সড়ক ছোট করুন নইলে চলাচল নিষিদ্ধ করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক :: দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পূর্বশর্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা হলেও বাংলাদেশে বিশেষ করে চট্টগ্রামের সড়কগুলো ছোট করা সময়ের বড় দাবীতে পরিণত হয়েছে। সড়কের প্রশস্ততা বাড়োনো হয় যানজট কমানো ও গাড়ী চলাচলের সুবিধার কথা মাথায় রেখে। কিন্তু আমাদের দেশে ঘটছে উল্টো ঘটনা। সড়ক যতই বড় হচ্ছে ততই তা বেদখল হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই সড়ক বড় নয়, প্রয়োজন ছোট করা।
সড়ক বড় হলে কাদের সুবিধা ? ট্রাক কার্ভাডভ্যান ব্যবসায়ী, হকার, স্থানীয় চাঁদাবাজ মাস্তান এবং পুলিশ প্রশাসনের। কিভাবে ! ট্রাক কার্ভাডভ্যান ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করছেন সড়কের উপর। অর্থ্যাৎ গাড়ী রাখার কোন গ্যারেজ নাই। সড়কের উপর রেখেই দিনের পর দিন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সড়ক বড় হলে বেশী জায়গা পাওয়া যায়। তাই যার একটা গাড়ী থাকে সে আরেকটা কিনে ব্যবসাটাকে বাড়ানোর মওকা পেয়ে যায়। হকাররা দখল করে বাজার সওদা বিক্রির সুযোগ পান বেশী। স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা, চাঁদাবাজ এবং পুলিশের হয় পোয়াবারো।
চট্টগ্রাম শহরের যত সড়কই প্রশস্থ হয়েছে সবগুলোই সড়কই ইতোমধ্যে দখল হয়ে গেছে। সড়কের উপর ট্রাক কার্ভাডভ্যান রেখে, বাজার বসিয়ে পুরো সড়কের বেশীরভাগই দখল করে নিচ্ছেন সুবিধাভোগীরা। যাদের সড়ক বেদখলমুক্ত রাখার দায়িত্ব তারা কি করছেন সেটা উপর ওয়ালাই ভাল জানেন। একমাত্র বাংলাদেশেই দেখা যায় সরকারী সম্পদ সড়কে টেক্সী স্ট্যান্ড করে চাঁদা তুলতে। সরকার সড়ক ভাড়া বা লীজ না দিলেও পুরো সড়ক দখল করেই স্ট্যান্ড বানিয়ে পুলিশের সামনেই গাড়ী প্রতি চাঁদা নিচ্ছেন একদল মানুষ। সড়ক ইজরা বা ভাড়া দেয় কিনা সেটা সরকারই ভাল জানেন। যদি ইজারা দেওয়া না হয় তাহলে প্রকাশ্য দিবালোকে স্ট্যান্ড বানিয়ে টাকা তোলা হয় কার জন্য।
চট্টগ্রাম শহরের রাস্তার উপর অবৈধ বাজারের সংখ্যা বর্তমানে ২শতাধিকের চেয়েও বেশী। দিনের পর দিন প্রশাসনের সামনে এসব বাজার কিভাবে চলছে তা জানার অধিকার মনে হয় দেশবাসীর নেই। নতুবা এসব বাজার চালু থাকে কিভাবে !
সড়ক যত ছোট হবে ততই অসুবিধা হবে দখলকারীদের। তাই দেশবাসীর প্রশ্ন দখলকারীদের সুবিধার জন্যই কি সড়ক বড় করা হয় !
সড়ক দখল রোধ করা বা দখলমুক্ত করা না গেলে বিকল্প হিসেবে দেশবাসী সড়ক ছোট করার পরামর্শই দিচ্ছেন। এতে করে অন্তত দেশের অর্থের অপচয় রোধ করা যাবে বলে নাগরিকদের অভিমত। শুধু শুধু সড়ক বড় করে অন্যের অবৈধ ব্যবসা প্রসারের দায় নিবে কেন রাস্ট্র!!!
আগ্রাবাদ বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে সোজা পূর্ব দিকে মাদারবাড়ীর দিকে এবং রশিদ বিল্ডিং হয়ে মাঝিরঘাটের দিকে যে সড়ক চলে গেছে সেটাই ডিটি রোড নামে পরিচিত। এই সড়কের উভয় পাশে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানের দীর্ঘ সারি দেখলে মনে হয় সড়ক নয় যেন, পার্কিং স্পেস। উভয় পাশে গাড়ী রাখার পর আইল্যান্ড এবং ট্রাক রাখার পর যেটুকুন জায়গা থাকে তাতে কোনমতে হেঁটে চলাফেরা করা যায়। তাও আরেকটি বাহন যেমন ট্রাক,কার্ভার্ডভ্যান,বাস, কার,মাইক্রো কিংবা রিকশা গেলে চলাচলরত জনসাধারনের সাইড নেওয়ারও জায়গা থাকেনা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তখন আইল্যান্ডেই দাঁড়িয়ে যেতে হয়।
পার্কিং এর পর জনসাধারণের চলাচলের কোন জায়গা থাকে না। সামনে কোন রিকশা থাকলে পিছন থেকে কোন ইঞ্জিন যান আসলে তখন রিকশাটি বায়ে চাপানোর কোন স্পেস থাকেনা। রিকশাটাকে অতিক্রম করে যখন বাস টেম্পু কার যেতে পারেনা তখন অগত্যা যানজটের কবলে পড়তে হয় এলাকাবাসীকে। সামনে কোন খালি জায়গায় সাইট করার পর পিছনের আটকে যাওয়া যানের গতি হয়। নিত্য যানজটে অভ্যস্থ এই এলাকার মানুষের যেন গা সওয়া হয়ে গেছে।
বিপদের আশঙ্কা প্রতিমুর্হুতে তাড়া করছে এই সড়কে চলাচলরত মহিলা, শিশুসহ সর্বস্থরের নাগরিককে। যেহারে ট্রাক-কার্ভাডভ্যানের দখলে চলে গেছে সড়ক সেখানে পুরোপুরি তাদের জন্য সংরক্ষিত ঘোষণা করে সাধারণনের চলাচল নিষিদ্ধ করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। যদি তা-ই না হবে তবে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের উচিত হবে এটা পরিষ্কার করা যে, এখানে পার্কিং হবে না চলাচলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে সড়ক ?!
একটু ফাঁকা জায়গা হলেই ঢুকে যাচ্ছে ট্রাক-লরি। যেন এটা তাদের জন্য নির্ধারিত স্থান। সড়ক যতই বড় হোক সুফল জনগন পাচ্ছে না। লাভ ঘুরে ফিরে ট্রাক-লরি মালিকের। যার গাড়ী একটা আছে জায়গা পেলে তিনি আরেকটা কিনেন এটাই রীতিতে পরিণত হয়েছে। জনগনের চলাচলের যেহেতু কোন জায়গা থাকেনা, সেহেতু এটা চলাচলের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা সময়ের দাবী।
যেটুকু খালি জায়গা থাকে তাতে একটা লোক হাঁটতে গেলে পিছন থেকে দ্রুতগামী গাড়ী এসে কখন যে জীবন সাবাড় করে দিবে এই ভয়েই কাটে প্রতি মুহুর্ত। সড়ক কারা কিভাবে দখলে নিচ্ছে তা সকলেই জানেন। যাদের দায়িত্ব সড়ক চলাচল উপযোগী রাখা তারাই উদ্ধুদ্ধ করছে দখলদারদের।
সমস্যা সমাধানের উপায় একটা-ই নিষিদ্ধ হোক চলাচল, রিজার্ভ থাক পার্কিং স্পেস।

আরও পড়ুন