আওয়ামী লীগ বিএনপি’র পাল্টাপাল্টি কর্মসূচীকে ঘিরে উত্তপ্ত মিরসরাই

গেইট ওয়ে অব চিটাগাংখ্যাত মিরসরাইয়ে দেশের প্রধান দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচীকে ঘিরে উত্তপ্ত মিরসরাই। আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির রোড মার্চ পৌঁছবে মিরসরাইয়ে, মিরসরাই সদরে দুপুর ১২ টার সময় অনুষ্ঠিত হবে পথসভা। এছাড়া আগামীকাল শুক্রবার (৬ অক্টোবর) মিরসরাইয়ের বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত বারইয়ারহাট পৌরবাজারে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। সেখানে দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখবেন।

জানা যায়, প্রধান দুই বড় দলের এসব কর্মসূচীকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মিরসরাই। গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিএনপির রোড় মার্চ কর্মসূচী সফল করতে প্রস্তুতি সভা শেষে ফেরার পথে উপজেলার ওচমানপুর ইউনিয়নের আজমপুর বাজারে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে ২৫ জন আহত ও এক কিশোর নিহতের ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনায় জোরারগঞ্জ থানায় বিএনপি সমর্থিত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাসহ পৃথক দুইটি মামলা হয়েছে। যাতে আসামি করা হয়েছে শতাধিক বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীকে। এতে বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের কেন্দ্র ঘোষিত রোড মার্চ কর্মসূচীতে নির্বিঘ্নে সমবেত হতে পারবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। এছাড়া মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন গত ২৬ সেপ্টেম্বর মিরসরাই সদর ইউনিয়নের নুরজাহান কমিউনিটি সেন্টারে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচী শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ সফল করতে তার অনুসারীদেরকে নিয়ে প্রতিনিধি সভার আয়োজন করেন। সেখানে প্রতিপক্ষের হামলায় প্রায় ২৫ জন আহত হয়। গিয়াস উদ্দিন এই হামলার জন্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপির অনুসারীদের দায়ী করছেন। এই ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিনের এক সমর্থক চট্টগ্রাম কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছেন। পৃথক এসব সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তাপ ছড়াচ্ছে মিরসরাইতে, আশঙ্কা করা হচ্ছে সংঘাতের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।

অন্যদিকে পুলিশ বলছে, রোড মার্চ কিংবা সমাবেশ ঘিরে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা সংঘটিত করতে দেওয়া হবে না। দুই দলকে আলাদা দুইটি স্থান চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ বলছে, দলের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য মিরসরাইয়ের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা নিজেদের শান্তি সমাবেশ জাঁকজমকপূর্ণ করতে এবং বিশাল সমাগম ঘটাতে কাজ করছে।

এদিকে বিএনপির রোড মার্চ কর্মসূচি সফল করতে বুধবার বেলা ১২ টার দিকে মিরসরাইয়ের সভাস্থল পরিদর্শন করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা, সাবেক ওমানস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার। সমাবেশস্থলের প্রস্তুতি পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের এই সমাবেশে শুধুমাত্র দলীয় নেতাকর্মী নয়, এখানে সর্বস্তরের জনগণের স্বতস্ফ‚র্ত সমাগম ঘটবে।’

সমাবেশের পুলিশি অনুমতি কিংবা সমাবেশস্থল নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কোন ধরণের বাধাবিঘেœর সম্মুখীন হয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘মিরসরাই সদরের এ স্থান আমরা নিজেরাই পছন্দ করেছি। এ ক্ষেত্রে আমরা কোন ধরণের বাধার সম্মুখীন হইনি।’

বৃহস্পতিবারের সমাবেশ ঘিরে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা কিংবা কোন বাধাবিপত্তির শঙ্কা করছেন কি না জানতে চাইলে গোলাম আকবর খন্দকার বলেন, ‘শঙ্কার কোন অবকাশ নেই। এখানে চারদিক থেকে লোকসমাগম ঘটবে। পথসভা মহাসমাবেশে পরিণত হবে বলে আমার বিশ্বাস।’

এসময় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারের সঙ্গে ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন, সদস্য আবদুল আউয়াল চৌধুরী, মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী, যুগ্ম আহবায়ক নুরুল আবছার, আজিজুর রহমান, চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রদলের সভপতি জাহিদুল আফছার জুয়েল, মিরসরাই পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন, সদস্য সচিব জাহিদ হোসেন প্রমুখ।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি কেন্দ্রীয় কমিটির তরফ থেকে পূর্ব ঘোষিত। সেখানে আওয়ামী লীগ এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীতি তৈরি করতে আগের দিন (বুধবার) একযোগে ১৮ টি ইউনিটে বিক্ষোভ মিছিল দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘দলের রোড মার্চ কর্মসূচির অংশ হিসেবে মিরসরাই সদরে বিএনপি পথসভা করবে। সেখানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভাষণ দেবেন। এই পথসভায় প্রায় ৪০-৫০ হাজার নেতাকর্মীর সমাগম ঘটবে।’

মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, ‘মিরসরাই শান্তির জনপদ। এখানে দলের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নির্দেশে দলের শান্তি সমাবেশ সফল ও জাঁকজমকপূর্ণ করতে এবং বিশাল জনসমাগম ঘটাতে হবে। এই প্রচারের অংশ হিসেবে বুধবার সকাল থেকে ট্রাকযোগে রোড শো এবং সন্ধ্যায় বিএনপি কর্তৃক হামলায় ছাত্রলীগ কর্মী রায়হান হোসেন রুমন নিহতের ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে উপজেলার ১৮ টি ইউনিটে একযোগে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে।’

এদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী ঘিরে তৈরি রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কাজ করছে পুলিশ। এমন দাবী করেন মিরসরাই সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রোড মার্চ কিংবা সমাবেশ ঘিরে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা সংঘটিত করতে দেওয়া হবে না। দুই দলকে আলাদা দুইটি স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যারা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করার চেষ্টা চালাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট আছি।’

মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টায় মিরসরাই সদরে অনুষ্ঠিত পথসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখবেন স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, মোহাম্মদ শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারসহ জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা।

মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গীর ভূইয়া জানান, শুক্রবার দুপুর ২ টায় বারইয়ারহাট হাইওয়ে চত্বরে অনুষ্ঠিত শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেবেন প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফাসহ জেলা ও উপজেলার শীর্ষ নেতারা।

আরও পড়ুন