গানে প্রাণে মিলেছে চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ফোরাম

আড্ডা, গান, হাসি ঠাট্টা, রসিকতা আর প্রাণের সম্মিলনে মন উজাড় করা গান নাচে চট্টগ্রামে কর্মরত পেশাদার গণমাধ্যম কর্মীরা নিজেদের মধ্যে অন্তঃযোগাযোগের অপূর্ব পেয়েছে চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ফোরামের বার্ষিক বনভোজন ও মিলনমেলায়। সারাবছর দৌড়ের ওপর থাকা গণমাধ্যমকর্মীদেরকে বছর শেষে এমন আনন্দঘন নিরেট একটি দিনের মজাদার স্মৃতির টুকরো নিয়ে নীড়ে ফিরতে দেখা গেছে। একই পেশার এতগুলো মানুষের একসাথে হওয়ার উপলক্ষ এনে দেয়া চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ফোরাম নেতৃবৃন্দকে তাই তৃপ্তি নিয়েই বলতে শোনা গেছে, “ এরকম জমকালো আয়োজন অব্যাহত থাকবে।“ আরও বড় পরিসরে সপরিবারে দুই বা ততোধিক দিনব্যাপী আয়োজনের প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেছেন সংগঠনের দায়িত্বশীলরা।

ফুল দিয়ে বরণ আর সকালের নাস্তায় সাজপিঠার সাথে বাহারী মুড়ির মোয়া ছিল অনবদ্য। গরম গরম চা’য়ে চুমুক দিতে দিতে সহকর্মীরা একে অপরের সাথে আলাপন সেরেছে, সেরেছে নিজেদের নানা মান অভিমানের কথামালাও। বহুদিন পর কারো কারো সাক্ষাতেরও সুযোগ করে দিয়েছে বর্ণিল এ আয়োজন। ব্যস্ত নাগরিক জীবনে ফোনে আলাপন চললেও দেখা সাক্ষাত আড্ডার এমন মাহেন্দ্রক্ষণ তেমন একটা পাওয়া যায় না। তাইতো প্রাণ খুলে ছড়িয়েছে কথামালা, ঝরেছে আবেগ-বিশ্বাস ভালবাসার মোহময় গল্প।

২০২৩ সালের শেষ দিন রবিবার চট্টগ্রাম নগরীর সাগরিকা এলাকায় নিরিবিলি ফার্মসে ফোরামের ৮২ জন রিপোর্টার এ আনন্দ আয়োজনে অংশ নেন। ফোরামের সভাপতি কাজী আবুল মনসুরের নেতৃত্বে ফোরামের এ সম্মিলনীটি ছিল একটি ব্যাতিক্রমধর্মী আয়োজন। বাঙ্গালী ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে মাটির বাসনে খাওয়াসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও ছিল চট্টগ্রামের নানা ঐতিহ্য। দিনভর এ আয়োজনে ‘টিআইবি পুরস্কার’ পাবার জন্য একুশে পত্রিকার সাংবাদিক ফোরাম সদস্য শরীফুল ইসলাম রুকনকে দেয়া হয়েছে বিশেষ সম্মাননা।

অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় ফোরাম সভাপতি ও প্রতিদিনের সংবাদের ডেপুটি এডিটর কাজী আবুল মনসুর, সহ সভাপতি সি-প্লাসের সম্পাদক আলমগীর অপু, সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক আমাদের নতুন সময়ের বিশেষ প্রতিনিধি আলিউর রহমান, সহ-সম্পাদক গোলাম মাওলা মুরাদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এটিএন নিউজের মনিরুল পারভেজ, ক্রীড়া সম্পাদক সাইফুল্লাহ চৌধুরী, সমাজসেবা সম্পাদক ও বনভোজন কমিটির আহবায়ক বাংলা টিভির ব্যুরো প্রধান লোকমান চৌধুরী, প্রেস ক্লাবের নির্বাহী সদস্য ও ফোরামের কোষাধ্যক্ষ আইয়ুব আলী, ফোরামের নির্বাহী সদস্য মোহনা টিভির ব্যুরো প্রধান আলী আহমেদ শাহিন, সিনিয়র সাংবাদিক জুবায়ের সিদ্দিকী, বনভোজন কমিটির সদস্য সচিব কামাল পারভেজ, রেজিস্ট্রেশন কমিটির আহবায়ক নুর মোহাম্মদ রানা, অভ্যর্থনা কমিটির আহবায়ক নুর উদ্দিন সাগর , সদস্য রাজিব চক্রবর্তি, মুকুল মাহি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সভাপতি কাজী আবুল মনসুর তারঁ বক্তৃতায় বলেন, অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ফোরাম এ পর্যায়ে এসেছে। শুরুতে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও ধীরে ধীরে চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ফোরামের কলেবর বাড়ছে। প্রতি বছর আনন্দ আয়োজন থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকরা সারা বছর ব্যস্ত থাকেন। বছরের একটা দিন ফোরামের সদস্যরা এভাবে আনন্দে মেতে উঠবে। তিনি বলেন, রিপোর্টারদের পেশাগত উন্নয়নের লক্ষে ফোরাম সাংবোদিকদের কর্মশালাসহ নানা আয়োজন করে যাবে। একই সাথে চট্টগ্রামের ভাষা ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে কাজ করে যাবে। বর্তমানে বিশ্বে ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিকতা বাড়ছে উল্লেখ করে সভাপতি বলেন, এখন ডিজিটাল প্লাটফর্মের যুগ। বিশ্বে সাংবাদিকতার ওপর বড় বড় অনেক পুরস্কার ফ্রী-ল্যান্স সাংবাদিকরা পান। সাংবাদিকতার গন্ডী এখন অনেক বৃহত্তর পরিসরে ছড়িয়ে গেছে। এটি এখন আর প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তিনি সাংবাদিকদের লেখালেখির উপর আরো জোর দিতে বলেন।

মাটির শানকি (বাসনে) দুপুরের খাবার, বয়স ছাপিয়ে তরুণ যোবাদের মতো গানের তালে তালে গতিময় নাচ যেমন ছিলো উপভোগ্য,তেমন ছিলো দর্শনীয়। এদিন যেনো সবাই হারিয়ে গেছে কৈশোর, তারুণ্যে। সারাবছর গম্ভীর ব্যস্ত বাগিশ গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রাণোচ্ছল অংশগ্রহণে মিলন মেলাটি রূপ নিয়েছিলো প্রাণের মেলবন্ধনে। খাবার নাচ গানে সীমাবদ্ধ থাকেনি চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ফোরামের বর্ণিল এ আয়োজন। অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক সদস্যের জন্য ছিলো আকর্ষনীয় উপহার। স্মৃতিময় এমন অনিন্দ্য সুন্দর আয়োজন, গণমাধ্যমকর্মীদের হৃদয়ে তাজা থাকবে বহুযুগ, বহুকাল।

আরও পড়ুন