যে যার মতো দখলে নিয়েছে লা-ওয়ারিশ চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়াম

দৈনিক আজাদীর সৌজন্যে ডেস্ক নিউজ :: চট্টগ্রাম শুধু নয়, বাংলাদেশের খেলাধুলায় গৌরবোজ্জ্বল এক ইতিহাসের নাম আউটার স্টেডিয়াম। কারণ এই মাঠ থেকে কারা উঠে এসেছে কিংবা এই মাঠে কী হতো সেটা বোধহয় নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু সে আউটার স্টেডিয়াম এখন যেন জঞ্জালে পরিণত হয়েছে।

কখনো মেলা, কখনো গাড়ি রাখার নিরাপদ স্থান, কখনো ডেকোরেশন কোম্পানির বাঁশ কিংবা সামগ্রী রাখার জায়গা আউটার স্টেডিয়াম। যে যেভাবে পারছে সেভাবেই যেন ব্যবহার করছে এটিকে। এ দৃশ্য গত দুই দশকেরও বেশি সময়ের। মাঝখানে খোরশেদ আলম সুজন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক থাকাকালে কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলে কিছুটা পরিচ্ছন্ন ছিল আউটার স্টেডিয়াম। কিন্তু এখন আবার সেই আগের অবস্থায় ফিরে গিয়েছে এটি। অথচ এই আউটার স্টেডিয়ামকে ঘিরে কতবার কত পরিকল্পনাই করা হয়েছে। কিন্তু কোনো পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি। ওয়াকওয়ে হবে, গ্যালারি হবে, সবুজ চত্বর হবে। শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। বরং যেটুকু শোভা বর্ধনের চেষ্টা করা হয়েছিল সেসব জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। চারদিকে আবার নানা অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। আউটার স্টেডিয়ামের একপাশে করা হয়েছে মুক্ত মঞ্চ। কিন্তু এই মঞ্চ মুক্তই রয়ে গেছে। নির্মাণ হওয়ার পর থেকে এই মুক্ত মঞ্চে হয়নি কোনো অনুষ্ঠান। সেটি এখন ময়লার ফেলার উন্মুক্ত জায়গা এবং বখাটেদের আড্ডার জায়গায় পরিণত হয়েছে। আউটার স্টেডিয়াম যে এক সময় খেলাধুলার জন্য ব্যবহার হতো সেটাও যেন ভুলে গেছে চট্টগ্রামের মানুষ।

এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের পূর্ব গ্যালারির দ্বিতলকরণে এবং সুইমিং পুল নির্মাণে আউটার স্টেডিয়ামের বিশাল অংশ চলে গেছে। বাকি যেটুকু আছে সেটাও আর এখন ব্যহারের উপযোগী নেই। মাঠের নানা জায়গায় বিভিন্ন ক্রিকেট একাডেমি সিমেন্টের পিচ বানিয়ে ক্রিকেট প্রশিক্ষণের জন্য নেট বানিয়ে রেখেছে। যার যেভাবে ইচ্ছা ঠিক সেভাবে। কিন্তু কাউকে কিছু বলার যেন কেউ নেই।

গতকাল দেখা গেল আউটার স্টেডিয়ামের পূর্ব পাশে বিশাল একটা অংশ জুড়ে ফেলে রাখা আছে ডেকোরেশন কোম্পানির বাঁশ। নির্বিঘ্নে সারি সারি করে পার্ক করা আছে ট্রাক। কিন্তু এসব কার জিনিস কে রাখল আর কীভাবেইবা রাখল তার কোনো সদুত্তর মেলেনি কারো কাছে। কিন্তু যে যার যার মত ব্যবহার করছে যখন যার যেভাবে প্রয়োজন হচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন, যেহেতু দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে আউটার স্টেডিয়ামের মালিকানা চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সেহেতু তারা এখন তদন্তে নামবেন। চারপাশের স্থাপনাগুলো কারা করল কীভাবে করল তা তদন্ত করে দেখা হবে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা আউটার স্টেডিয়ামের চারপাশে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করেনি। অফিসিয়ালি সে ধরনের কোনো নথিপত্র নেই। তাহলে কারা করল এই সব স্থাপনা সে তদন্তে নামবে জেলা ক্রীড়া সংস্থা। যদি স্থাপনা ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে সদুত্তর পাওয়া না যায় কিংবা বৈধ কোনো কাগজপত্র না থাকে তাহলে আইন এবং বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অতি দ্রুত এ ব্যাপারে নোটিশ জারি করা হবে। যাতে যারা এসব অবৈধ দখলদার রয়েছে তারা যেন নিজেদের স্থাপনা সরিয়ে নেয়।

২০২০ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং এম এ হোসাইন বাদল নামের একজনের প্রতিষ্ঠানের চুক্তির মাধ্যমে তার অর্থায়নে আউটার স্টেডিয়ামের চারপাশে শোভাবর্ধন করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সিটি মেয়র বললেন, আউটার স্টেডিয়ামে তাদের কিছু নেই। ওখানে যা আছে সব জেলা ক্রীড়া সংস্থার। কাজেই আউটার স্টেডিয়ামে সিটি কর্পোরেশনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

এম হোসাইন বাদল জানান, তিনি নিজ অর্থায়নে এই শোভা বর্ধনের কাজটা করেছেন। দোকানসমূহেও তার মালিকানা রয়েছে। তবে সেখানে যেসব বিজ্ঞাপন লাগানোর পরিকল্পনা ছিল সে সব বিজ্ঞাপন থেকে ট্যাঙ পাওয়ার কথা সিটি কর্পোরেশনের। যদিও এখনো সেখানে কোনো বিজ্ঞাপন লাগানো হয়নি। তিনি সিটি কর্পোরেশনকে ভাড়া দেওয়ার কথা বললেও কয়টা দোকানের ভাড়া দেন কিংবা কাকে এই ভাড়া দেন সে বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। কয়টা দোকান এখন তার মালিকানায় রয়েছে সেটাও জানাতে অস্বীকার করেন। এক পর্যায়ে পরে কথা বলবেন বলে টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন বাদল।

এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা বলছে তারা ভাড়া পান না। সিটি কর্পোরেশন বলছে তারা কিছু জানে না। তাদের সেখানে কিছু নেই। তাহলে কে জানে? আর কেইবা এইসব স্থাপনার মালিক? কে নিচ্ছে ভাড়া? সে সব তদন্তের দরকার বলে মনে করছেন ক্রীড়াঙ্গন সংশ্লিষ্টরা।

আউটার স্টেডিয়ামের উত্তর পাশে সার্কিট হাউজের সামনে লম্বা করে তৈরি করা ভাসমান দোকানগুলো কারা বসিয়েছে বা কারা এর ভাড়া নেয় সে বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারেনি। অথচ দিব্যি চলে যাচ্ছে ব্যবসা। আর এভাবে দূষণে এবং দখলদারিত্বে আউটার স্টেডিয়াম এখন পরিণত হয়েছে জঞ্জালে।

আরও পড়ুন