গণমাধ্যমে সংস্কার কতদূর

পাঁচ আগষ্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাবেক স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার প্রায় দুই মাস হতে চললো। এর মধ্যে আটক গ্রেফতার হয়েছে শাকিল- ফারজানা রুপা দম্পতি। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে তাদের বিস্তর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়, যা হাজার কোটি টাকার মতো। এরপর মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্তকে গ্রেফতার করা হলে তাদেরও প্রচুর সম্পদের তথ্য সংবাদপত্রে আসে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা ৫০ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে প্রেসক্লাব ও তাদের নিজকর্মস্থলে কাজ থেকে বিরত রাখার আহবান জানিয়েছিল। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে ১০/১২ জন ছাড়া বাকী সবাই নিজ নিজ কর্মস্থলে দাপটের সাথেই কাজ করছেন। এরমধ্য শাকিল -রুপা দম্পতিকে একাত্তর টিভি বাদ দিয়েছে। প্রভাস আমিন নিজ থেকেই এটিএন নিউজ থেকে সরে গেছেন। নাগরিক টিভির হেড অব নিউজ দীপ আজাদকে সেখান থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ডিবিসি নিউজের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সিইও মনজুরুল ইসলাম, সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু ও সিএনই প্রণব সাহার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হলেও সম্প্রতি সিআরআই আওয়ামীলীগের গবেষণা সেল থেকে মাসিক মাসোয়ারা নেয়ার তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়ে যাওয়ায় পিন্টু ও মাসুদ কার্জনকে সেখান থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। আর নারী ঘটিত অসদাচরণের অভিযোগে বাদ দেয়া হয় প্রণব সাহাকে।

সম্প্রতি প্রায় দুই মাস পর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক টেবিলে জামায়াত নেতাদের সাথে এক টেবিলে ইকবাল সোবহান চৌধুরী, মনজুরুল আহসান বুলবুল, ওমর ফারুক, আবুল কালাম আজাদকে এক টেবিলে আলাপরত অবস্থায় দেখা যায়, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। এনআরবিসি ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান ডিবিসির সিইও মনজুরুল ইসলামের চারজনের খাবার বিল বাবদ কয়েক লাখ টাকা বিল হওয়ার রিপোর্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়, এন আর বিসি ব্যাংক থেকে তার নামে ২৫ কোটি টাকার লোন নেয়া আছে, চারটি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়েও ডিবিসির মনজুরুল এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। অফিসে নিয়মিত না এলেও বাসায় বা অজ্ঞাত স্থান থেকেই চালান তার কার্যক্রম। ডিবিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল আহসানের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। মূলত চ্যানেলের বড় অংশের শেয়ার তার হলেও চ্যানেল পরিচালনায় মনজুরুল ও ইকবল সোবহানের কথার বাইরে যান না তিনি। বৈশাখী টিভিতে অশোক চৌধুরী ও সাইফুল এখনো বহাল তবিয়তে। হত্যা মামলার আসামী হলেও এটাকে মোটেই আমলে নিচ্ছেন না তারা। সময় টিভির এমডি আহমেদ জোবায়েরকে এমডি পদ থেকে সরিয়ে শম্পা রহমান নতুন এমডি হয়েছেন। বেশ কিছু বিতর্কিত সাংবাদিক সেখানে সরকারবিরোধী তৎপরতায় জড়িত। সাংবাদিক নজরুল কবীর ও সুভাস সিংহের বিরুদ্ধে গণহত্যায় সুস্পষ্ট উস্কানিদাতা হিসেবে অভিযোগ ও হত্যামামলা হলেও তারা এখন টকশোতে এসেছেন। সরকার সমালোচনার কথা বললে তারা টিভিতে ড. মুহাম্মদ ইউনুস সম্পর্কে অত্যন্ত আপত্তিকর মন্তব্য করে যা সাংবাদিকতার রীতিবিরুদ্ধ। একুশে টিভির মালিকানায় ফিরে এসেছেন সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম। বার্তা বিভাগে কিছু সংস্কার করেছেন তিনি। এটিএন বাংলা কতৃপক্ষ জই মামুনকে অব্যাহতি দেয়ার দুঘন্টার মধ্যে তা প্রত্যাহার করে নেয়। গাজী টিভি, এনটিভি, বাংলাভিশন, এখন টিভি, এগুলো অপরিবর্তিত রয়েছে। গণমাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গণহত্যায় অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা উচিত।গণহত্যায় উস্কানির অভিযোগে এসব চাটুকার সাংবাদিকদের গণমাধ্যমের বাইরে রাখা উচিত। কেউ কিছু বলছেনা বলে মনে করা উচিত নয় যে কেউ কিছু দেখছেনা। অভিযুক্তদের অভিযোগ মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত পেশার বাইরে রাখার কথাও বলেছেন গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন