দোহাজারীতে আট বছরেও জোড়া লাগেনি ভাঙা কালভার্ট

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভায় একটি কালভার্টের অভাবে নিত্যদুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় জনসাধারণকে। পৌর এলাকার জামিজুরী টু আদর্শগ্রাম সড়কে সাপছড়া খালের উপর নির্মিত ডাবলবেন্ড কালভার্টটি ভেঙ্গে পড়ার পর আট বছর অতিবাহিত হলেও নতুনভাবে কালভার্ট নির্মাণ না হওয়ায় নিত্যদুর্ভোগ পোহাতে হয় এলাকাবাসীকে।
কালভার্ট ভাঙা থাকায় সাপছড়া খালের মাঝখানে বাঁধ দিয়ে কৃত্রিমভাবে সড়ক তৈরি করে চলাচল করছেন স্থানীয়রা। খালের উজানে বাঁধ দেয়ার ফলে ভাটি অঞ্চলের প্রায় তিন হাজার কৃষক জমিতে সেচ দেয়ার জন্য পানি পাচ্ছেন না খাল থেকে। ফলে অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র গভীর নলকূপ স্থাপন করে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে জমিতে সেচ দিচ্ছেন কৃষকেরা। ফলে পৌরসভার ৬, ৭ ও ৮নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি সুপেয় পানির জন্য নলকূপ থেকে পানি পেতে সমস্যা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৩-১৪ সালে সাপছড়া খালের ওপর একটি ডাবলবেন্ড কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। এরপর যোগাযোগ ক্ষেত্রে আসে পরিবর্তন। তখন সিএনজি, রিকশা, ভ্যান এলাকায় প্রবেশ করায় কৃষি পণ্যসহ বিভিন্ন মালামাল পরিবহন সহজ হয়।
অভিযোগ আছে, কালভার্টটি নির্মাণের সময় নিম্নমানের কাজ করা হয়েছিল। ফলে নির্মাণের দুই বছরের মাথায় পাহাড়ি ঢলের পানির স্রোতে কালভার্টটি ভেঙে পড়ে। আবার এলাকাবাসীর দুর্ভোগ শুরু হয়। কালভার্ট ভেঙেছে প্রায় আট বছর হলো। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও এখানে নতুন করে কালভার্ট নির্মাণ করা হয়নি। অথচ এ এলাকা দোহাজারী পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত।

সরেজমিনে দেখা যায়, কালভার্টটি ভেঙে পড়ে আছে খালের মধ্যে। গ্রামবাসীরা জানান, আট বছর ধরে কালভার্টটি ভাঙাই পড়ে রয়েছে। এলাকার মানুষ সাঁকো বেঁধে চলাচল করছে। ফলে কৃষি পণ্যসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহনে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পরবর্তীতে খালের মাঝখানে বাঁধ দিয়ে কৃত্রিমভাবে সড়ক তৈরি করে যানবাহন চলাচল উপযোগী করা হয়েছে।

এ এলাকায় রয়েছে একটি আদর্শ গ্রাম। এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। সাপছড়া খালের ওপারে রয়েছে অসংখ্য পেয়ারা ও লেবু বাগান। জামিজুরী মুসলিম পাড়া ও হিন্দুপাড়া এবং আদর্শ গ্রাম মিলে প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের বসবাস এখানে। এসব পরিবারের সদস্যদের নির্বিঘ্নে যাতায়াতে বিভাজন সৃষ্টি করেছে সাপছড়া খাল। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের মাঝখানে কালভার্টটি দীর্ঘদিন ভাঙ্গা থাকার ফলে বর্তমানে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

কালভার্ট ভাঙ্গা থাকার কারণে গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা পায়ে হেঁটে পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। গ্রামীণ এই রাস্তা দিয়ে এলাকার শিক্ষার্থী ছাড়াও শত শত কৃষক প্রতিদিন ক্ষেত খামারে যাতায়াত করে থাকেন। এছাড়া পেয়ারা ও লেবু বাগান পরিচর্যাকাজে নিয়োজিত বাগানি এবং শ্রমিকরা নিত্য যাতায়াত করেন।

সড়কটির গুরুত্ব বিবেচনা করে সম্প্রতি দোহাজারী পৌরসভার অধীনে গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়) এর আওতায় ৯৮ লাখ ৩৫ হাজার ৩শ ৭৯ টাকা ব্যয়ে জামিজুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৮শ ৮৫ মিটার অংশ আরসিসি ঢালাই করা হলেও সাপছড়া খালের ওপর কালভার্টটি ভেঙে পড়ে থাকায় ওই সড়কের দুই কিলোমিটার এখন অকেজো হয়ে পড়েছে।

বিগত দুই বছর আগে তৎকালীন পৌর প্রশাসক নাছরীন আক্তারের নির্দেশে ভাঙা কালভার্টটি সরেজমিন পরিদর্শন করেছিলেন সহকারী প্রকৌশলী মো. নাঈম উদ্দিন ও উপসহকারী প্রকৌশলী তিলকানন্দ চাকমা। পাহাড়ি ঢলের তীব্র স্রোত সহনীয় করে নতুনভাবে কালভার্ট নির্মাণ করতে প্রায় কোটি টাকা লাগবে বলে ওই সময় তাঁরা প্রতিবেদন দিয়েছিলেন।

জামিজুরী টু আদর্শগ্রাম সড়কে ভেঙে পড়ে থাকা কালভার্টের স্থলে নতুন একটি কালভার্ট নির্মাণ করে রাস্তাটি সচল করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় সুদৃষ্টি কামনা করছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে দোহাজারী পৌরসভার মেয়র আলহাজ মোহাম্মদ লোকমান হাকিম বলেন, “মেয়র হিসেবে আমি দায়িত্ব নিয়েছি মাত্র ছয় মাস। এই স্বল্প সময়ে পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভাঙাচোরা সড়কগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আরসিসি ঢালাই দ্বারা উন্নয়নকাজ চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। জনদুর্ভোগ লাঘবকল্পে কাউন্সিলরগণকে সাথে নিয়ে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সাপছড়া খালের ওপর কালভার্ট নির্মাণের জন্য শীঘ্রই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

আরও পড়ুন