হৃদয়ের শরীর থেকে মাংস কেটে আলাদা করে আসামিরা

চট্টগ্রামের রাউজানে আলোচিত কলেজছাত্র শিবলী সাদিক হৃদয় (২০) হত্যার ঘটনায় জড়িত আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৭ (র‍্যাব)। রবিবার সকালে র‌্যাব-৭ অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিস্তারিত জানান।

র‌্যাব-৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুব আলম বলেন, ‘হৃদয়কে হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে উচিংথোয়াই মারমাকে শনিবার পতেঙ্গা থানা এলাকা থেকে ও তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ক্যাসাই অং চৌধুরীকে নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

‘খুনের শিকার হৃদয় পড়াশোনার পাশাপাশি তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করার জন্য রাউজানের কদলপুরে একটি পোল্ট্রি খামারে ম্যানেজারের কাজ করতো। একই খামারের ৫-৭ জন সহযোগী কর্মচারীর সঙ্গে তার বিভিন্ন সময় বাগবিতণ্ডা হয়। পরে এ বিষয়ে খামার মালিকরা মীমাংসা করে দিলেও তার সহযোগীদের মধ্যে এক ধরনের অনাস্থা থেকে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য ২৮ আগস্ট রাতে উমংচিং মারমার (গণধোলাইয়ে নিহত হয়) নেতৃত্বে হৃদয়কে অপহরণ করা হয়।পরিদিন তার বাবার কাছে কল করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। একপর্যায়ে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হৃদয়ের অভিভাবকরা রাজি হন। পরে ১ সেপ্টেম্বর তার বাবা ও নানা মুক্তিপণের টাকা নিয়ে বান্দরবানে যান।’

র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘সেখানে মুক্তিপণের দুই লাখ টাকা দেওয়ার পর অপহরণকারীরা জানায়, হৃদয় নিজে নিজে বাসায় চলে যাবে। মুক্তিপণ দেওয়ার পরও ৫-৬ দিনেও হৃদয় আর ফেরত না আসায় তার মা গত ৭ সেপ্টেম্বর রাউজান থানায় ছয় জনকে আসামি করে অপহরণ মামলা করেন। এরপর রাউজান থানা পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুই জনকে গ্রেফতার করে। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। তারা আদালতে উমংচিং মারমার নেতৃত্বে হৃদয়কে অপহরণের পর হত্যা করা হয় বলে জানায়।’

র‌্যাব-৭ অধিনায়ক বলেন, ‘গ্রেফতারকৃত উচিংথোয়াই মারমা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, হৃদয়কে অপহরণের একদিন পর ২৯ আগস্ট বিকালে রঙিন পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে হত্যা করা হয়। উচিংথোয়াই মারমা নিজেই ছুরি দিয়ে হৃদয়ের গলা কাটে। তার সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীসহ আরও চারজন হৃদয়ের হাত-পা এবং মুখ চেপে ধরেন। হত্যায় তিনটি পার্ট ছিল। এরমধ্যে অপহরণ গ্রুপ, কিলিং গ্রুপ ও লাশ গুম গ্রুপ। অপহরণের সঙ্গে জড়িত ছিল শুধু যারা খামারে কাজ করতো। এরমধ্যে উমংচিং মারমা এবং অং থুই মারমা হৃদয়কে অপহরণের পরিকল্পনা করে। উচিংথোয়াই মারমা এবং তার অন্যতম সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীকে বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামে কাজ আছে বলে ডেকে আনে। তাদের দিয়ে হৃদয়কে হত্যা করা হয়। এরপর মাথাসহ শরীর বিচ্ছিন্ন করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘হৃদয়কে হত্যার পর উচিংথোয়াই মারমার মোবাইল থেকে হৃদয়ের বাবা-মাকে ২৯ আগস্ট কল করে মুক্তিপণের টাকা বান্দরবানে নিয়ে আসতে বলে। ১ সেপ্টেম্বর বান্দরবানে গিয়ে হৃদয়ের পরিবার মুক্তিপণের টাকা দিয়ে আসে। এরমধ্যে উচিংথোয়াই মারমা নিজেই দেড় লাখ টাকা রেখে দেয়। বাকিদের ৫০ হাজার টাকা দেন।’

র‌্যাবকে লাশ গুমের বিষয়ে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, পাহাড়ে হৃদয়কে হত্যার পর লাশ প্রথমে কলাপাতা দিয়ে ডেকে দেওয়া হয়। পরে লাশটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন শনাক্ত করতে না পারে এ জন্য টুকরো করা হয় এবং শরীরের মাংস আলাদা করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে সব মিলিয়ে ৯-১০ জন অংশ গ্রহণ করে। এরমধ্যে র‌্যাব দুই জন এবং রাউজান থানা পুলিশ আরও ছয় জনসহ মোট আট জনকে গ্রেফতার করে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান আছে।

জানা যায়, চট্টগ্রামের রাউজান থেকে অপহরণ হওয়া স্কুল শিক্ষার্থী শিবলী সাদিক হৃদয়ের (২০) খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়। অপহরণের ১৩ দিন পর পুলিশ তার খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হৃদয়ের মরদেহ উদ্ধারের পর অভিযুক্ত উমংচিং মারমাকে নিয়ে ফেরার পথে উত্তেজিত জনতার রোষানলে পড়ে। তারা ওই যুবককে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এতে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি। গণপিটুনিতে নিহত উমংসিং মারমা রাঙামাটির বেতবুনিয়া ইউনিয়নের রঙ্গিপাড়া গ্রামের উথোয়াইমং মারমার ছেলে।

আরও পড়ুন