তিনি ২/৩ জনকে উপভাড়া দিয়েছে। ঘটনার বিষয়ে তিনিই ভালো বলতে পারবেন।

আব্বাস বলেন, কটেজটি আমি ইসমাঈল হোসেন শাহীন ও লোকমানকে উপ-ভাড়া দিয়েছি। লোকমানসহ কয়েকজনে মিলে কটেজটি পরিচালনা করছে কয়েকমাস ধরে। শাহীন ও লোকমানের মোবাইল বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বশর এই ঢাকার বাড়ি কটেজে জড়িত নন বলে দাবি করেন। ওই কটেজে নিয়ে যাওয়া দুলাভাই ও ভাড়াটিয়া মালিক ইসমাইল হোসেন শাহীন এঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

কথিত ওসিখ্যাত নুরুল হুদা নামের এক ব্যক্তি এঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য ৫ লাখ টাকার থলে নিয়ে ঘুরছে বলে তথ্যে প্রকাশ।

আরও পড়ুন