বরই চাষে সফল বাঁশখালীর তৌহিদ

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় উন্নতজাতের বরই চাষ করে ভাগ্যবদল হয়েছে শীলক‚প ইউনিয়নের প‚র্ব-শীলক‚প গ্রামের শিক্ষিত যুবক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের। তৌহিদুল ইসলাম (২৬) শীলক‚প গ্রামের মোঃ আলমগীরের ছেলে। আট ভাই-বোনের মধ্যে তৌহিদুল ৬ষ্ঠ সন্তান। সর্বপ্রথম ২০২১ সালে নিজস্ব দশ গন্ডা জমিতে শখের বশে বরই লাগালেও এখন তিনি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ শুরু করেছেন। পৈত্রিক জমিসহ চাচাদের থেকে লিজ নেওয়া প্রায় তিন একর জমিতে রোপণ করেছেন ৬ শতাধিক বরই চারা। চাষ শুরুর পর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বাগানের বরইগাছে আশাতীত ফলন হয়েছে। বরই বাগানে ছোট ছোট গাছে বরইয়ে ভরে গেছে। এইচএসসি পাস তৌহিদুলের চাষ করা কাশ্মীরি কুল ও বলসুন্দরী বরই বাগান দেখতে প্রতিনিয়ত লোকজন ভিড় জমাচ্ছেন। বাগান দেখতে এসে অনেকেই দেড়শ টাকা কেজি খুচরা ম‚ল্যে ৪-৫ কেজি ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে খোদ বাগান থেকেই।

তৌহিদুল ইসলাম ২০১৪ সালে বাঁশখালী বঙ্গবন্ধু সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যিক বিভাগে এসএসসি পাশ করেন। ২০১৬ সালে সরকারী আলাওল কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। তিনি বলেন, ‘গত দু’বছর আগে আমি উত্তরবঙ্গে ঘুরতে গিয়ে কুল বরইয়ের বাগান দেখি। তখন থেকে কুল বরই চাষে আমার আগ্রহ বাড়ে। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে বরিশাল থেকে কুল বরই চারা এনে প্রথমে ১০ গন্ডা জমিতে চাষ শুরু করি। ফলন ও লাভ ভালো হওয়ায় বর্তমানে তার তিন একর জমিতে কাশ্মীরি কুল ও বলসুন্দরী জাতের ছয় শতাধিক কুলের চারা বরিশাল থেকে এনে রোপণ করেছি। প্রথমবার ভাল ফলন হয়েছে। এবারও ভালভাবে কুলবরইয়ের ফুল ফুটেছে। গেল বছর ঘ‚র্ণিঝড় হামুনের প্রভাবটিও পড়ে তার বরই বাগানে। তাই বিগত সময়ের চেয়ে এবার ফলন আশাতীত হয়নি বলে জানান তিনি। তিন একর জমিতে তার প্রায় তিনলক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিক্রির আশা করছে তিনি। হামুনের প্রভাব না পড়লে এ বছর ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকার বরই বিক্রির সম্ভাবনা ছিল।

তৌহিদুল জানান, ‘বাগানে কাজ করে খেয়ে-পরে ভালো আছি। সময়ও সুন্দর কাটছে। পাশাপাশি বাড়িতে ছোট একটি গরুর খামারও আছে। আমার ছোট ভাই রেজাউল করিম ড্রাইভিংয়ের পাশাপাশি আমার বাগানে সহযোগীতা করে। বলতে গেলে এদেশে চাকরি সোনার হরিণ। পড়ালেখা করে চাকরির আশা না করে উপজেলার অন্য বেকার যুবকরা এ ধরনের কুল বাগান করে নিজেদের ভাগ্য বদলাবেন এমনটি প্রত্যাশা তৌহিদুলের। বলসুন্দরী, কাশ্মিরী, থাই, নারকেল জাতের কুল ছাড়াও বাগানে সিডলেস কুলসহ আরো বহু প্রকার কুল চাষ করা যায়। এসব বরই খেতে মিষ্টি, সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল হওয়ায় বাজারে চাহিদাও রয়েছে প্রচুর।’ তার এ সাফল্যে ইতোমধ্যেই এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এলাকার অনেক যুবক কুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু সালেক প্রতিবেদককে জানান, পুরো বাঁশখালীতে প্রায় ১২ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের বরই চাষ হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার সাধনপুর, বৈলছড়ী, গন্ডামারা, শীলক‚প, নাপোড়া, সরলে কুলচাষটা লক্ষনীয়। জানুয়ারী থেকে ফেব্রæয়ারীতে কুলের চারা রোপন করতে পারলে এক বছরেই ফল বিক্রি করা যায়। কৃষিতে দিনদিন মানুষের মানসিকতা পরিবর্তন হচ্ছে, এটা ভাল দিক। গতানুগতিক কৃষিকাজ করে লাভ নাই। লাভজনক ও পরিকল্পিত কৃষিকাজ করলে কৃষক লাভবান হয়। কৃষিকে ব্যাবসায়িক চিন্তায় নিলেই লাভবান হওয়া যায়।

তিনি আরো বলেন, এ উপজেলায় কাশ্মীরি কুল বরইসহ বিভিন্ন জাতের বরইয়ের আবাদ হচ্ছে। আকারে বড় ও সুস্বাদু কাশ্মীরি কুলের বেশ চাহিদা রয়েছে। বলসুন্দরী, ভারত সুন্দরী, কাশ্মিরী কুল চাষে লাভ বেশি। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কুল বরইয়ের চারা রোপণ ও চাষের জন্য উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।

আরও পড়ুন