কাতার বিশ্বকাপে যা কিছু নতুন

আগামী ২০ নভেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাতারে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপ ফুটবলের ২২তম আসর। প্রায় ১২ বছর আগে বিশ্বকাপের মতো বৃহৎ আসর আয়োজনের স্বত্ব লাভ করেছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম এবং এশিয়ার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে কাতারে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান যৌথভাবে এশিয়ায় প্রথম এই আয়োজন করেছিল।

শেষবারের মতো ৫টি কনফেডারেশনের ৩২টি দল বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে। ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডার বর্ধিত কলেবরের যৌথ আয়োজনে ৪৮টি দল অংশ নেবে। কাতার বিশ্বকাপ উপভোগ করতে ১.২ মিলিয়নেরও বেশি পর্যটকের সমাগম হবে বলে আয়োজক কমিটি আশা করছে।

কাতার বিশ্বকাপে যা কিছু নতুন ::

অফসাইড টেকনোলজি : সাইডলাইন রেফারির অফসাইড সিদ্ধান্তকে আরও বেশি দ্রুত ও যথার্থ করার লক্ষ্যে এবারই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে সেমি-অটোমেটেড অফসাইড পদ্ধতি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিফা। জুলাইয়ে এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেয় বিশ্ব ফুটবলের এই নিয়ন্ত্রণ সংস্থা।ফিফার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, একজন খেলোয়াড় তখনই অফসাইড পজিশনে থাকবেন যখন তার মাথা, শরীর কিংবা পায়ের যেকোনো অংশ প্রতিপক্ষের হাফওয়ে লাইনে থাকবে এবং একই সঙ্গে মাথা, শরীর ও পায়ের যেকোনো অংশ বল কিংবা দ্বিতীয় কোনো প্রতিপক্ষের তুলনায় গোললাইনের কাছাকাছি থাকবে।
নতুন টেকনোলজিতে বলের মধ্যে সেন্সর ব্যবহৃত হবে এবং খেলোয়াড়দের মুভমেন্ট অনুসরণ করার জন্য লিম্ব-ট্র্যাকিং ক্যামেরা পদ্ধতি ব্যবহৃত হবে। ঘরে থাকা দর্শকের জন্য রেফারির সিদ্ধান্ত ভালোভাবে বুঝতে স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিনে ৩ডি ইমেজের মাধ্যমে ডাটা ব্যবহার করা হবে।

খেলোয়াড় বদলি : চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে তিনজন খেলোয়াড় বদলির নিয়ম থাকলেও তা বেড়ে এবার পাঁচজন করা হয়েছে। ফুটবলের আইন-প্রণয়ন সংস্থা আন্তর্জাতিক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড ২০২০ সালে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সবকিছু বিবেচনা করে পাঁচজন খেলোয়াড় বদলির নিয়ম চালু করে। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন লিগে করোনার কারণে খেলোয়াড় সংকট দেখা দেওয়ায় নতুন ক্লাবগুলোর অনুরোধের প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় আন্তর্জাতিক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড।
বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচ যদি অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় তবে একজন বাড়তি খেলোয়াড় বদলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
গত দুই বছর ধরে স্প্যানিশ লা লিগা, মেজর লিগ সকারসহ বেশ কিছু লিগে পরিবর্তিত এই আইন বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

নভেম্বরে বিশ্বকাপ শুরু হওয়া : জুন-জুলাইয়ের পরিবর্তে এই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ নভেম্বর-ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জুন-জুলাইয়ে মধ্যপ্রাচ্যের প্রচণ্ড গরমের কথা বিবেচনা করে দীর্ঘ আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিফা। জুনে কখনও কখনও মধ্যপ্রাচ্যের কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যায়। নভেম্বর-ডিসেম্বরে কাতারের তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়ার থেকে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

দলের খেলোয়াড় সংখ্যা বৃদ্ধি : রাশিয়া বিশ্বকাপের চেয়ে প্রতিটি দলে এবার তিনজন করে খেলোয়াড় বৃদ্ধি করে সর্বোচ্চ ২৬ জনকে নিয়ে চূড়ান্ত দল ঘোষণা করা হয়েছে। টুর্নামেন্টের স্বাভাবিক সময় পরিবর্তন করে নভেম্বরে বিশ্বকাপ আয়োজন ও করোনা পরিস্থিতি মাথায় রেখে এই প্রতিটি দলকে আরও তিনজন খেলোয়াড় অন্তর্ভুক্তির অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে ফিফা নিশ্চিত করেছে। বিশ্বকাপের প্রাথমিক দলে খেলোয়াড় সংখ্যাও সর্বোচ্চ ৩৫ জন থেকে বাড়িয়ে ৫৫ জন করা হয়েছে।

নারী রেফারি : এই প্রথমবারের মতো পুরুষ বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনা করার দায়িত্ব পেয়েছেন তিনজন নারী রেফারি। কাতারের জন্য ফিফার নির্বাচিত ৩৬ জন রেফারি প্যানেলে তারা সুযোগ পেয়েছেন।
ফ্রান্সের স্টিফেনে ফ্র্যাপার্ট, জাপানের ইওশিমি ইয়ামাশিতা ও রুয়ান্ডার সালিমা মুকানসাঙ্গা এর আগেও পুরুষদের বিভিন্ন টুর্নামেন্টে ম্যাচ পরিচালনা করেছেন, যার মধ্যে অন্যতম হলো উয়েফা সুপার কাপ ও আফ্রিকান নেশন্স কাপ।
এই তিনজন রেফারির সঙ্গে ৬৯ জন সহকারী রেফারির মধ্যেও তিনজন নারী রয়েছেন।

সবচেয়ে ছোট দেশে বিশ্বকাপ আয়োজন : এ পর্যন্ত আয়োজিত বিশ্বকাপগুলোর মধ্যে কাতার সবচেয়ে ছোট দেশ হিসেবে আয়োজক হওয়ার স্বত্ব লাভ করেছে। সাড়ে ১১ হাজার বর্গকিলোমিটারের দেশটিতে মাত্র ২.৯ মিলিয়ন জনগণ বাস করে। বিশ্বকাপের আটটি স্টেডিয়ামই রাজধানী দোহার ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। গ্রুপ পর্বে বেশিরভাগ দিনই চারটি করে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।

টুর্নামেন্টের আবহ বিবেচনা করে টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার পর প্রতিদিনই রাস্তায় যানজটের বিষয়টি এখন কাতারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও বিশ্বকাপ চলাকালীন কাতারের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যানজট এড়াতে গ্রুপ পর্বের ম্যাচ চলাকালীন অফিসের সময়সূচিও কমিয়ে আনা হয়েছে।

আরও পড়ুন