বোয়ালখালীর শীর্ষ সন্ত্রাসী কিরিচ বাবুল গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার কিরিচ বাবুল (৩৮) নামের শীর্ষ সন্ত্রাসীকে চোলাই মদসহ গ্রেপ্তার করেছে বোয়ালখালী থানা পুলিশ। শুক্রবার (১৮ আগস্ট) বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বোয়ালখালী উপজেলার ৫নং সারোয়াতলী ইউনিয়নের পূর্ব খিতাপচর এলাকায় সায়রাপুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে ৫শত লিটার চোলাই মদ উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত বাবুল বোয়ালখালী উপজেলার ৭নং চরণদ্বীপ ইউনিয়নের পূর্ব চরণদ্বীপ মসজিদ ঘাট ইমাম উদ্দিনের বাড়ীর মোজাহের মিয়ার ছেলে।

বোয়ালখালী থানা সূত্রে জানা যায়,গত শুক্রবার(১১ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টার দিকে পূর্ব চরণদ্বীপ মসজিদ ঘাট এলাকার সাঈদ ইসলাম লিটন (২৭) নামের চরণদ্বীপ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকে কুপিয়ে আহত করে বাবুল। এসময় বাবুলের খোঁজে গিয়ে একটি দেশিয় তৈরি এলজি উদ্ধার করেছে বোয়ালখালী থানা পুলিশ। তবে ঘটনার পরপরই বাবুল আত্মগোপনে চলে যায়।

চরণদ্বীপ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ শফিকুর রহমান বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাবুলকে পাওয়া যায়নি। রাত সাড়ে ১২টার দিকে মুজিব নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে বাবুল অবস্থান করার সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় মুজিবের পাকা দোতলা বাড়ির নিচ তলার দ্বিতীয় নম্বর কক্ষের বিছানার বালিশের নিচ থেকে একটি এলজি জব্দ করা হয়েছে। ওই সময় মুজিবের ঘরে তার স্ত্রী ও নাবালক এক ছেলে ছিলো। তবে অস্ত্রটি কার এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। ধারণা করছি মুজিবের সাথে এলাকায় বিরোধ থাকায় তাকে ফাঁসাতে অস্ত্রটি রাখা হয়েছে। অস্ত্রটি জিডি মূলে জব্দ দেখিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।’

এ ঘটনায় শনিবার (১২ আগস্ট) আহত লিটনের ভাই মোহাম্মদ আলম বাদী হয়ে বাবুলসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ও অজ্ঞাত আরও ৪/৫জনকে আসামী করে বোয়ালখালী থানায় মামলা দায়ের করা করে।

স্থানীয়রা বলেন,মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় লিটনের ওপর ক্ষিপ্ত হয় এলাকায় পরিচিত কিরিচ বাবুল লিটনকে কিরিচ দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে বাবুল পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা হামলাকারী বাবুল মুজিবের বাড়িতে অবস্থান করছে জানালে পুলিশ মুজিবের বাড়িতে তল্লাশি করে। এসময় মুজিবের ঘর তল্লাশি কালে একটি দেশিয় তৈরি একটি বন্দুক (এলজি) উদ্ধার করে পুলিশ।

স্থানীয়রা আরো বলেন, একাধিকবার অস্ত্র এবং মাদকসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল সে। তবে আইনের ফাঁক ফোকরে জামিনে বেড়িয়ে আসে বাবুল। ফের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে সে। নিয়ন্ত্রণ করে মাদকের ব্যবসা।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৪ সালে রাঙামাটি জেলার সদর থানায় দায়েরকৃত একটি খুনের মামলার আসামী বাবুল। ২০১৭ সালের (২ অক্টোবর )মসজিদঘাট এলাকায় এক হাতে পিস্তল, অন্য হাতে ধারালো অস্ত্র নিয়ে দিনভর প্রকাশ্যে মহড়া দেয় এবং কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে সে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে পালিয়ে যায়।

২০১৭ সালে অস্ত্র আইনে ১টি মামলা। এ মামলায় পুলিশ ওই বছরের ১০ অক্টোবর বাবুলকে নগরীর ষোলশহর থেকে গ্রেফতার করেছিল। পরে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ও তার স্বীকারোক্তি মতে বাবুলের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় অস্ত্র। এরপর ২০২০ সালের ১১ জুলাই রাতে পুলিশের হাতে ফের আটক হন বাবুল। ওই সময় তার ঘর থেকে দেশীয় তৈরি ১টি বন্দুক,৩ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ধারালো বেশ কয়েকটি অস্ত্র ও ৫৫টি ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে অস্ত্র আইনে ১টি ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে দুইটি মামলা দায়ের করে এবং ২০২৩ সালে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের আরো ১টি মামলা রয়েছে কিরিচ বাবুলের বিরুদ্ধে।

বোয়ালখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আছহাব উদ্দিন বলেন, ছাত্রলীগ নেতা লিটনকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় বাবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় পৃথক একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। আসামিকে শনিবার(১৯আগষ্ট) আদালতে প্রেরণ করা হবে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন