বাংলাদেশকে বাঁচাতে নদী বাঁচানোর বিকল্প নেই : আনোয়ার হোসেন

ইকবাল কবির, ব্যুরো চীফ (ঢাকা) :: আন্তর্জাতিক নদী বাঁচাও দিবসে সিটিজি সংবাদ.কম এর সাথে কথা বলেছেন বাংলাদেশে এ আন্দোলনের অগ্রপথিক সংগঠক, বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মোঃ আনোয়ার হোসেন। তাঁর সাথে আলাপচারিতায় উঠে এসেছে বাংলাদেশে নদী বাঁচাও আন্দোলনের যাত্রা, স্বতন্ত্র নদী আইন এবং নদী আদালত গঠনের নানাবিধ অনুষঙ্গের কথা। সিটিজি সংবাদ.কম এর ঢাকা ব্যুরো চীফ ইকবাল কবিরের সাথে আলাপচারিতার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।
সিটিজি সংবাদ : কত সাল থেকে আপনি নদী বাঁচাও আন্দোলন শুরু করেন?
আনোয়ার হোসেন : ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশের নদ-নদী বাঁচানোর আন্দোলন শুরু করি।প্রথম অবস্হায় তেমন সারা না পেলে আস্তে আস্তে পরিবেশবাদী সংগঠন গুলোও এই আন্দোলনে শরিক হতে শুরু করে এবং আমরা এতে ব্যাপক সারা পাই।
সিটিজি সংবাদ : নদী বাঁচাও আন্দোলনে আপনাদের সফলতা কত টুকু?
আনোয়ার হোসেন : আমাদের একশত ভাগ সফলতা এখনো অর্জিত না হলেও আমরা মাননীয় হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে আমাদের সংগঠন প্রতিষ্ঠা এবং আন্দোলনের সফলতা অর্জিত হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি।
সিটিজি সংবাদ : একটু বলবেন কি?
আনোয়ার হোসেন : আমরা ২০০৫ সালে বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করে চার বছর পরই ২০০৯ সালে তুরাগ নদ রক্ষা চেয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা একটি রট করে। ওই রিটের প্রেক্ষিতে মাননীয় হাইকোর্ট ঢাকার চার পাশের নদীগুলো রক্ষা করতে একটি ঐতিহাসিক রায় দেন এবং  জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন গঠিত হয়।যদিও নদী রক্ষা কমিশন উপদেশ নির্দেশনা দেয়া ছাড়া আর তাদের ক্ষমতা নেই আদালতের রায় অনুযায়ী আমরা চাই দেশের সব নদ-নদীর কর্তৃত্ব নদী কমিশনের অধীনেই থাকতে হবে।আমরা এই রায় বাস্তবায়নের জন্য সারা দেশে নদী বাঁচাও আন্দোলনে সাধারন জনগনকে সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হই।৫৪ টি জেলায় বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের সংগঠন প্রতিষ্ঠা করি।
সিটিজি সংবাদ : এর পর?
আনোয়ার হোসেন : ২০১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর তুরাগ নদের তীরে ৭১ কিলোমিটার দীর্ঘ মানববন্ধন করি এবং ২০১৬ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি  চিলাই নদীর তীরে ২৩ কিলোমিটার, ২০১৭ সালের, ৩রা মার্চ ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ২৮ কিলোমিটার মানববন্ধন করি।এছাড়া  একই বছর ১২,১৩এব১৪  অক্টোবর তিন দিন বুড়িগঙ্গায় অবস্হান কর্মসূচি পালন করি।২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সারা দেশে একযোগে নদী বাঁচাতে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করি।
সিটিজি সংবাদ : নদী বাঁচাও আন্দোলন এর বর্তমান প্রেক্ষাপট জানতে চাই ।
আনোয়ার হোসেন : গত ৩০ জানুয়ারী এবং ৩ ফেব্রুয়ারি মহামান্য হাইকোর্টের রায়ে তুরাগ নদ কে জীবন সত্তা হিসেবে রায় দিয়েছে।সে সঙ্গে ঢাকার চার পাশের সকল নদী অবৈধ দখল মুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে।এ রায় যুগান্তকারী এবং ঐতিহাসিক। এ রায়ের মাধ্যমে শুধু তুরাগই নয় আমরা মনে করি নদীকে জীবন সত্তা হিসেবে সারা বাংলাদেশের সকল নদ-নদীকেই বুঝানো হয়েছে।এ রায়ের পর হতেই সরকার নদী অবৈধ দখল মুক্ত করতে কাজ শুরু করে দিয়েছে।
নদীকে জীবন সত্তা হিসেবে ঘোষনা এবং উল্লেখযোগ্য নির্দেশনা গুলো হচ্ছে,সারা দেশের নদ- নদীর অবৈধ দখলদারদের তালিকা প্রকাশ করে তা প্রকাশ করা,দখলদারদের ব্যাংকলোন পাওয়ার ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীতার হওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচনা করা,নদী দখলকে অপরাধ হিসেবে গন্য করে সাজা ও জরিমানা ব্যবস্হা করা,নদ-নদীর পাশে কোন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে নদী রক্ষা কমিশন থেকে অনাপত্তিপত্র নিতে হবে,স্পারসো স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সকল নদ-নদীর ভৌগোলিক অবস্হান নির্ণয় করা, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিটি শ্রেনীতে প্রতি দুই মাসে এক ঘন্টার জন্য নদ-নদী বিষয়ক পাঠদানের ব্যবস্হা করা এবং ছোট বড় সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের অংশগ্রহণে দুই মাসে অন্ততপক্ষে একঘন্টার নদী বিষয়ক বৈঠক করার নির্দেশনা রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
সিটিজি সংবাদ : নদী বাঁচাও আন্দোলনের অর্জন বা সার্থকতা, পরবর্তী লক্ষ্য সর্ম্পকে বিস্তারিত বলেন ।
আনোয়ার হোসেন : আমি মনে করি জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনাই কেবল পারবেন হাইকোর্টের রায় ও পর্যবেক্ষণ পূর্নাঙ্গ ভাবে বাস্তবায়ন করতে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে ঢাকার চারপাশে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদ-নদী থেকে অবৈধ দখল মুক্ত করতে কাজ শুরু করেছেন।প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন নদী ধ্বংস করে উন্নয়ন সম্ভব নয়।নদী দখল মুক্ত রাখতে তীরের পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণ সহ না পরিকল্পনার  হাতে নিয়েছে সরকার।কিন্তু আমরা যদি স্হায়ীভাবে দখল মুক্ত রাখতে না পারি এবং  স্বতন্ত্র নদী আইনও নদী আদালত গঠন করা না হলে আদালতের আদেশ যেমন বাস্তবায়ন হবে না তেমনি নদীর দখলদারিত্ব বন্ধ করা যাবে না।তাই আমরা মনে করি মহামান্য হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে আমাদের নদী বাঁচাও আন্দোলনের যে সফলতা এসেছে তা একমাত্র জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাই পারবেন  আগামী প্রজন্মকে একটি নদীমাতৃক বাংলাদেশের ঐতিহ্য ধরে রেখে পরিবেশ রক্ষায় স্মরনীয় করে রাখতে ।আর এই কাজটি যদি এখনই করা না হয় তবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম কে আমাদের ব্যর্থতার দায় নিতে হবে। তিনি বলেন,স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পর যদি মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার বাংলার মাটিতে হতে পারে তবে বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলায় নদী হত্যাকারীদের বিচারও হবে বলে দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি।
সিটিজি সংবাদ : আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য।
আনোয়ার হোসেন : আপনাদেরকেও ধন্যবাদ অতীব জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভূমিকা পালনের জন্য।

আরও পড়ুন