নারীর অর্থলোভে প্রাণ গেলো যুবকের

এক নারীর অসদাচণের প্রতিবাদের জেরে মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলার আসামী হওয়ার অপমান সহ্য করতে না পেরে চট্টগ্রাম নগরীর পোর্ট কলোনী এলাকায় নিজ গৃহে ফ্যানের সাথে ঝুলে মোঃ ইমন (২৩) নামের এক যুবক আত্মহত্যা করেছেন। বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ইমন পেশায় একজন গ্যারেজ মিস্ত্রি এবং ব্যক্তি জীবনে সে বিবাহিত। তার সহধর্মিনী বর্তমানে খুলনা বাপের বাড়ীতে অবস্থান করছেন। নিহত ইমন ওই এলাকার রাজমিস্ত্রী মোহাম্মদ ইউসুফ ও ঝর্ণা বেগম দম্পতির ছেলে।

ঘটনার সূত্রে জানা গেছে, গত চার ডিসেম্বর ওই এলাকার বাসিন্দা সোমা ও সোহেল দম্পতির ৬ বছরের শিশু সন্তান সিয়াম ম্যাচের কাঠি নিয়ে খেলা করার সময় ইমন তাকে বিপদজনক খেলা থেকে বিরত থাকতে বলেন। পরে ওই ছেলেটির মা এসে ইমনের সাথে ঝগড়া শুরু করেন তার ছেলেকে মেরেছে বলে। একপর্যায়ে সোমা নামের ওই মহিলা ইমনের কলার চেপে ধরে মারধর করেন। প্রতিবেশিদের হস্তক্ষেপে ঘটনা ওখানে শেষ হলেও পরবর্তীতে ওই নারী আদালতে ইমন ও তার ৩ বন্ধুর নামে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন। এরপর মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে ইমনের কাছে। সবশেষ ৪০হাজার টাকা দিলে মামলা তুলে নেয়ার কথা বললেও সালিশি বৈঠকে তাতে রাজি হয়নি ইমন। কারণ ইমনের দাবি ছিলো সে নিদোর্ষ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ইমনের একার সাথে ঝগড়া হলেও তার ৩বন্ধুকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলায় জড়িয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছেন ওই নারী। সুমা এবং স্বামী সোহেল কিছু অসাধু দালাল চক্রের সাথে সংযুক্ত হয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মোটা অংকের টাকা আদায় করে আসছেন বলে এলাকার অনেকের দাবি। প্রায় সময় মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ছেলেদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অপকৌশল ওই নারী সবসময় নিয়ে থাকেন বলেই অভিযোগ পাওয়া গেছে। মামলায় যে তিন বন্ধুকে আসামী করা হয়েছে ঘটনার দিন ওদের একজন ট্রেনিংয়ে ছিলো এবং বাকী দুজন এলাকায়ও ছিলেন না। প্রতিবেশি এক নারী বলেন, সোমা নিজে ইমনকে মেরে ওল্টো মামলা দিয়েছে। ঘটনাস্থলে অন্য কোন পুরুষও ছিলো না। এই ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার রাতে পোর্ট কানেকটিং রোড অবরোধ করেন স্থানীয়রা।

ইমন নিহতের ঘটনায় এলাকাবাসীর সড়ক অবরোধ

 

নিহত ইমনের মা ঝর্ণা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলে নিদোর্ষ। ইমন বারবার দাবি করেছে সে ঘটনার সাথে জড়িত নয়। তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। পরে অপমান সইতে না পেরে আমার ছেলে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। শুধুমাত্র টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে ওই নারী এ পথ বেছে নিয়েছিলো। প্রথমে দেড়লাখ টাকা এবং পরে ৪০হাজার টাকাতেও সে মিমাংসা করতে চেয়েছে। কিন্তু ইমন নির্দোষ বিধায় সে কোনো টাকা দিতে রাজি ছিলো না। আমি ওই নারী এবং তার চক্রের অন্য সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

নিহত ইমনের বাবা ইউসুফ বলেন, আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে আমি সোমা এবং তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

এদিকে অভিযুক্ত সোমার বক্তব্য জানার জন্য তার বাসায় গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি। সে ঘটনার দিন রাতেই সরে পড়েন। তার কোনো মোবাইল নাম্বার প্রতিবেশিদের কাছে না থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনার ব্যাপারে তিনি অবগত আছেন এবং এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। অন্য কোনো কিছু পাওয়া গেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।

আরও পড়ুন